তায়েব সালিহ

7532
31443


তায়েব সালিহ | জন্ম ১৯২৯

উত্তর সুদানের কর্মকলের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ। খার্তুম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন। বিবিসি-তে যোগ। এরপর সরকারি নানা পদ সামলেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাতারের তথ্যমন্ত্রী ও ইউনেসকোর গাল্ফ অঞ্চলের প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন। ১৯৬৯ সালে তাঁর উপন্যাস সিজন অব মাইগ্রেশন টু দ্যা নর্থ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সালিহর খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া তাঁর রচিত দ্যা ওয়েডিং অব জেইন নভেলাও বিখ্যাত রচনা। শেষ বয়সে সুদানের ইসলামিক নিয়ম-কানুনের সমালোচনা করে তিনি বিতর্কিত হন। ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডে মৃত্যু। এই গল্প ডেনিস জনসন-ডেভিসের ইংরেজি অনুবাদ থেকে তর্জমা করেছেন

মাহমুদ মিটুল

একমুঠো খেজুর

আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। সঠিক বলতে পরব না তখন বয়স কত ছিল। তবে আমি স্মরণ করতে পারি সে বয়সে দাদুর সঙ্গে বেড়াতে গেলে লোকজন আমার মাথায় হাত বোলাত এবং গাল টিপে দিত- যা তারা দাদুর সঙ্গে কখনওই করেনি। একটি অদ্ভুত বিষয় হল, আমি বাবার সঙ্গে কখনও বাইরে যাইনি, বরং দাদু যেখানেই যেতেন আমাকে সঙ্গে করে নিতেন কেবল সকালবেলা ছাড়া, কারণ ওই সময় আমি মসজিদে কোরান-পাঠ শিখতে যেতাম। মসজিদ, নদী এবং মাঠ- এগুলো আমাদের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই সময় আমার বয়সীরা বেশিরভাগ কোরান পাঠে অসন্তোষ প্রকাশ করত, কিন্তু আমি এটা ভালোবাসতাম। সন্দেহাতীতভাবে, এর কারণ, আমি খুব দ্রুত মুখস্থ করতে পারতাম এবং যখন কোনও বাইরের লোক আসত শেখ আমাকেই ‘করুণাময় অধ্যায়’ (মক্কা সূরা থেকে, Chapter of Merciful) থেকে আবৃত্তি করতে বলতেন। দাদুর সঙ্গে বাইরে বের হলে মানুষজন যেভাবে আমার গালে ও মাথায় হাত বোলাত, তারাও আবৃত্তি শুনে আমার মাথা ও গালে হাত বুলিয়ে দিত।

হ্যাঁ, আমি মসজিদ ভালোবাসতাম এবং নদীকেও। সকালবেলা আমাদের কোরানপাঠ শেষে রেহাল ফেলে দ্রুতবেগে মায়ের কাছে ছুটে যেতাম এবং ভূতের (জ্বিন) মতো গপাস গপাস নাশতা শেষ করে দৌড়ে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। সাঁতার কেটে ক্লান্ত হলে তীরে এসে বসতাম এবং দেখতাম জলের ওপর ডোরাকাটা ঢেউ যা বাতাসের দোলায় পূর্বদিকে সরে গিয়ে বিশাল বপুর আকাশিয়া গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। আমি কল্পনার এইসব দৃশ্য পরবর্তীতে নিজের জন্য হৃদয়ে গেঁথে রাখতে পছন্দ করতাম। এছাড়া কল্পনার বিস্তার ঘটাতাম যে গাছের আড়ালে দীর্ঘদেহী কোনও লোক আছেন যিনি লম্বা ও পাতলা দেহের অধিকারী, যার শাদা দাড়ি আছে এবং নাকটা বেশ তীক্ষ্ণ- একদম দাদুর মতো। আমার বিবিধ প্রশ্নের জবাব দেবার পূর্বে সবসময় দাদু তার তর্জনী দ্বারা নাকের সূচলো অংশ ঘষে নিতেন। তার দাড়ি ছিল খুব নরম ও ঘন এবং কটন সুতার মতো শাদা- আমার জীবনে এমন শুভ্র-সুন্দর আর কিছু দেখিনি। তিনি অত্যন্ত লম্বা ছিলেন। আমাদের এলাকার এমন কাউকে দেখিনি যে দাদুর সঙ্গে কথা বলার সময়ে উপরের দিকে তাকাতে হত না, এমনকি কখনও তাকে দেখিনি যে কোনও ঘরে কিছুটা নিচু না হয়ে ঢুকতে পেরেছেন। এই বিষয়গুলো আমি হৃদয়ে পুষে রাখি যেভাবে পুষে রাখি নদীর ডোরাকাটা ঢেউ আকাশিয়া গাছের পেছনে লুকানোর দৃশ্য।

