রবার্ট অ্যাডামসনের কবিতা

0
234

রবার্ট অ্যাডামসন ১৯৪৩ সালের ১৭ মে Neutral Bay অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বড় হয়ে ওঠেন। তিনি Neutral Bay Primary School-এ প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করে Crows Nest Technical College থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ছেলেবেলায় Hawkesbury River অঞ্চলে বসবাস করার সময় তিনি নাবালক অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েন এবং আইনত শাস্তিপ্রাপ্ত হন। আশ্চর্যভাবে এই সময়কালেই তিনি কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন।

অ্যাডামসন অস্ট্রেলিয়ার একজন অগ্রণী কবি, সাহিত্যিক, প্রকাশক ও সাংবাদিক। ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রেও তাঁর লেখালেখি প্রকাশিত হয়েছে এবং বহু ভাষায় তাঁর লেখা অনুদিত হয়েছে। বিবিধ সাহিত্য-সংস্কৃতিমূলক কর্মকাণ্ডে তাঁর সক্রিয় যোগাযোগ অস্ট্রেলিয়া সাহিত্য জগতে তাঁকে এক মহীরুহ অবস্থান দিয়েছে। তিনি ১৯৪৭-১৯৮০ এই সময়কালে Poetry Society of Australia-র সভাপতি পদে আসীন ছিলেন এবং Societyর পত্রিকা New Poetryর সম্পাদনা করেছেন ১৯৬৮-১৯৮২ সাল পর্যন্ত। তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংবাদপত্র The Australian-এর কবিতা সমালোচক ছিলেন দীর্ঘদিন যাবৎ। এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকা ও সংবাদপত্র তাঁর সাহিত্যমেধা ও মননে পুষ্ট হয়েছে।

১৯৯০ সালে তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ The Clean Dark একাধারে The Victorian Prize, NSW Premiers’ Prize এবং Australia’s National Book Council ‘Banjo’ Award লাভ করে। এই প্রথমবার একই কাব্যগ্রন্থ তিনটি সম্মানীয় পুরস্কার লাভ করে। এরপর ১৯৯৪ সালে Waving to Hart Crane কাব্যগ্রন্থটিরও ভূয়সী সম্মানপ্রাপ্তি ঘটে। এরপর ১৯৯৫ সালে কবিতায় সারা জীবনের সাহিত্য অবদানের জন্য তিনি FWA’s Christopher Brennan Award পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ সালে প্রকাশিত তাঁর আত্মজীবনী Inside Out বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হয়, যেমন – Melbourne Age’s Book of the Year Awards 2004, the Queensland Premier’s Literary Awards 2004 and NSW Premier’s History Awards 2004, State Library of New South Wales National Biography Award 2004, and the NSW Premier’s Literary Award’s Douglas Stewart Prize for non-fiction ইত্যাদি। কবিতার জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে তাঁর চিরস্মর্তব্য ভূমিকা অক্ষয় হয়ে রয়েছে।

অনুবাদ: রাজেশ গঙ্গোপাধ্যায়

আলো আসছে

কোথায় যে তাকে ছেড়ে এলাম!
ধরে নিয়েছিলাম যাত্রা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু হতে পারে

স্মৃতি আরও অতলে তলিয়ে গিয়েছে
দীর্ঘপথ অতিক্রান্ত হল

স্তব্ধতায়, একমাত্র
ঘটনা বলতে পাথরটি স্থানচ্যুত হয়ে যাওয়া

যখন সে ঘুরে গেছে
সেই বস্তু কি কোন এক তীব্রগন্ধী আকরিক?

