মামুন মুস্তাফার কবিতা

6644
20663
Poem
দেশভাগ ১৯৪৭

দেশভাগ

সম্পত্তিটুকু ভাগ হল
একদিকে হাঁড়িপাতিল, রঙিন মাছের আঁশটে
গড়িয়ে পড়া জল নুনের ভাড় হেঁসেলের ধোঁয়া,
অন্যদিকে স্মৃতিজ্বলা মুখ ও হৃদয়ের বিভূতি
শ্যামবর্ণ ধূসর চৌকাঠ আর নরোম জ্যোৎস্না।

কিছু আত্মকেন্দ্রিক মানুষ
অনতিক্রম্য মাতাল হাওয়া বন্ধক
রাখে চণ্ডাল বিচারকের দুই হাতে।
এইভাবে চুরমার ভস্মছাই হয়
পুতুল সংসার, নির্মাণের হাতিয়ার
ভেঙে পড়ে আর্তচিৎকারে;
সম্পত্তিটুকু তখনো দূরে দাঁড়িয়ে

গোপন মুদ্রায় জাগে এক
অনভিপ্রেত সকাল! কান্নার দাগ সহজ হয়ে
ওঠে ভোরের আলোয় দেখি প্রকৃতির
বৈভব নিয়ে ঈশ্বরের আঙুলে ভাগ হয় সকল সম্পত্তি
একদিকে পশ্চিম, অন্যদিকে পুবের বাড়ি।

ওই মধ্যখানে হতভম্ব রেডক্লিফ
মেলে ধরে চিরকালের আত্মহনন!

 

মহাভারতের প্রেম

যুদ্ধ তো শেষ,
ছিন্ন করোটির কিছু বৌদ্ধিক জ্ঞান
পড়ে আছে যত্রতত্র;
ভাঙা শাঁখায় আর নগ্ন পায়ে
তুমি এসে দাঁড়াবে কী রণক্ষেত্রে?

এই আমি কুরুক্ষেত্রের মঞ্চ থেকে সরে এলাম
কৌমার্য দিনের কথা কেউ বলবে না আর
অনেক তো হলো দ্রৌপদীর শাড়ি নিয়ে হোলি খেলা!
এই পুবে থেমে নেই পর-পুরুষের ছায়া,
প্রাচ্য খুলে দিয়েছে তার সকল-হা,

বন্ধনীর ওপাশে শুধু হৃদয় ছিনতাই
মহাভারতের প্রেম নিয়ে জাগে সিঁদুরের লাল।

 

ঝড়

মধ্যদুপুরে ভাগ হয়ে পড়ে আছে দাম্পত্য
একটুবাদেই গোধূলির রঙে নাচবে পৃথিবী
হঠাৎ দ্রাঘিমা রাঙানো বাতাস এসে ভেদ
করে নির্জন আয়নার অতসী কাঁচ।

তুমি কী আমাকে দেখতে পাচ্ছ এখন?

প্রশ্নটাকে জলের কুণ্ডলি বানিয়ে উড়িয়ে
নিল অসময়ের ঘূর্ণি হাওয়া
পশ্চিম আকাশে অস্তরবির লাল চুলোয়
জ্বলছে কিছু বিবাগী চিল

আমরা কী তবে পথিমধ্যে ভাগ হয়ে যাব?

দ্বিতীয় প্রশ্নের কোনো সুযোগ থাকে না!
মৃত্যুর আনন্দ দেখ, রাখ দীর্ঘশ্বাস,
বৈতরণী পার হয় বোশেখের পূর্ণ বিভাব।

6644 COMMENTS