অন্ধকার ছুঁয়ে ছুঁয়ে মনে মনে বারবার গঙ্গায় গিয়েছি...
ভোরবেলা অশ্রুটুকু তর্পণের ফুল
অচেনা আলোর মুখ জেগে ওঠে আকাশ গঙ্গায়
দেবী জাগে, মা প্রসীদ, ঝাঁকড়া এলোচুল
দশমহাবিদ্যা জাগে, নিধনপ্রহর শেষে
মাতৃরূপ জাগে!
নতুন আকাশ জাগে, হে শরৎ,
জেগে ওঠে পুলক ও প্রতিমা!
অন্ধকার ধুয়ে মুছে আলো আসে কল্পপারাবারে—
আলোর সমষ্টি থেকে
অশ্রুর অভূতপূর্ব সুর জাগে শ্রবণের পারে!
অতিব্যক্তিগত সেই সুর!
এই যে নিশঃব্দের ঘরে অজ্ঞাতবাস আমার
একথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বাহির
আমার অন্তরের থেকে অনেক দূরে বসবাস করে।
তুমি আমার বাইরের মানুষটাকে ভালোবাসলে,
আমার অন্তরকে খুঁজে দেখলে না।
একটাই ক্ষীণ দুয়ার দিয়ে হাওয়া চলাচল করে,
একটাই দুয়ার ফিরে আসার, তুমি হাওয়ার কাছে
নিজেকে প্রশ্ন করো,
কেন অক্ষরের বিষ আমি পান করেছি।
কেনই বা আলেয়া ও অতি আলোর...
বুকের ভেতর জাহাজ ডুবেছে যত
নীরবতা নিয়ে মরে গেছি বহুবার,
আমার চোখেতে নালিশ ছিল না কোনো
হেরে যাওয়াটুকু মৃত্যুরই দাবিদার।
প্রশ্নতে ছিল অনেক চিহ্ন আঁকা
ঘেমেছে চশমা কমেছে জলের দাম,
চিরকুটে লেখা লোডশেডিং এর বুলি
প্রেম ভালোবাসা ভাঙনেরই সৎ নাম,
তাসের ভাগ্যে জোকার এসেছে হাতে
জবাব ছিল না, হাসিতেই জাদুঘর
কলব্রে-র থেকে নেমে আসে কোনো গাধা
পিঠে বাঁধা ছিল আপোসকালীন...
গায়ে মাটি বনের মধ্যে বুড়ো শরৎকাল
চারপাশে তার উড়ে বসল পাখির চতুষ্পাঠী
মহালয়ার গল্প শোনো এইখানে কৈলাস
রাত্রি-ভোরে উঠেছে সব বয়স্ক গাছেরা
তাই দেখে আজ জলের ধারা প্রথমে ডাকেনি
অথচ চাঁদ ফাটল যখন মেহগনির শাখে
জ্বরে কাঁপছে সবেমাত্র সন্তানসম্ভবা
রিকশাচালক রহিমচাচার স্কুল-পড়ুয়া মেয়ে
পাড়ায় হাসছে, বাড়ির লোকেও মেনে নেয়নি, তাই
আত্মহত্যা করতে এলো নদীর নীচু বাঁকে?
দৌড়ে গেল কাঠবিড়ালি...
১
আনারকলিকে ঘিরে গাথা হচ্ছে পাথর
সেলিমের কথা বলতে গিয়ে বারবার
ধরে আসছে বাবার গলা আর ঘুমের মধ্যে
তলানি হয়ে যেতে যেতে বাদশাহের নির্দেশ
মিশে গেল লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ডে
২
ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে একে একে নেমে যাচ্ছে
বিষণ্ণ জোকারেরা
শীতে শাস্তি পাওয়া ছেলেদের কথা ভেবে
আর ফিরবে না তারা
শুধু মরচে পড়বে উৎসব
৩
শেষপর্যন্ত দ্বিচারিতাই থেকে যায়
বিশেষত এই পাখির উড়ে যাওয়া
সূর্যাস্তের...
দেবীপক্ষ, মায়ের বোধন---
তারপর,
সবাই বলল দেবী বিসর্জন--- এ তো বড় পুণ্যের!
আসলে,
লোকনিন্দা-সামাজিকতা হল মুখ্য-
গল্পের আড়ালে রয়েছে সাজানো গল্প--- সর্বংসহা দেবী সাজানোর!
পান থেকে চুন খসলো
বাজলো উলু ধ্বনি, শাখ আর বিসর্জনের বাদ্যি
মুহূর্ত অপেক্ষা, সব শান্ত
সব শব্দ পরিণত হল শবে
নীরব দর্শক দেখল--- আহা! আহা! বলে দেবীর পুণ্য বিসর্জনে দিল হাত তালি
তারপর ফিরে গেল যে যার...