একঝলক প্রথম রোদের বিচ্ছুরণে
কৃষ্ণ প্রতিফলকতল দ্যুতিময় হয়ে ওঠে

পেছন থেকে তাকে দেখা যাচ্ছে
তার ঘাড়ের ওপর দিয়ে নেমে এসেছে এক মাথা কুঞ্চিত কেশবাহার

কাঁধ ছাপিয়ে। নতুন কোন আবিষ্কৃত কৌশলে সে
সে এড়িয়ে যেতে শিখেছে, কিভাবে

প্রবেশপথ পেরিয়ে একটা বাড়ি পাওয়া গেছে?
অন্ধকার আমাকে সমর্থন করেছিল, স্বচ্ছন্দে

আমার পেছনে, এক দৈত্যের ঘন কেশ থেকে,
শৈশবের স্মৃতি বুনে ওঠে, আমি উত্থিত হই

এবং দিনের দৈর্ঘ্য বরাবর আরোহী হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি
সেই চোখ, স্মৃতির ঝলকে

রূপোলী স্রোত পার হয়ে চাঁদ ওঠে
পৃথিবীর অবতল কিনার পেরিয়ে

বিবাহের মিঠে স্মৃতি ফিরে আসে
ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পারিবারিক আবর্ত ছাড়িয়েও দূরে চলে যাওয়া

হাওয়া ও ঢেউয়ের তীব্র শরীরী আশ্লেষে, মোলায়েম
আকাশে তারাদের লক্ষ্মণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে

দিনলিপি, ঘড়ি ও রাশিচক্রে মূর্ত হয়ে ওঠে
চিহ্নের অভিজ্ঞানস্বরূপ সরলরেখাগুলি…বক্ররেখাগুলি…

অর্থ

ঘন কৃষ্ণ বসন্ত রাত্রি, চাঁদহীন, বাতাস ঘন হয়ে আছে
ঝাঁঝালো পুষ্পঘ্রাণ ও উদ্ভিজ্জ আঠার মাদকে

হলুদ আলোকরশ্মির ধারালো ফলায়
পণ্য নির্মাতার বিশদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে

অর্থহীনতার কাছে সমর্পিত হই, ঠায় তাকিয়ে
অর্থোদ্ধারের চেষ্টা করি কালির ছিটেফোঁটাগুলি থেকে
যেন এক সমুদ্রপ্রাণীর নিঃসৃত জলজ ফোয়ারা
শান দেওয়ার পাথরে ধার বেড়ে চলে মস্তিষ্কের কিনার অবধি
অন্ধকার রাত্রির আদলে বিমূর্ত হয়ে ওঠে মালার্মের পাণ্ডুলিপি

এখন কাকেই বা বলতে পারি যে তুমি চলে এসেছ
জীবিত প্রাণের অস্তিত্ব থেকে বহুদূরে? শব্দের অতিরিক্ত ব্যঞ্জনা মুখর হয়ে ওঠে।

পাহাড়ের ওপাশ থেকে যখন গড়িয়ে ওঠে চাঁদ
আমি বকেয়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি

জাল ভেদ করে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ঘন আকাঙ্ক্ষার আদল
চন্দ্রমার প্রেক্ষাপটে সবুজ আগুনের এক চিলতে ঝিলিক –

এ জালের অন্তর্ভেদী চরিত্র আজ কতটা উন্মুখ হতে চায়?

যে সমুদ্রমৎস্য খাদ্য হিসেবে গ্রহণীয়, তারা চিন্তা করতে পারলে ভাবত –
হে ওয়ার্ডসওয়ার্থ, আপনিও এত মানবিক?

শুক্রবার সন্ধ্যেয় আরামের গভীরে তলিয়ে যাওয়ার মোক্ষম ক্ষণ হলেও
আজ আমি শূন্যতা বিষয়ে, অনুপস্থিতি বিষয়ে অনুধাবনের শৈলীতে মেতেছি

জীবন ধ্বনিত হয়ে ওঠে, নির্বাক শব্দের গানে
কোন এক মানব-মাকড়সা উপসাগরীয় বিস্তারে বুনে চলে মৃত্যুর জমাট বুনট

অ্যালকোহল, সখা আমার, ঘনান্ধকার বিচ্যুতি সম,
ক্ষতির নিবিড় ছাপ ছাড়া কে তোমাকে বিবেচনা করেছে সমূহ?

বিনোদনে নিহিত মা ও নৈঃশব্দ্য আকীর্ণ বাবা
আর আমার বাড়িটি নিজে নিজেই সেরে ওঠে আমায় অনুসরণ করতে করতে…