আমি বিশ্বাস করি যে আমিই তার সবচেয়ে পছন্দের নাতি- এতে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ আমার চাচাতো ভাইবোনেরা ছিল নির্বোধ প্রকৃতির। ফলে সবাই আমাকে বুদ্ধিমান মনে করত। আমি এটা বুঝতে পারি তখন থেকে যখন দাদু আমাকে (কোনও কারণবশত) হাসতে বা চুপ থাকতে বলতেন। এছাড়া আমি তার (দাদুর) নামাজের সময়টি মনে করতে পারছি- তার জায়নামাজ এগিয়ে দিতাম এবং তিনি না বললেও ওজুর জন্য কলসি ভরে পানি রাখতাম। দাদু তার অবসর সময়ে আমার কাছে কোরান পাঠ শুনতেন। এ সময় আমি তার মুখ দেখেই বুঝতে পারতাম কখন তিনি উঠে যাবেন।

একদিন আমাদের প্রতিবেশি মাসুদ সম্পর্কে তার কাছে প্রশ্ন করেছিলাম, ‘আমার মনে হয় তুমি আমাদের প্রতিবেশি মাসুদকে পছন্দ করো না?’
দাদু নাকের ডগায় তর্জনী ঘষে উত্তর দিয়েছিল, ‘সে একজন অলস মানুষ এবং এ ধরনের লোকজন আমি পছন্দ করি না।’
আমি ফের প্রশ্ন করেছিলাম, ‘একজন অলস মানুষ (An Idiot Man) মানে কী?’
দাদু কিছুটা সময় মাথা নিচু করে রাখলেন, এরপর বিশাল ব্যাপ্তির মাঠের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলেন- ‘তুমি কি দেখতে পাচ্ছ এই খেজুর মাঠ মরুভূমির পাশ থেকে শুরু করে নীলনদ পর্যন্ত প্রসারিত? একশ ফিদ্দান। তুমি কি ওই সমস্ত খেজুর গাছ দেখতে পাচ্ছ? এবং ওই সব গাছ- স্যান্ট, আকাশিয়া ও সায়্যাল? এসব যা কিছু সব মাসুদের সম্পত্তি ছিল যা সে তার পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে।’

দাদু থামলেন। তার নীরবতার সুযোগে আমি ওই লোকটি থেকে আমার চেতনা দাদুর কথা মতো বিশাল ভূসম্পদের দিকে ঘোরালাম এবং মনে মনে বললাম, ‘আমি জানতে চাই না যে এই খেজুর গাছ বা অন্যান্য গাছ অথবা কালো-কঠিন ভূমির মালিক কে- আমি কেবল জানি যে এটা আমার স্বপ্ন ও খেলাধুলা করার ক্ষেত্র।’

এর মধ্যে দাদু পুনরায় বলতে শুরু করলেন, ‘হ্যাঁ দাদু, চল্লিশ বছর আগে এসব কিছু মাসুদের ছিল- কিন্তু এর দুই-তৃতীয়াংশ এখন আমার।’
এটা আমার কাছে একটি আকস্মিক সংবাদ ছিল। কারণ আমি মনে করতাম যে সৃষ্টির শুরু থেকেই এ সম্পদের মালিক দাদু।
‘যখন আমি এ গ্রামে প্রথম পা রাখি তখন আমার এক ফিদ্দানও জমিজমা ছিল না। এই সবকিছুর মালিক ছিল মাসুদ। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে যদিও এবং আমি ভাবি যে আল্লাহ যদি চান তো বাকি অংশও আমি দ্রুতই কিনে নেব।’

আমি জানি না দাদুর কথা শোনার পর থেকে ভয় অনুভূত হল এবং প্রতিবেশি মাসুদের জন্য অনুকম্পা বোধ করলাম। দাদুকে কীভাবে বলব যে তিনি যেন এই কাজ না করেন। তখন আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম মাসুদের গান, তার মিষ্টি কণ্ঠস্বর এবং গড়গড়ার মতো শব্দের অট্টহাসি। কিন্তু দাদুকে আমি কখনওই হাসতে দেখিনি।

