পারিজাত ব্যানার্জী

5862
12927


ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর

ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে এই মুহূর্তে কারাবন্দি কবি। তাঁর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার বহু মানুষ।

ভাষান্তর | শ্যামশ্রী রায় কর্মকার

মেধা

ভাগ্যবান

তুমি ধনীর ঘরে জন্মেছ
তোমার ভাষায় বলতে গেলে
‘রূপোর চামচ মুখে জন্ম তোমার’

তোমার বিপ্লব নির্মাণ
আমাদের যন্ত্রণা পাশবিক
তুমি বুদ্ধিমান
বাসের জানলাও তুমি শৈল্পিক ভাবে ভাঙতে পার
নিখুঁত আকৃতি

সূর্যের রশ্মির মতো সামঞ্জস্য তাতে

তুমি চাকার হাওয়া বার করে দিতে পার
শিল্পীর দক্ষতায়
রাইফেলের কুঁদোর ওপরে থুতনি রেখে
পুলিশ তোমাকে প্রশ্রয়ের চোখে দেখে

তুমি রাখি বাঁধতে পার

এমনকি
পুলিশ স্টেশনের
অন্ধকারতম চেম্বারেও
তুমি বিনাটিকিটে বাসে চড়ো
না না
পয়সা নেই বলে নয়
এসব তো প্রতিবাদ, বাস্তবিক

এই সুন্দর রাস্তাঘাট
সবই তো তোমাদের
সে তুমি ‘রাস্তা রোকো’ই কর
কিম্বা ‘মেধা বাঁচাও’ এর টিকিট সেঁটে গাড়িই চালাও

আমরা খালি পায়ে হাঁটি
ঘামের দুর্গন্ধওয়ালা রোড রোলার সব
হ্যাঁ, আমরা রাস্তা বানাই। তাতে কী হয়েছে?
প্ল্যান তো তোমাদের
কন্ট্র‍্যাক্টের প্রশংসাটুকুও তোমাদেরই প্রাপ্য

উল্লাসের সেই ষাট দিন, তুরীয় আনন্দ যেন
যখন তোমার ছোট্ট সোনামণিরা
তাদের বেপরোয়া বন্ধু-বান্ধবেরা
সে কী আনন্দময় তাণ্ডব আমাদের

সক্কলে খুশি
অভিভাবকেরা, তাদের অভিভাবকেরা
ভাইবোনেরা
এমনকি চাকরবাকরেরাও
আর খবরের কাগজগুলো?
ওহ! তারা তো
যাকে বলে একেবারে শিহরিত

ছেলেরা আর মেয়েরা
হাতে হাত ধরে
মৃত মেধা আর ভাঙাচোরা ভবিষ্যতের
প্রতিবাদে
পিকনিকে চলেছে
ওঃ বন্ধু!
দারুণ বীরত্বের কথা

মেধার প্রতিযোগিতায়
তোমরা হলে দূরপাল্লার দৌড়বিদ
আমরা, বেচারা কচ্ছপেরা
তোমাদের পাশে পাশে দৌড়াতে পারি কি?

যদি
তুমি চিক্কদপল্লীতে কোনো চেয়ারের দাস হও
সিনেমাহলে বাদাম বিক্রি কর
কোঠাবাড়ির পাড়ায় জুতো পালিশ কর
তাঙ্কবুন্দের পথে গাড়ি আটকে দিয়ে
আন্দোলনের চাঁদা চাও

তাহলে বলা ভালো, যে
খবরের কাগজের লোকেদেরই মেধা বস্তুটা আছে
ওদের ক্যামেরা ভালোবেসে ছবি তোলে
ওদের কলম উত্তেজনায় চিৎকার করে বলে
“কী ঝকঝকে যৌবন! ”

আমাদের ইতরের মতো চেহারা, আমরা ব্যর্থ মানুষ
মৃত পশুর দুর্গন্ধের মধ্যে বসে
আমরা জুতো বানাই
নিজের রক্ত দিয়ে রঙিন করে তুলি
নিভে আসা চোখের আলোয়
পালিশ করি

যাইহোক
আচ্ছা! অন্য কেউ জুতো পালিশ করে দিলে
পালিশটা বেশ অন্যরকম দেখায়
তাই না?

