হাত-বদলের হাসি আমাকে আশ্বস্ত করে নৌকা খুলে রাখে। এবার পতন হবে: যেমন দক্ষিণা দেবে এই পরপারে মন্ত্রোচ্চারণে কাঠের তৃষ্ণা তেমনই উজ্জ্বল হবে অমাবস্যা ঢালা হবে শ্বেতকরবীতে তুমি কি মাধবী ছিলে? জলতলে অনাগত নিমগ্ন সূর্যাস্ত? পাতাবাহারের রাতে কোমল কড়ির খেলা এমন উদিত হবে শ্রীপুষ্পসঙ্কটে না জানি আকর্ষ তার কার কাছে ভেসে ভেসে যাবে খুঁটে বাঁধা অভিকর্ষ--এমন আরতি...
আকাশ থেকে অশ্রু ঝরে কার? লুকিয়ে কেন মেঘের বাড়ি থাকো? এ ভরা বাদর বিরহের কারবার বুকের ভিতর কার ছবি তুমি আঁকো? চিরদিন কানু মন্দিরে মোর বনমালী তুমি ভাগ্যে নেই এ শহর মেঘে ঘনঘটা ঘোর বৃষ্টি মানে বুঝি তোমাকেই যতটুকু আজ দিয়েছি ক্ষত অশ্রুতে সব রেখেছি মেপে নব জলধর বিজুরি যত ফিরে দেখি অতি সংক্ষেপে এ বরষায় তুমি একাই নাব্য রাধিকার চোখে মনখারাপ শুনো...
স্বপ্ন যদি তর্ক করে আমি তার দু'ঠোঁটে আঙুল না রেখে বুঝিয়ে দেব বাস্তবের সবক'টা ভুল; কিন্ত ভুল ঠিক করব না। বালির ভিতরে থাকা সোনা গয়না হয়ে যদি ফিরে আসে ছোট বউ গায়ে দিয়ে, আবারও পালিয়ে যাবে সরল বিশ্বাসে... কবিতা তো জটিল বিষয় অনেকের হয় না কিন্তু কারও কারও হয়। যার হয়, তার হাতে থালা দিয়ে বাড়ো মাছ-ভাত; যার হয়...
হঠাৎ কোনো তপ্ত গ্রীষ্মদিন, বৃষ্টি এলো শহরতলীর পাড়ায় দু-চোখ জুড়ে অতীত কিছু ঋণ— ঝাপসা স্মৃতি প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় বিষাদ বুঝি জলের ছদ্মবেশে আঁধার হয়ে রাখছে লিখে নাম হঠাৎ যদি সন্ধ্যা এলো ভেসে নিম্নচাপের মেঘে ছুটির খাম দু-খানি ট্রেন ছুটবে দুইটি দিকে বাজলো বাঁশি, বিসর্জনের ডাক, কক্ষপথে চিহ্নটুকু রেখে একলা মেয়ে একলা পড়ে থাক...
একটা সাদা-কালো ছবিতে আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি রক্তকরবী! যদিও আমার কল্পনা কোনো অবয়বে ধরতে পারেনি সে ফুল! রঙ দিতে পেরেছে কেবল...লাল, খুব গাঢ় সমস্ত ছবিটায় ওই রঙটুুকু জানান দিয়ে বলবে ঠোঁটে অমন করে লিপস্টিক আঁকার কারণ শরীর থেকে শুকিয়ে যাবার আগে হেমন্তের শিশির ওষ্ঠে ধারণ করো... একটা কোনো ধ্রুব ইশারা তো চাই তারই জন্য এমন রক্তকরবী। তুমি নেবে? কবিরা শুনেছি ফেরায়...
বিকেলবেলার হাওয়া এসে বলে গেল প্রশ্রয় পেতে পেতেই কেউ উদ্ধত হয়, তোমার কাছে আরেকটু উদ্ধত হতে চাইলাম, সত্যযুগের এডিটর কুমুদ দাশগুপ্তর কথা লিখলাম ৭১-এর কলকাতায় গড়ের মাঠে সরোজ দত্তকে নামিয়ে দিলেন অফিসার রুনু নিয়োগী, তারপর একটা গুলি...... প্রাতঃভ্রমণে এসে কেঁপে উঠলেন মহানায়ক।   আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ২৪মিলিমিটার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ফোকাল লেন্স ক্যামেরায় কানু সান্যালের ছবি তুলেছিলেন যে চিত্রগ্রাহক,...