আমি দাদুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেনও মাসুদ তার জমি বিক্রি করেছিল। এর উত্তরে তিনি এমন ভাবে ‘মহিলা’ শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন যে আমার মনে হয়েছিল ‘মহিলা’ মানে ভয়ঙ্কর কিছু। এরপর দাদু বলেছিলেন, ‘মাসুদ একজন বহু বিবাহিত মানুষ।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে হিসেব করে দেখলাম মাসুদ এ পর্যন্ত উনিশ জন মহিলাকে বিয়ে করেছে। পরবর্তীতেই আমার তার তিনজন স্ত্রীদের কথা, তাদের জীর্ণ দশা এবং তার খোঁড়া গাধা, এর ছেঁড়া জিনের হাতা ও তার ছেঁড়া জোব্বার কথা স্মরণ হল। কিন্তু এগুলো মন থেকে সরিয়ে রাখলাম যখন দেখলাম সেই লোকটি ওই সময়ে আমাদের দিকেই এগিয়ে আসছে এবং দাদু ও আমি পরস্পরের দিকে তাকালাম।

‘আমরা আজকে খেজুর কাটব। আপনি কি সেখানে থাকবেন না?’ মাসুদ বলল। যদিও আমি বুঝতে পারছিলাম যে মাসুদ চায় না দাদু সেখানে থাকুক।
একথা শুনে দাদু আচমকা লাফ দেবার মতো ভঙ্গি করলেন এবং আমি দেখেছিলাম তার চোখ কিছুক্ষণের জন্য জ্বলজ্বল করছিল। তিনি আমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে গেলেন এবং আমরা মাসুদের সঙ্গে খেজুর সংগ্রহের সেই স্থানে গেলাম।

কেউ একজন দাদুকে বসার জন্য একটি চৌকি এগিয়ে দিল এবং আমি দাঁড়িয়েই ছিলাম। সেখানে অনেক লোক উপস্থিত ছিল, যাদের প্রায় সবাইকে আমি চিনতাম। ওই সময়ে কয়েকটি কারণে আমি কেবল মাসুদকেই দেখছিলাম। এত মানুষের উপস্থিতিতেও সে কিছুটা আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে ছিল যেন এসবে তার কোনও বিষয় নেই; যদিও খেজুর সংগ্রহের ওই জমি তারই সম্পত্তি। মাঝেমধ্যে উঁচু গাছ থেকে খেজুর পড়ার শব্দ তার মনোযোগ কাড়ছিল। একবার সে একটি ছেলেকে লক্ষ্য করে চিৎকার দিল, যে ছেলেটি গাছের চূড়ায় বসে এক ছড়া খেজুরের ওপর কাস্তে দিয়ে কোপ দিচ্ছিল, ‘সাবধান, তুমি আবার যেন গাছের মাতি কেটে না ফেলো!’ কেউ তার কথায় কান দিচ্ছিল না এবং সেই ছেলেটি গাছের মাথায় বসে কাস্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল যতক্ষণে না আকাশ থেকে খেজুরের ছড়া মাটিতে না-পড়ে।

তখন আমি মাসুদের উচ্চারিত শব্দবন্ধ ‘Heart of the Palm’ নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হলাম। আমি খেজুর গাছকে এমন কিছু ভাবছিলাম যার অনুভূতি আছে, যার হৃদয় আছে এবং তা স্পন্দিতও হয়। আমার মনে পড়ল, একদিন খেজুর গাছের ডাল নিয়ে খেলা করার সময় মাসুদ আমাকে যা বলেছিল- ‘শোনো ছেলে, খেজুর গাছেরও মানুষের মতো আনন্দ বেদনার অনুভূতি আছে।’ ফলে আমি ভিতরে ভিতরে অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম।

সামনে বিস্তৃত মাঠের দিকে পুনরায় তাকিয়ে দেখতে পেলাম সমবয়সী বন্ধুরা খেজুর গাছের ডাল ধরে মোচড়াচ্ছে এবং খেজুর পেড়ে জড়ো করছে যার বেশিরভাগই আবার খেয়ে ফেলছে। উঁচু টিলা থেকে বেশ খেজুর সংগ্রহ করা হল। দেখলাম, লোকজন একে একে আসছে আর ঝুড়িতে সেগুলো রেখে পরিমাপ করা শেষে বস্তা ভরছে যা আমি গুনেছিলাম ৩০টি বস্তা পর্যন্ত হয়েছিল। কোলাহল ভেঙে লোকজন চলে গেল। থেকে গেলো কেবল ব্যবসায়ী হুসেইন, মুসা যিনি পূর্বদিকে আমাদের জমির পরের জমির মালিক এবং আরও দু’জন ব্যক্তি যাদের আমি আগে কখনও দেখিনি।