তৃতীয় রঙের মতো শিশু বেড়ালেরা ঢুকে পড়েছিল বলে
তুমিও ছায়ার উল্টো দিকে বসে প্রত্যাশিত জমির দখলে
নেমে পড়তে গিয়ে দেখো গোল গোল থাবা ঢুকে গেল কোলে কাঁখে
এবং বেরালে নিয়ে সেই সব শিকারীর স্তনযন্ত্রণাকে
যাতনা মানে তো মুখে অচেনা স্বাদের আনাগোনা চলে আর
শ্রাবণ মাসের মধ্যে রেখে আসা ছোট ছোট পাগল পাহাড়
পাহাড়ের ফুল দোলে,...
শরতের হাওয়া বইতে শুরু করলেই
কাগজে কাগজে তার চিহ্ন ফুটে ওঠে
এ'দুয়ের মাঝে কোন মিল আছে বুঝি!
হয়তবা আছে,
ভোরের শিউলি ফোটে
মায়ের প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে
দীপাবলি পর্যন্ত ছবি তৈরি হয়ে যায়
কাগজপত্রে,
পুজো সংখ্যা কত কত
কবিতার ঝুরি, শব্দের বন্যা বয়ে যায়,
কে পড়ে? কারা?
নাকি পড়ে থাকে টেবিলে?
আমিত্বের বিজ্ঞাপন সংখ্যা গুনে নেয়
কটা হল!
কেউ কাউকে কি মনে...
আলোর মতো রাত্রি নামে, উপচে পড়ে ঘর,
স্বপ্ন জুড়ে জাগল কি মর্মর?
চাঁদের মতো হাঁড়ির ভিতর গান ধরেছেন তাপ,
খিদের ছায়া মারল এসে ঝাঁপ।
ঝাঁপ দিয়েছে হাজারো চোখ, ঝাঁপ দিয়েছে দেশ,
এক হাঁড়িতেই মস্তানি সব শেষ।
যুদ্ধ কেবল অন্ধকারের, যুদ্ধ কেবল নিজের।
যত হারজিত খিদের রক্তবীজে।
আলোর মতো রাত্রি নামে - পরনে রাজবেশ
হাঁড়ির ভেতর, জলের ভেতর ফুটছে...
আকাশ সংযত হয়ে নেমে এলো ছাদে
অপার মহিমা দেখি ছড়িয়ে রয়েছে
মহিমা শব্দের যত আলো
তাও এসে এখানে ছড়ালো...
শুধু ভাবি— জীবন কি ভরা শুধু বিষে
সামনের ভেজা কার্নিশে কনুই নামিয়ে রেখে
দূরান্তরে তাকিয়ে থাকার পর ভাবি
এখানে বাবার পাশে মা-ও যেন আছে
আকাশ রয়েছে তার কাছে৷
ছোটনাগপুর থেকে পথ ফিরে এলে
সমতলে সমবেগে যেতে যেতে মায়া ধাক্কা দেয়
উঁচু আর নিচু লাগোয়া লাগোয়া ছোটাছুটি
মন নেমে আসে মন উঠে যায় হুটোপুটি সার
ধীরে ধীরে গতি কমে শিথিলতা আসে চোখেমুখে
চড়া রোদ, খুব শীত এইসব শীর্ষে যাওয়ার মতন উত্তেজনা থাকে না কোথাও
নদী খাল ঝরনার স্ফূলিঙ্গ গায়ে এসে লাগে
হাত-পা-শরীর কেঁপে ওঠে আচমকাই
মনে পড়ে...
প্রথম দিনেই কি প্রেমে পড়া যায়?
আমি তো পড়িনি।
মনে পড়ে সেই অগোছালো দিন টা
ভর বিকেলে বটের তলায় দাঁড়িয়ে তুমি,
আমার অপেক্ষায় বিমগ্ন।
প্রথম দেখার এক অস্থিরতা দুজনাতেই।
সামনে এলে কি বলবো তা নিয়ে
গভীর দুশ্চিন্তা, সকাল থেকেই।
ভাবনা প্রসূত কিছুই ঘটেনি সেদিন ।
কোনরকম ইস্ত্রি হীন চুড়িদারটা পড়েছি
বিহ্বলতার কবলে পড়ে রাস্তার পাথরে হোঁচট খাওয়া— জুতোটাও গেল...
একহাতে রেখেছি অপেক্ষা অন্য হাতে সময়
হাত দু'টো ছড়িয়ে রাখি...
