১ আনারকলিকে ঘিরে গাথা হচ্ছে পাথর সেলিমের কথা বলতে গিয়ে বারবার ধরে আসছে বাবার গলা আর ঘুমের মধ্যে তলানি হয়ে যেতে যেতে বাদশাহের নির্দেশ মিশে গেল লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ডে ২ ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে একে একে নেমে যাচ্ছে বিষণ্ণ জোকারেরা শীতে শাস্তি পাওয়া ছেলেদের কথা ভেবে আর ফিরবে না তারা শুধু মরচে পড়বে উৎসব ৩ শেষপর্যন্ত দ্বিচারিতাই থেকে যায় বিশেষত এই পাখির উড়ে যাওয়া সূর্যাস্তের...
দেবীপক্ষ, মায়ের বোধন--- তারপর, সবাই বলল দেবী বিসর্জন--- এ তো বড় পুণ্যের! আসলে, লোকনিন্দা-সামাজিকতা হল মুখ্য- গল্পের আড়ালে রয়েছে সাজানো গল্প--- সর্বংসহা দেবী সাজানোর! পান থেকে চুন খসলো বাজলো উলু ধ্বনি, শাখ আর বিসর্জনের বাদ্যি মুহূর্ত অপেক্ষা, সব শান্ত সব শব্দ পরিণত হল শবে নীরব দর্শক দেখল--- আহা! আহা! বলে দেবীর পুণ্য বিসর্জনে দিল হাত তালি তারপর ফিরে গেল যে যার...
তৃতীয় রঙের মতো শিশু বেড়ালেরা ঢুকে পড়েছিল বলে তুমিও ছায়ার উল্টো দিকে বসে প্রত্যাশিত জমির দখলে নেমে পড়তে গিয়ে দেখো গোল গোল থাবা ঢুকে গেল কোলে কাঁখে এবং বেরালে নিয়ে সেই সব শিকারীর স্তনযন্ত্রণাকে যাতনা মানে তো মুখে অচেনা স্বাদের আনাগোনা চলে আর শ্রাবণ মাসের মধ্যে রেখে আসা ছোট ছোট পাগল পাহাড় পাহাড়ের ফুল দোলে,...
শরতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই কাগজে কাগজে তার চিহ্ন ফুটে ওঠে এ'দুয়ের মাঝে কোন মিল আছে বুঝি! হয়তবা আছে, ভোরের শিউলি ফোটে মায়ের প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে দীপাবলি পর্যন্ত ছবি তৈরি হয়ে যায় কাগজপত্রে, পুজো সংখ্যা কত কত কবিতার ঝুরি, শব্দের বন্যা বয়ে যায়, কে পড়ে? কারা? নাকি পড়ে থাকে টেবিলে? আমিত্বের বিজ্ঞাপন সংখ্যা গুনে নেয় কটা হল! কেউ কাউকে কি মনে...
আলোর মতো রাত্রি নামে, উপচে পড়ে ঘর, স্বপ্ন জুড়ে জাগল কি মর্মর? চাঁদের মতো হাঁড়ির ভিতর গান ধরেছেন তাপ, খিদের ছায়া মারল এসে ঝাঁপ। ঝাঁপ দিয়েছে হাজারো চোখ, ঝাঁপ দিয়েছে দেশ, এক হাঁড়িতেই মস্তানি সব শেষ। যুদ্ধ কেবল অন্ধকারের, যুদ্ধ কেবল নিজের। যত হারজিত খিদের রক্তবীজে। আলোর মতো রাত্রি নামে - পরনে রাজবেশ হাঁড়ির ভেতর, জলের ভেতর ফুটছে...