ট্রেন যত এগোচ্ছিল গধনি পেরিয়ে ততই কমছিল মানুষের তাড়া, ট্রেনে ওঠা-নামার, দৌড়ে জায়গা ধরার.... জানালার ধারের সিট , তাতেও গা নেই । কানিমহুলি স্টেশন থেকে উঠল ,একই মন্ত্র জানা অনেক সোদর ; নামবে গালুডিতে, হেঁটে যাবে স্বর্ণরেখার তীর ধরে । সুবর্ণরেখাকে ওরা স্বর্ণরেখা বলে । ফেরার সময় ছোটো লাল লাল শোলবাচ্চার পুরো চাকটাকে জল থেকে পিঠে তুলে...
এমন কোনও বৃষ্টি নেই এমন কোনও দৃষ্টি নেই মেঘলা নেই যাতে এমন কোনও ক্রান্তি নেই এমন কোনও ভ্রান্তি নেই ছায়ার চেয়ে গাঢ় এমন কোনও আগল নেই এমন কোনও বাকল নেই বনস্পতি মায়া এমন কোনও প্রান্ত নেই এমন কোনও শ্রান্ত নেই বিরহ যার আয়ু এমন কোনও শব্দ নেই কাল কিংবা অব্দ নেই নিরপেক্ষ, সাদা এমন কোনও পাত্র নেই এমন দিবা রাত্র নেই জলের দরে বুক এমন কোনও ভূমিও...
দ্যূতসভাস্থল মধ্যে পৌঁছলেন অনিন্দিতরুচি। বয়োবৃদ্ধ, জ্ঞানবৃদ্ধ প্রত্যেকের চোখে চোখ রেখে নিক্ষেপিত হল তার প্রশ্নবাণ-- যিনি নিজে পরাজিত, তার অধিকার ছিল অন্যকে পণ রাখা? এর উত্তর কী, সে তো সকলের জ্ঞাত; ফলাফল সুদূরপ্রসারী; সে কথা বুঝতে এই সভাস্থলে জ্ঞানী-অজ্ঞানী-- অসুবিধা ছিল না কারোরই। তবু সেই নিয়তিতে পাঞ্জাছাপ দিলেন সকলে। আরও এক দ্যূতক্রীড়া শুরু হয়ে গেছে। নীতি-নির্ধারক যারা, আত্মবিক্রয় করে পণ...
এই দেখ মেয়ে, সামনে দেখ তাকিয়ে -- কি হ'লো, মিললো কথা ? এবার বল তবে বুকে হাত রেখে সত্যি কথা কবিতার সব কথা মিলে গেলো তো ! প্রথমটায় শুধুই করেছিলি অবিশ্বাস আর আমি, বলেছিলাম তো -- জাদু আছে জাদু, দেখিয়ে ছাড়বো দেখ তাকিয়ে, দরজা খুলে গেলো তো -- নে মেয়ে উঁকি দিয়ে দেখ ভিতরে কী সুন্দর ঘরটা দেখ, কতো...
জিরাফের পায়ে জল দিতে দিতে গলা লক লক করে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ভাবে, এই তার দেশ ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ... আমার পায়ের নীচে পাথরের জমি আমার জমির পাশে হাড় কঙ্কাল জিরাফ দেখেছে তাকে! সে কি আজ ভুলে গেছে মায়াময় নদী ভুলে গেছে ধ্যান রত সাধুর আদেশ! ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ...
এবারের দশমীতে সমস্ত দম্ভ বিসর্জন দিয়েছি নাওভাঙার জলে এবছর বৃষ্টি হয়নি, জল কম নদীতে দেখি আবার সব জীবন্ত হয়ে উঠে আসছে আমার শরীরে ক্রমশ বুক ফুলছে, চোখ দু'টো হয়ে আসছে লাল আমি আবার বিদ্রোহের কবিতা লিখব আগামীকাল সবাই বলছে প্রেমের কথা, চাঁদের গায়ে জ্যোৎস্না কিন্তু হাওয়া অফিস বলছে মেঘের খবর নেই বৃষ্টি অধরা... বৃষ্টি অধরা... ভরদুপুরে বীজতলা থেকে কৃষক দম্পতির...
ওরা জন্ম নেয় মৃত্যুর তাগিদে, সাঁতার শেখেনি বলে জলকে দূর থেকে দেখে বুকের বোতাম যদি ভুলে যায় পোশাকের প্রয়োজন আমরা কী ওদের হব না কোনদিন ? বালিশের গভীরতর তুলো‌ বাঁচতে চায় না যেমন চাকা ঘুরছে বাম থেকে ডানে, আমি ঘুরছি মাথার ভিতরে অন্ধকার পুষে আলোর থেকে দূরে... মহড়ায় সাতদিন গিয়েছি । দু'হাতের মুঠিতে এনেছি ছাই ভস্ম পরিমাণ মতো, লাট্টুর...