আমরা তোমাদের আবর্জনা সাফ করি
রাতের ক্লেদ মাথায় করে নিয়ে যাই
তোমাদের ঘর সাফ করতে করতে
তোমাদের সুগন্ধি দেহের মতো চকচকে করে তুলতে তুলতে
আমাদের শরীর ভেঙে আসে

ঝাড়ু দিতে দিতে, মুছতে মুছতে আমাদের হাত ঝাড়ু হয়ে যায়
ঘাম জল হয়ে যায়
রক্ত ফিনাইল
ওই কাপড় কাচার পাউডার আমাদের গুঁড়ো গুঁড়ো হাড়
কিন্তু এসবই তো কায়িক শ্রম
এতে মেধার কী আছে?
দক্ষতার?

টানটান করে গোঁজা শার্ট আর মিনিস্কার্টে
জিন্স আর হাইহিলে
এই সিমেন্টের রাস্তায়
যদি এক আধবার হাসিমুখে ঝাড়ু দিয়ে ফেল,
সে তো আকাশবাণীর স্কুপ
দূরদর্শনে চোখধাঁধানো প্রোগ্রাম

আমরা রিক্সাওয়ালা
কুলি, ঠেলাগাড়িওয়ালা
পাতি দোকানদার
নিচুতলার কেরানি

আমরা
এমন হতভাগী মা
যে সন্তান খিদেয় কামড়ে দিলে
একফোঁটা দুধও দিতে পারে না

আমরা হাসপাতালে লাইন দিয়ে দাঁড়াই
রক্ত বেচে খাবার কিনি

কিন্তু
এতে তো কেবল দরিদ্র‍্য আর খিদের গন্ধ
তোমাদের রক্তদান শিবিরের মতো
দেশাত্মবোধের স্বাদগন্ধ
পাব কোথায়?

তোমরা যাই কর না কেন
ঝাড়ু লাগাও, জুতো পালিশ কর
রেলস্টেশনে মোট বও
কিম্বা বাসস্ট্যান্ডে
ঠেলাগাড়ি করে ফলটল বিক্রি কর
ফুটপাতে চায়ের দোকান দাও
‘মেধা বাঁচাও’ প্ল্যাকার্ড হাতে
মিছিল বের কর
আর চিবিয়ে চিবিয়ে কনভেন্টের ইংরেজি বুলি আওড়াও

আমরা জানি
তোমরা আসলে আমাদের দেখাতে চাও
যে আমাদের কাজ সবাই করতে পারে
এসব করে তোমাদের মতো মেধাবীদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া যায় না

শিফন শাড়ি, চুড়িদারের ওপর
সাদা কোট, কালো ব্যাজ
বুকে ঝুলতে থাকা স্টেথো (স্টেথোস্কোপ)
পাশে ‘মেধা বাঁচাও’ স্টিকার
যখন দপ্তরের সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে
স্বর্গের ডানা যেন
তোমাদের মধ্যে যারা অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে
আর আমাদের মধ্যে যারা বারোহাজার ছাড়িয়েছে
সংরক্ষণের যে আদেশ
সে কি শুধুই স্বপ্নভঙ্গ? স্বর্গের ভিত নড়ে যাওয়া?
সে তো টুকরোটুকরো রামধনু

তোমার আন্দোলন
ন্যায়ের পক্ষে
এজন্যই তো
স্বর্গের মাটিতে
দেবতারা অমৃতের জন্য এতো লালায়িত ছিলো

যে মুহূর্তে
তুমি জেল ভরার ডাক দিলে
সাংবাদিক বৈঠকে
আমরা ছিটকে গেলাম
ব্যারাক থেকে
পূতিগন্ধময় নরকে
দারুণ ভাবে স্বাগত জানানো হয়েছিল আমাদের
লাল কার্পেট বিছানো হয়েছিল
(‘লাল’ আসলে শুধুই একটি রুপক, যারা বিছায়, তারাও এই রঙকে ভয় পায়)

আমরা আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম
তোমার পবিত্র পদধূলি
শুধু দেশকেই নয়
দেশের জেলকেও ধন্য করবে

কী বোকামি, তাই না!
চূড়ান্ত মেধাবী
দেশের সোনালি স্বপ্নের
ভবিষ্যৎ
এই চোরের নরকে
খুনি ও বিধ্বংসী মানুষের নরকে
কীভাবে আসতে পারে তারা?

