যথা-রীতি তোমাকে সোহাগ করব, সাবধানে, কবিতা যেমন গোড়ায় কোমল ছন্দ, উদ্দাম মাত্রার ধাক্কা শেষে— শব্দেরও শিরদাঁড়া-ভাঙা,বাঁকা-লিঙ্গ,ছিঁড়ে-নেওয়া-স্তন... চুমু-শেষে ধাপে-ধাপে অর্গ্যাজমও,আবেশে আশ্লেষে— ভালোবাসতে এসে দেখি চতুর্দিকে সংবাদমাধ্যম: হেডলাইনস্ মুহূর্তে সরে ক্রাইমের বৈচিত্র্য শানিয়ে... কোথাও পূর্বরাগ নেই,কবি সেজে ডেস্কে ব’সে যম... আদর করছি পরস্পরকে, মুখে মুখে, বানিয়ে বানিয়ে লাভ-লাইন দরজা-কপাট ঝপাট খোলা, ঢুকলাম এই— শরীরভাঙা পাল্লা-গরাদ; আয়, চলে আয় বাতাস-বাধাও হাপিশ হল হর্ষ পেয়েই— ঘি...
সুমন মল্লিকজন্ম ১৯৮৫ সালে কোচবিহারে৷ বর্তমানে শিলিগুড়িবাসী৷ ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর  পেশায় শিক্ষক৷  প্রকাশিত কবিতার বই পাঁচটি ৷ শখ : ভ্রমণ, গান শোনা, সিনেমা দেখা, ছবি তোলা এবং বই পড়া ৷সেসব কথাসেসব কথা জানে শুধু প্রিয় নদী৷চাঁদের আলোর মাঝে কীভাবেএকটুকরো অন্ধকারে আমি আর তুমিচকোর হয়ে যেতাম...কীভাবে আমাদের বুকের ছলাৎছলমিশে গিয়ে...
পোড়া রুটি ও কয়েকটি কবিতা দ্বিতীয় ঢেউ ভালো লাগছে না বলতে নেই বলো লড়াই-ই জীবন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে অস্বীকার করার শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই চিয়ার্স বাকি সবকিছু আবর্জনা টান মেরে ছুঁড়ে ফেলো হাসো,লুটোপুটি খাও কোনো নিউজ চ্যানেলের দিকে তাকিও না বরং নিজেই একটা নিউজ হয়ে যাও অদৃশ্য বিভীষিকাকে ছেয়ে ফেলুক আমাদের অট্টহাসি... এই প্রথম গোটা একখানা মহামারির ময়না তদন্তের রিপোর্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের হাতে...
জমাটবাঁধা মেঘের ভিতর দিয়ে যখন সংবাদগুলি উড়ে যাচ্ছিল আমি বিদ্যুৎ পেড়ে আনতে একটা লম্বা আঁকশি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। দেখি,আঁকশি বেয়ে নামছে থিকথিক মাজাভাঙা মানুষ। আমি মার্ক্স পড়িনি। ভরা পেটে তাদের বহুদিন রপ্ত করতে হয়েছে অন্ধ- ভিখিরির পার্ট । বনবিতানের গেটে এখন তারা এনামেলের বাটি নাচাচ্ছে, 'পয়সা দিয়ে হাওয়া কিনব না,কিনব না'। আর মাঙনায় পাওয়া লক্ষ্মীর সরা পেতে দিয়েছে চরাচরে। মুফত পেলে এক কাপ...
তোমায় দিলাম পদ্মনাভ ভোরের আকুল-বিকুল শিউলি ফুলের ঝরা, তোমায় দিলাম অন্তরঙ্গ ঘোরের রক্ষাকবচ। পাখির রাতচরা দেখাক তোমায় তাদের বুকের ক্ষত গোলাপকাঁটায়,যে যন্ত্রণায় গানের গভীরতায় অরণ্যময় যত বৃষ্টি ঝরায় ছন্ন অভিমানে। তোমায় দিলাম মন খারাপের গলি, বিকেল বেলার মেঘলা প্রতিশ্রুতি, যখন তোমায় মনের কথা বলি বোঝো আমার সমগ্র বিচ্যুতি? ঢের দিয়েছ এতেই বোঝাই খাতা স্বভূমি আজ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা তবুও ডাকো অবাধ্য কলকাতা! হৃদয় যখন...
বৃষ্টি ও চাঁদের মাঝে মোমবাতি জ্বেলে মধ্য জুলাই আমার বুকে শস্যবীজ রেখে গেছে কবে! এমনই অন্ধকারে জলের রং চিনিয়েছিল অস্ফুট ভ্রূণাধার। সোঁদা মাটিতে স্নেহের গন্ধ শুঁকে পৌঁছে গেছি কত অচিন পুকুর— সেখানে সেই হাতের চপলতা নেই, নেই কোনও শ্বাসের প্রলেপ হে জুলাইয়ের জন্মবার আমাকে নিয়ে চলো রোমকূপের বনে! আদিম ঘাস যেখানে লোকাতীত আলোর অপেক্ষায় গর্ভের কলুষহীন মাঠও আরেকবার নিশ্চুপ হতে চায়, হাত ধরে বলে— ‘তৃষ্ণার্ত পারাপার...