আকাশ সংযত হয়ে নেমে এলো ছাদে অপার মহিমা দেখি ছড়িয়ে রয়েছে মহিমা শব্দের যত আলো তাও এসে এখানে ছড়ালো... শুধু ভাবি— জীবন কি ভরা শুধু বিষে সামনের ভেজা কার্নিশে কনুই নামিয়ে রেখে দূরান্তরে তাকিয়ে থাকার পর ভাবি এখানে বাবার পাশে মা-ও যেন আছে আকাশ রয়েছে তার কাছে৷
ছোটনাগপুর থেকে পথ ফিরে এলে সমতলে সমবেগে যেতে যেতে মায়া ধাক্কা দেয় উঁচু আর নিচু লাগোয়া লাগোয়া ছোটাছুটি মন নেমে আসে মন উঠে যায় হুটোপুটি সার ধীরে ধীরে গতি কমে শিথিলতা আসে চোখেমুখে চড়া রোদ, খুব শীত এইসব শীর্ষে যাওয়ার মতন উত্তেজনা থাকে না কোথাও নদী খাল ঝরনার স্ফূলিঙ্গ গায়ে এসে লাগে হাত-পা-শরীর কেঁপে ওঠে আচমকাই মনে পড়ে...
প্রথম দিনেই কি প্রেমে পড়া যায়? আমি তো পড়িনি। মনে পড়ে সেই অগোছালো দিন টা ভর বিকেলে বটের তলায় দাঁড়িয়ে তুমি, আমার অপেক্ষায় বিমগ্ন। প্রথম দেখার এক অস্থিরতা দুজনাতেই। সামনে এলে কি বলবো তা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা, সকাল থেকেই। ভাবনা প্রসূত কিছুই ঘটেনি সেদিন । কোনরকম ইস্ত্রি হীন চুড়িদারটা পড়েছি বিহ্বলতার কবলে পড়ে রাস্তার পাথরে হোঁচট খাওয়া— জুতোটাও গেল...
একহাতে রেখেছি অপেক্ষা অন্য হাতে সময় হাত দু'টো ছড়িয়ে রাখি... মাঝখান দিয়ে ঝুঁকে পড়ে রোদ ঝরে বৃষ্টি কখনও কখনও ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে ঢেকে দেয় জ্যোৎস্না। মাঝখানের এই শূন্যতায় অনিবার্য কল্পনা লুকিয়ে রাখি। বেনিয়ম সারসের ডাক, গলা থেকে চুঁয়ে মিশে যায় ঝরা ফসলের দানায় দানায়। দ্রুতগামী ট্রেন প্ল্যাটফর্ম পার করে মাঝরাতে। পরিকল্পনাহীন চাওয়া আর অপর্যাপ্ত পাওয়ায় কোনও ঋতু পরিবর্তন...
তখনও তো ওরা কেউ শরীর বোঝেনি প্রেমের গন্ধ ছিল টিউশন জুড়ে এলোমেলো চুল তাতে লাল নীল গার্ডার সপ্তাহে তিনদিন মন ফুরফুরে। ওরা কেউ চেনে না কি, আদরের মায়া শুধু বোঝে কালো শার্ট, নীল চুড়িদারে একটুও হাত যদি লেগে যায় হাতে দিনটা দিব্যি কাটে নচিকেতা সুরে। এইভাবে ফেলে এসে সময়ের ক্ষত হঠাৎ বজ্রপাত, গড়িয়ার মোড়ে অটোর লাইনে জ্যাম, মেঘ করে...
আমাদের হাঁটা-চলায় দোষ অনেক হুজুরের করণকক্ষের ভেতরে ঢুকে চোখে চোখ রেখে সরাসরি তাকিয়ে বলি : ‘আমি কী আসতে পারি স্যার’ ? তকতকে পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এমনি এমনি হোঁচট খেয়ে পড়ি হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগি দু’চারদিন। আমাদের দেখা-শোনাতেও দোষ অনেক যেটা দেখি সেটা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে মেলে না যেটা শুনি সেটাও ‘কোট আনকোট’ জিভ থেকে সরে না। অদৃশ্য কেউ...