ওই অনুষ্ঠানবাড়িগুলো
যেখানে ধনীদের বিয়েশাদি হয় আরকি
সেগুলোই তোমাদের জেলখানা
আমরা কাগজে পড়ি, মজা পাই

আমাদের সংগ্রাম সারাজীবনের, শেষদিন পর্যন্ত
কিন্তু তোমাদেরটা হল ঐশ্বর্যের সমারোহ, বিয়েবাড়ির মতো
যদি অসুখীও হও
সে অনেকটা দাম্পত্যে টানাপোড়েনের মতো
যদি আসবাব পোড়াও
সেও তো আতশবাজি
যদি ‘বন্ধ’ পালন কর
আসলে সেদিন বাড়িওয়ালার মেয়ের বিয়ে আছে

ভাগ্যবান
তোমার মেধার মৃতদেহ
বড়রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়
পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণের আবহে
চৌরাস্তায় পোড়ানো হয় তাকে

কিন্তু মেধার মৃত্যু নেই
তাই
তুমি সৃষ্টিশীলভাবে রূপক মিছিল সাজাও
শোকের প্রহসন করো
আমাদের
খুন হয়ে যাওয়া কিম্বা মরে যাওয়ার মধ্যে
কোনো মেধা নেই

আমরা মরি
খিদে কিম্বা রোগব্যধি নিয়ে
পরিশ্রম করতে করতে, কিম্বা অপরাধ
লকআপে কিম্বা এনকাউন্টারে
(মেধাবীরা কোনোদিন মানবে না যে অসাম্য হিংসারই আরেক নাম)

আমাদের ছুঁড়ে ফেলা হবে
রাস্তায়
নোংরা গহ্বরে
ধূলোর পাহাড়ে
অন্ধকার বনের ভিতরে

আমরা ছাই হয়ে যাব
চিহ্নবিহীন
কোনো পাহাড়চূড়া থেকে, গহ্বর থেকে
আমরা হারিয়ে ফেলব
জন্ম, মৃত্যু
জনগণনার পরিসংখ্যান ছাড়া
দেশের অগ্রগতিতে
এসবের কী বা প্রয়োজন?

আমরা জন্মাই
মৃত্যুতে বিলীন হয়ে যাই
দারিদ্র্যে, দারিদ্র্যের কারণে
তুমি অবতীর্ণ হও
ধর্মের সংকটে
কাজ শেষ হলে
ত্যাগ কর অপ্রয়োজনীয় অবতার
তুমিই তো সেই সূত্রধার

তুমি ভাগ্যবান
তুমি মেধার আকর।

5862 COMMENTS

  1. My brother suggested I might like this web site.
    He was entirely right. This post truly made my day.
    You can not imagine simply how much time I had spent for this
    information! Thanks!

    Here is my page :: amazon coupons (Berniece)

  2. Admiring the time and effort you put into your website
    and in depth information you offer. It’s awesome to come
    across a blog every once in a while that isn’t the same
    old rehashed information. Excellent read! I’ve
    saved your site and I’m including your RSS feeds to my Google account.

    Stop by my homepage nursing test; Bernardo,

  3. I don’t even know the way I stopped up right here, however I believed this
    post used to be great. I do not realize who you might be but certainly you’re going to a well-known blogger if
    you are not already. Cheers!

    Feel free to visit my web-site: gamsat practice tests tips (Cristine)

  4. I don’t even know the way I finished up right here, but I believed this put up was once good.

    I don’t understand who you are but definitely you are going to a well-known blogger if you happen to aren’t already.

    Cheers!

    Take a look at my page – ncetmb exam (Lavon)

  5. It is truly a nice and helpful piece of information. I am happy that you simply shared this helpful information with us. Please keep us informed like this. Thank you for sharing.|

  6. Having read this I believed it was rather informative. I appreciate you spending some time and effort to put this informative article together. I once again find myself spending a lot of time both reading and posting comments. But so what, it was still worth it!|

  7. Hmm is anyone else experiencing problems with the pictures on this blog loading? I’m trying to determine if its a problem on my end or if it’s the blog. Any suggestions would be greatly appreciated.|

  8. Hi there! I’m at work surfing around your blog from my new iphone 4! Just wanted to say I love reading through your blog and look forward to all your posts! Carry on the superb work!|