মাঝখান দিয়ে ঝুঁকে পড়ে রোদ
ঝরে বৃষ্টি
কখনও কখনও ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে ঢেকে দেয় জ্যোৎস্না।
মাঝখানের এই শূন্যতায় অনিবার্য কল্পনা লুকিয়ে রাখি।
বেনিয়ম সারসের ডাক, গলা থেকে চুঁয়ে
মিশে যায় ঝরা ফসলের দানায় দানায়।
দ্রুতগামী ট্রেন প্ল্যাটফর্ম পার করে মাঝরাতে।
পরিকল্পনাহীন চাওয়া আর অপর্যাপ্ত পাওয়ায়
কোনও ঋতু পরিবর্তন...
তখনও তো ওরা কেউ শরীর বোঝেনি
প্রেমের গন্ধ ছিল টিউশন জুড়ে
এলোমেলো চুল তাতে লাল নীল গার্ডার
সপ্তাহে তিনদিন মন ফুরফুরে।
ওরা কেউ চেনে না কি, আদরের মায়া
শুধু বোঝে কালো শার্ট, নীল চুড়িদারে
একটুও হাত যদি লেগে যায় হাতে
দিনটা দিব্যি কাটে নচিকেতা সুরে।
এইভাবে ফেলে এসে সময়ের ক্ষত
হঠাৎ বজ্রপাত, গড়িয়ার মোড়ে
অটোর লাইনে জ্যাম, মেঘ করে...
আমাদের হাঁটা-চলায় দোষ অনেক
হুজুরের করণকক্ষের ভেতরে ঢুকে চোখে চোখ রেখে
সরাসরি তাকিয়ে বলি : ‘আমি কী আসতে পারি স্যার’ ?
তকতকে পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে
এমনি এমনি হোঁচট খেয়ে পড়ি
হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগি দু’চারদিন।
আমাদের দেখা-শোনাতেও দোষ অনেক
যেটা দেখি সেটা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে মেলে না
যেটা শুনি সেটাও ‘কোট আনকোট’ জিভ থেকে সরে না।
অদৃশ্য কেউ...
আমেরিকা সাত, ইউরোপ পাঁচ, রাশিয়া সাকুল্যে চার দিন
জীবনের বাকি দিনগুলো আমি চেয়েছিলাম তোমাকে দিতে
ফোড়নের মতো দপ করে জ্বলে উঠে
তুমি, কয় মন অসন্তোষ ঢেলে দিলে...
অথচ আমাকে ধরে রাখতে চেয়েছে, সমুদ্দুর
সামুদ্রিক ফ্যানা, সে-ই আরব্যরজনী, এক একলা আকাশ
চীনের প্রাচীর
আজও দেখো রয়েছে একই
কত পর্যটক প্রতিদিন আসে যায়!
ব্যবধান গড়েছে সময়
শীতের শহরে, বস্তা, আরাম যখন
রূপকথা...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম
বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন
অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা
দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম
নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে
রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন --
তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি!
আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি
দেবীগন্ধ ছেড়ে...
তোমায় দিলাম পদ্মনাভ ভোরের
আকুল-বিকুল শিউলি ফুলের ঝরা,
তোমায় দিলাম অন্তরঙ্গ ঘোরের
রক্ষাকবচ। পাখির রাতচরা
দেখাক তোমায় তাদের বুকের ক্ষত
গোলাপকাঁটায়,যে যন্ত্রণায় গানের
গভীরতায় অরণ্যময় যত
বৃষ্টি ঝরায় ছন্ন অভিমানে।
তোমায় দিলাম মন খারাপের গলি,
বিকেল বেলার মেঘলা প্রতিশ্রুতি,
যখন তোমায় মনের কথা বলি
বোঝো আমার সমগ্র বিচ্যুতি?
ঢের দিয়েছ এতেই বোঝাই খাতা
স্বভূমি আজ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা
তবুও ডাকো অবাধ্য কলকাতা!
হৃদয় যখন...
রাধার ছিল শতেক ঘোড়া, জিনপরানো
একলাপথে হাঁটছে তবু, রাজকুমারি
পথ পাথরে বেবাক তাকে ভুলিয়ে দিল
তারও আছে চকমেলানো রাজার বাড়ি।
কৃষ্ণকিশোর মাঠ চিনেছে ঘাট চেনেনি!
যে ঘাট বেয়ে নামছে সিঁড়ি রূপসায়রে
কে দিল তার বাঁশির বাতাস, চুম্বনে স্বাদ
কেউ কি জানে? রঙ-বেরঙে কুৎসা ওড়ে
আজকে যখন কৃষ্ণরাজের কলটি নড়ে,
মিথ্যে তাকে 'ধর্ম' নামে উঠছে ডেকে!
বাঁশির ফুঁয়ে দেশপ্রেমের ওড়ায়...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা
বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন
চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি
মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি
নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...