কার দিকে চোখ? কোথায় তোমার মাথা? কার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে আছে? অমন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভ্রমরও তো যায় না অতো কাছে! মুখ লুকিয়ে কীসের অত হাসি? সারাটাদিন কীসের এত মেসেজ? নদীর জলও আয়না মুছে ফেলে সে-ই বা কেন এমন দাঁড়ায় এসে? এতটা ছাড় দিয়েছ কেন তুমি? বন্ধু শুধু? বন্ধু কেমন জানি ওর দেওয়া বই বুকের কাছে রাখো আমি তো...
ছোটদের ছবি ওর ছোটবেলাকার কোনও ছবি নেই ছোটবেলা নেই? না না, ছবি নেই ছোটবেলাটা কি ছবির মতো নয়? সে আর ক'জনেরই বা হয়! তা বলে ছবি থাকবে না? হয়তো ক্যামেরা ছিল না সেই সব দিনে কটা বাড়ি ছবি তুলত ক্যামেরা কিনে? স্কুল নেই? বিয়ে বাড়ি? আত্মীয়স্বজন? পুজো বা জন্মদিন? খাওয়া? আয়োজন? বান্ধববর্জিত নাকি! ছিল না এসবের প্রয়োজন? প্রয়োজন না থেকে কারও পারে! হয়তো...
বিকেলবেলার হাওয়া এসে বলে গেল প্রশ্রয় পেতে পেতেই কেউ উদ্ধত হয়, তোমার কাছে আরেকটু উদ্ধত হতে চাইলাম, সত্যযুগের এডিটর কুমুদ দাশগুপ্তর কথা লিখলাম ৭১-এর কলকাতায় গড়ের মাঠে সরোজ দত্তকে নামিয়ে দিলেন অফিসার রুনু নিয়োগী, তারপর একটা গুলি...... প্রাতঃভ্রমণে এসে কেঁপে উঠলেন মহানায়ক।   আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ২৪মিলিমিটার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ফোকাল লেন্স ক্যামেরায় কানু সান্যালের ছবি তুলেছিলেন যে চিত্রগ্রাহক,...
যেখানে সেখানে মরব না আমি। যেমন তেমন করেও নয়। অনেক আর্তি, অনেক কাতর ভিক্ষা, বহু আনত জ্যোৎস্না মাড়িয়ে, এতৎকালের জমানো সব পুত্তলিকাপ্রবাহ; দু হাতের নখে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলব শ্মশানচারী শৃগালের মত। যত পলাতক পরীদের দল, আর রক্ষে থাকবে না হাহাকারে। যত আমন্ত্রণ, যত নিহত শিশু পঙ্গপাল সব সব ছত্রভঙ্গ হবে - দানব হুঙ্কারে। হে ক্ষত্রদেবতা,...
এই সেই গলি এইখানে বাঁয়ে বেঁকে কী সরু কী সরু,দুদিকে দোকান গাড়ি ঢোকে না, হাতে হাতে ধরে… তারপর সেই মুখ, সাধ না মেটা দেখা অঙ্গে বস্ত্র নেই জলস্নান জলস্নান কে? কে? কে? কে খায়নি নুন? মাসি পিসি কাকা জ্যাঠা আত্মীয়কুটুম শুধু মেয়ে বলে সে— মুখে দেবে না আগুন?
আপেল, ছুরি, জলের পাত্র, না-খোলা খবরের কাগজ আরো কিছু অনাবশ্যক দৃশ্য আর আছো তুমি-নেই ফলের খোসা ছাড়ানোর দৃশ্যের মত— খুব সাবধানে, সন্তর্পণে চেঁছে নেওয়া ফলের অযথা মাংস যেন না ফলের খোসার সঙ্গে যায়… যে-তোমায় সমীচিন করে তুলেছে সে এই ছুরিবিদ্ধ ফলের গায়ে সকালের গমগমে রোদ  
ঘরের মৃদু আলো নিভে আসে দিনের শেষে পাশাপাশি শুয়ে থাকে দাদু আর দিদা ঘুমানোর আগে দিদার কত যে অভিযোগ ভেসে আসে— দাদু তেমন কিছুই বলে না। সমস্ত কথার শেষে দিদা বলে ওঠে “আমি যেন ঠিক চলে যেতে পারি তোমার যাবার আগে” দাদুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কেবল একটিই কথা “কেন যে এইসব বলো... সকালে উঠতে হবে...