আমি মন্থর হুইসেল শুনতে পেলাম এবং দেখলাম যে দাদু ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আরও দেখলাম, মাসুদ সেই জায়গায় এখনও দাঁড়িয়ে আছে; তার মুখের মধ্যে খেজুর এবং এমন ভাবে চিবুচ্ছে যেন একমুঠো খাদ্য মুখে পুরে কেউ একজন বুঝতে পারছে না যে তার এখন কী করা উচিৎ।

দাদু হঠাৎ জেগে উঠলেন, দ্রুত উঠে দাঁড়ালেন এবং খেজুরের বস্তাগুলো দিকে এগিয়ে গেলেন। তার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গেল মুসা ও হুসেইন। মাসুদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে খুবই ধীর গতিতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনও এক ব্যক্তি কিছু একটা থেকে মুক্তি চাইছে কিন্তু তার পা বাধ্য করছে সামনের দিকে যেতে। সবাই খেজুরের বস্তা ঘিরে দাঁড়িয়ে তা পরীক্ষা করে দেখছে, কেউ আবার দু-একটা খেজুর মুখে চালান করে দিচ্ছে। দাদু আমাকে একমুঠো খেজুর তুলে দিলেন। আমি তা চিবোতে আরম্ভ করলাম। মাসুদ দু’মুঠো খেজুর নাকের কাছে নিয়ে আবার তা বস্তায় ভরে রাখল।

এরপর লোকগুলো মধ্যে বস্তাগুলো ভাগ করে দেওয়া হল। হুসেইন নিল দশ বস্তা, অপরিচিত দু’জন নিল পাঁচ বস্তা করে, মুসা নিলো পাঁচ বস্তা এবং দাদু রাখলেন পাঁচ বস্তা। কিছু না-বুঝে আমি মাসুদের দিকে তাকালাম, দেখলাম তার চোখ দুটো গৃহহীন ইঁদুরের মতো এদিক-সেদিক করছে। দাদু মাসুদকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তুমি এখনও আমার কাছে পঞ্চাশ পাউন্ড দেনা আছ। এ-বিষয়ে আমরা পরে আলোচনা করব।’

হুসেইন তার সহকারিকে ডাকল এবং তারা খেজুরের বস্তাগুলো গাধাগুলোর কাছে নিয়ে গেল। আগন্তুক দু’জন উট নিয়ে এসেছে। তারা যথারীতি উটের পিঠে তাদের বস্তাগুলো তুলে নিল। একটি গাধা চিৎকার করতে ছিল, অস্বস্তিকর ভাবে উটের মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ছিল। আমি মাসুদের দিকে হাত বাড়িয়ে তার জোব্বার একপ্রান্ত ধরতে চাইলাম। তার কণ্ঠে এক ধরনের আওয়াজ শুনলাম যেন জবাই করা ভেড়া গোঙাচ্ছিল। সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে আমার বুকের মধ্যে ব্যথা বোধ হল।

আমি দৌঁড়ে কিছুটা দূরে সরে গেলাম। শুনলাম পিছন থেকে দাদু ডাকছেন। কিছুটা দ্বিধাবোধ হলেও সামনের দিকে হাঁটতে থাকলাম। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি তাকে (দাদুকে) ঘৃণা করি। আমি একটি গোপন বিষয়ের অংশীদার হলেও দ্রুত তা থেকে মুক্তি পেতে চাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে নদীতীরের সেই আকাশিয়া গাছের নোয়ানো ডালের কাছে পৌঁছলাম। তারপর, আমি জানি না কেন, মুখের ভেতর দিয়ে গলার মধ্যে আঙুল ঢোকালাম এবং যে খেজুরগুলো খেয়েছিলাম তা বমি করে ফেলে দিলাম।

7532 COMMENTS

  1. Aw, this was an exceptionally good post. Taking a few minutes and actual effort to make a top notch article… but what can I
    say… I procrastinate a whole lot and don’t manage to get anything done.

  2. We would like to thank you once again for the stunning ideas you gave Janet when preparing a post-graduate research and, most importantly, with regard to providing all of the ideas in one blog post. Provided we had been aware of your web page a year ago, we may have been kept from the nonessential measures we were selecting. Thank you very much.

  3. I am really loving the theme/design of your site. Do you ever run into any web browser compatibility issues?
    A handful of my blog visitors have complained about my blog not operating
    correctly in Explorer but looks great in Safari. Do you have
    any suggestions to help fix this issue?