উত্তর কলকাতার এক নিষিদ্ধ পল্লীর প্রায়ান্ধকার ঘরে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় খুঁজে পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালি'র ইন্দির ঠাকরুণকে   এ যেন এক আবিষ্কার কবি রিলকে ও ভাস্কর রদাঁর কিংবা বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের প্রথম সাক্ষাতের মতো।   গাল তুবড়ে গেছে, শরীর ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ আশি বছরের বৃদ্ধা চুনিবালা নিঃশব্দে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন জীর্ণ ঘরের এক কোণে— বলার মতো ঘটনা চলচ্চিত্রে-মঞ্চে...
অনেক অশান্ত নদী পেরিয়ে এসেছে নিস্তব্ধতা অনেক ঘুমহীন রাত পেরিয়ে আসে জানলা পৃথিবীর মতো সুখী হতে চাওয়া চাতক দম্পতি চঞ্চুতে চঞ্চু ঠেকায়, তবু রাত আনচান ঘুমের রক্তাক্ত স্বপ্নেরা একমুঠো বুকেতে হানে আগুন অভয় দেয় পৃথিবী তবু চিলেকোঠা ছেড়ে মাটি খুঁজি, অর্থভেদ করি, তাড়াও খাই ঘুমহীন রাতে কিন্তু বিশ্বাস করার মতো কোনো অমৃতের ডাল ছিলনা কখনো। তাই দুহাত...
না - ই বা থাকলো শরীর,আমার ভাবনাছবি ইতস্তত                          রইলো পড়ে ঝর্ণা,নদী,গ্রামের স্নিগ্ধ দীঘির মতন ঢেউ তো ছিলোই লোকায়ত,অদৃশ্য,ভূমধ্যসাগর                                    ভ্রু - সন্ধিতে...
শবের পাশে সবই কেমন অর্থহীন! শেয়ার বাজার, নিউজ পেপার,সেফটিপিন... শবের পাশে সবই ভীষণ অর্থহীন। ভাতের হাঁড়ি,মাসকাবারি,মুড়ির টিন, ফার্নিশ ফ্ল্যাট,দক্ষিণে রোদ, ফলস সিলিং পিএনপিসি, ই জেড সি সি,ব্যস্ত দিন... সেলেব রোয়াব,ফ্যান ফলোয়ারস,লেগ পুলিং... শবের পাশে সবই বড়ো অর্থহীন। প্রত্যাখ্যান,প্রতিশ্রুতি অন্তহীন... উড়োচিঠি,মন্দ কথা, ফোনের রিং... যুদ্ধবিমান,শান্তির গান, বা পুতিন... শবের পাশে সবই ভীষণ অর্থহীন। ঘুমিয়ে থাকা একখানা মুখ কী কঠিন! এক পৃথিবী হিসেব-নিকেশ অর্থহীন... শবের...
অযথা পায়ের তলে মাটি সরে সরে গেছে প্রতিদিন, হৃদয়ের দেনা-পাওনাতে, আমিও রাখিনি কোনো ঋণ। দু'হাতেই বিলিয়েছি সব - যা কিছু অজড়, অব্যয়, বেদনার দাগ মুছে গেলে, নিষ্কাম পরে থাকে ক্ষয়। চিরাগের আলো খুঁজে খুঁজে প্রহরা রেখেছি প্রতিবার, আঁধার নামার পর বুঝি, ততোধিক দামি সংহার। স্মৃতিরা যেটুকু রেখে যায়, তারও বেশি যদি অভিমানী, নিয়ত অমোঘ সংশয়ে, আমাকেই শুধু আমি জানি।
নির্জন জন্মভিটেয় কে বাজায় বাঁশি! পাখি ডাকে, মামি ডাকে আমার জীবন ডাক উপেক্ষা করেনি। পুবের তেঁতুল গাছ ডাকে, বলে, 'শোনো, পোড়ো রান্নাঘরে চন্দ্র ভেদ করে।' চাঁদের কিনারা ঘেঁষে নেমে আসে কবুতর, হোগলা বনে জোঁক। ফ্যানা ভাত ডাকে কেন? বহুদিন খাওয়া হয়নি। শীত এসে গেল ব্যর্থ হব কি এবারও! জন্ম ভিটে ডেকে চলে কেউ নেই বুঝি। মাটি কি নরম হল? সে কৃষ্ণমৃত্তিকা রক্ত মেখে প্রতীক্ষায়। তাকে আনো, তুলে...
বিসর্জনের পর বিষাদের সাথে মদ খেতে যাই                                                                                     ...