আমেরিকা সাত, ইউরোপ পাঁচ, রাশিয়া সাকুল্যে চার দিন জীবনের বাকি দিনগুলো আমি চেয়েছিলাম তোমাকে দিতে ফোড়নের মতো দপ করে জ্বলে উঠে তুমি, কয় মন অসন্তোষ ঢেলে দিলে... অথচ আমাকে ধরে রাখতে চেয়েছে, সমুদ্দুর সামুদ্রিক ফ্যানা, সে-ই আরব্যরজনী, এক একলা আকাশ চীনের প্রাচীর আজও দেখো রয়েছে একই কত পর্যটক প্রতিদিন আসে যায়! ব্যবধান গড়েছে সময় শীতের শহরে, বস্তা, আরাম যখন রূপকথা...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন -- তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি! আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি দেবীগন্ধ ছেড়ে...
তোমায় দিলাম পদ্মনাভ ভোরের আকুল-বিকুল শিউলি ফুলের ঝরা, তোমায় দিলাম অন্তরঙ্গ ঘোরের রক্ষাকবচ। পাখির রাতচরা দেখাক তোমায় তাদের বুকের ক্ষত গোলাপকাঁটায়,যে যন্ত্রণায় গানের গভীরতায় অরণ্যময় যত বৃষ্টি ঝরায় ছন্ন অভিমানে। তোমায় দিলাম মন খারাপের গলি, বিকেল বেলার মেঘলা প্রতিশ্রুতি, যখন তোমায় মনের কথা বলি বোঝো আমার সমগ্র বিচ্যুতি? ঢের দিয়েছ এতেই বোঝাই খাতা স্বভূমি আজ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা তবুও ডাকো অবাধ্য কলকাতা! হৃদয় যখন...
রাধার ছিল শতেক ঘোড়া, জিনপরানো একলাপথে হাঁটছে তবু, রাজকুমারি পথ পাথরে বেবাক তাকে ভুলিয়ে দিল তারও আছে চকমেলানো রাজার বাড়ি। কৃষ্ণকিশোর মাঠ চিনেছে ঘাট চেনেনি! যে ঘাট বেয়ে নামছে সিঁড়ি রূপসায়রে কে দিল তার বাঁশির বাতাস, চুম্বনে স্বাদ কেউ কি জানে? রঙ-বেরঙে কুৎসা ওড়ে আজকে যখন কৃষ্ণরাজের কলটি নড়ে, মিথ্যে তাকে 'ধর্ম' নামে উঠছে ডেকে! বাঁশির ফুঁয়ে দেশপ্রেমের ওড়ায়...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...
নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও এখনো ভিড়ের মাঝে ? কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে? গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে নীরবে নিভৃতে করা যায়। সেইক্ষণে মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে। ফিরে এসো জনসভা থেকে ফিরে এসো ভিড় থেকে বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি এখনো ভিড়ের মাঝে...
ভেবেছিলে ওই পারে শালবন আছে? দীর্ঘ আর ঋজু। তারা কথা বলবে চোখে চোখ রেখে ওই দিকে সুশীতল হাওয়া বয়, নক্ষত্রের ভিড় তোমার নিষ্পত্র শিরে আঁকা হবে জ্যোতির-বলয়? এপার মলিন বড়। আলোহীন রোগা ভালবাসা মাঝারি মাপের, তাই মিহি অজুহাতে ছিঁড়ে ফেলে স্নেহ-রজ্জু, গা থেকে খসিয়ে ফেলে প্রত্নপরিচয় হেঁটে যাচ্ছ ওই পারে, যাও... ওপারে এখন একা, দীর্ঘতর ছায়া পড়ে...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল। বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো। জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...
চারিদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার আলগোছে উড়ে চলেছে মেঘ ভেঙে পড়েছে ধৈর্য্যের সীমানা দুই দেশের মাঠের ওপর ভরা পূর্ণিমা। এখানে রাত জেগে থাকে দিনের আলোর মত অন্ধকার ঘুরে বেড়ায় গুটি পায় আলো এক হানাদারীর নাম গোপনে ধ্বংস করে আবেগের গোপনীয়তা। তোমার পরিশ্রম ধোয়া শীতল জলে একফোঁটা নোনতা স্বাদ লেগেছিল সন্ধ্যা নামার আগে পাখিরা ফেরার আগে ভাবে মাটির ভেতর থেকে জলের ভেতর থেকে সবটুকু সুখ ছেঁচে নিয়ে...