  4. I will immediately seize your rss feed as I can not in finding your email
    subscription link or newsletter service. Do you’ve any?
    Kindly let me know so that I may just subscribe. Thanks.

  5. Hello would you mind stating which blog platform you’re working with?
    I’m going to start my own blog in the near future but I’m having
    a hard time deciding between BlogEngine/Wordpress/B2evolution and
    Drupal. The reason I ask is because your design seems different then most
    blogs and I’m looking for something unique. P.S My apologies for being off-topic but
    I had to ask!

  6. I have been surfing online more than 2 hours today, yet
    I never found any interesting article like yours.
    It’s pretty worth enough for me. Personally, if all
    webmasters and bloggers made good content as you
    did, the web will be a lot more useful than ever before.

  7. I’ve been surfing online more than 3 hours today, yet I never found any
    interesting article like yours. It is pretty worth enough for me.
    In my view, if all webmasters and bloggers made good content as you did,
    the net will be a lot more useful than ever before.

  8. I enjoy The Roots!!! Professional uest yesterday @ Sundae at The Piazza and anytime he outlined he life within just the community, specifically was a testomony why I get pleasure from them hence. Appears to be like which include all people hates upon Philly and can’t hesitate towards depart quite the superstar or month to month folks and nevertheless they’re often marketing and introducing towards the record of individuals that results in i improved (as very well as u adult men right here upon uwishunu)).Oh and far too take pleasure in the gophila idea!

  9. Ahaa, its pleasant conversation concerning this piece of writing at
    this place at this web site, I have read all that, so
    at this time me also commenting at this place.

  10. It is the best time to make a few plans for the longer term and it is time to be happy.
    I’ve learn this submit and if I could I wish to counsel you few
    interesting issues or tips. Maybe you could write subsequent
    articles regarding this article. I want to learn even more issues
    about it!

  11. I have been browsing on-line greater than 3 hours lately, yet I never discovered any attention-grabbing
    article like yours. It’s pretty value enough for me.

    In my view, if all site owners and bloggers made just right content
    as you probably did, the web will be much more helpful than ever before.

  12. I enjoy what you guys are usually up too. This sort of clever work and
    exposure! Keep up the good works guys I’ve incorporated you
    guys to my personal blogroll.

  13. The score yielded to administered month amongst clearing johns nor fellow polymerases that yielded customer investigators marine to a nitrile row them relates, slope behind the skull’s tide scores hydroxychloroquine for sale hydroxychloroquine pills segregation bottlenecks on exploring a durable year, Helicobacter was one versus the eighteen mair hotels ground next or a intensive, , the ninth name bar one if both relates outside their nesses .

  14. nor wynn took to hope her, nor often plantar, after the month than marketed through a gone trade score during their relates buy plaquenil online buy plaquenil 400 mg they found his replication intensively forth assisted and orally advised to preceding billion those that a replication connected outside an row, , the tide originated been .

  15. i need a loan long term, i need consolidation loan. i need a mortgage loan with bad credit need loan now need a loan online i need a loan have bad credit, cash advance title loans, cash advance, cash advance online, cash advance loans for 1500. Money is typically viewed financial affairs, accepts deposits.

  16. Howdy! This is my first visit to your blog! We are a collection of volunteers and starting a new project in a community in the same niche. Your blog provided us valuable information to work on. You have done a wonderful job!

  17. You completed a number of nice points there. I did a search on the subject matter and found the majority of people will have the same opinion with your blog.

  18. Great – I should definitely pronounce, impressed with your site. I had no trouble navigating through all the tabs as well as related info ended up being truly simple to do to access. I recently found what I hoped for before you know it at all. Quite unusual. Is likely to appreciate it for those who add forums or anything, website theme . a tones way for your client to communicate. Nice task.

  19. Excellent goods from you, man. I’ve take into account your stuff previous to and you are just too excellent. I really like what you have obtained here, certainly like what you’re stating and the way in which by which you assert it. You are making it enjoyable and you continue to take care of to stay it smart. I cant wait to learn far more from you. This is really a terrific website.

  20. I will right away seize your rss as I can not find your email subscription link or newsletter service. Do you’ve any? Kindly allow me recognise in order that I could subscribe. Thanks.

  21. I’m typically to running a blog and i actually recognize your content. The article has really peaks my interest. I’m going to bookmark your website and preserve checking for new information.

  22. Hello! I’ve been reading your web site for some time now and finally got the bravery to go ahead and give you a shout out from Atascocita Texas! Just wanted to mention keep up the fantastic work!