আমাদের হাঁটা-চলায় দোষ অনেক হুজুরের করণকক্ষের ভেতরে ঢুকে চোখে চোখ রেখে সরাসরি তাকিয়ে বলি : ‘আমি কী আসতে পারি স্যার’ ? তকতকে পরিষ্কার রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে এমনি এমনি হোঁচট খেয়ে পড়ি হাঁটুতে ব্যথা নিয়ে ভুগি দু’চারদিন। আমাদের দেখা-শোনাতেও দোষ অনেক যেটা দেখি সেটা প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে মেলে না যেটা শুনি সেটাও ‘কোট আনকোট’ জিভ থেকে সরে না। অদৃশ্য কেউ...
তৃতীয় রঙের মতো শিশু বেড়ালেরা ঢুকে পড়েছিল বলে তুমিও ছায়ার উল্টো দিকে বসে প্রত্যাশিত জমির দখলে নেমে পড়তে গিয়ে দেখো গোল গোল থাবা ঢুকে গেল কোলে কাঁখে এবং বেরালে নিয়ে সেই সব শিকারীর স্তনযন্ত্রণাকে যাতনা মানে তো মুখে অচেনা স্বাদের আনাগোনা চলে আর শ্রাবণ মাসের মধ্যে রেখে আসা ছোট ছোট পাগল পাহাড় পাহাড়ের ফুল দোলে,...
জীবনের গান   প্রত্যাখ্যানের মধ্যে সমস্ত আশ্চর্য রাস্তাগুলো লুকিয়ে আছে পৃথিবীর বুকে জর্জ বিশ্বাসের গানকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ করছে আয়ু রেখা ছেঁড়াতার বেঁধে ফেলতেও চান কেউ কেউ কিন্তু, ওই যে মন আর মস্তিষ্কের 'ম' আলাদা তাই, যাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো তাকে বলো না কখনও, 'ভালোবাসি!'     অভিসম্পাত শব্দের সঙ্গে বহুকাল সম্পর্ক না থাকলে দূরত্ব বাড়ে ভেতর ভেতর ভয় তাড়া করে যদি কোনও...
প্রকৃত শোকের কাছে সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যায় রোজকার জীবনের শীত, গ্রীষ্ম, মামুলি ঋতুরা প্রকৃত শোকের আছে নিজস্ব উচ্চতা, সম্মোহন ধ্যানের স্তব্ধতা আর আত্মার গভীর উচ্চারণ প্রকৃত শোকের কাছে মাথা নত হয় অনায়াসে ছড়ানো- ছিটানো যত লোভ, সব অর্থহীন লাগে প্রকৃত শোকের আছে বেদনার গোপন আহ্লাদ সুরের নিবিড় স্পর্শ, প্রার্থনার মতো মন্ত্রধ্বনি প্রকৃত শোকের কাছে যেতে হয় খুব...
নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও এখনো ভিড়ের মাঝে ? কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে? গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে নীরবে নিভৃতে করা যায়। সেইক্ষণে মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে। ফিরে এসো জনসভা থেকে ফিরে এসো ভিড় থেকে বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি এখনো ভিড়ের মাঝে...
ছোটনাগপুর থেকে পথ ফিরে এলে সমতলে সমবেগে যেতে যেতে মায়া ধাক্কা দেয় উঁচু আর নিচু লাগোয়া লাগোয়া ছোটাছুটি মন নেমে আসে মন উঠে যায় হুটোপুটি সার ধীরে ধীরে গতি কমে শিথিলতা আসে চোখেমুখে চড়া রোদ, খুব শীত এইসব শীর্ষে যাওয়ার মতন উত্তেজনা থাকে না কোথাও নদী খাল ঝরনার স্ফূলিঙ্গ গায়ে এসে লাগে হাত-পা-শরীর কেঁপে ওঠে আচমকাই মনে পড়ে...
গায়ে মাটি বনের মধ্যে বুড়ো শরৎকাল চারপাশে তার উড়ে বসল পাখির চতুষ্পাঠী মহালয়ার গল্প শোনো এইখানে কৈলাস রাত্রি-ভোরে উঠেছে সব বয়স্ক গাছেরা তাই দেখে আজ জলের ধারা প্রথমে ডাকেনি অথচ চাঁদ ফাটল যখন মেহগনির শাখে জ্বরে কাঁপছে সবেমাত্র সন্তানসম্ভবা রিকশাচালক রহিমচাচার স্কুল-পড়ুয়া মেয়ে পাড়ায় হাসছে, বাড়ির লোকেও মেনে নেয়নি, তাই আত্মহত্যা করতে এলো নদীর নীচু বাঁকে? দৌড়ে গেল কাঠবিড়ালি...