বিকেল-আকাশে ‘দৃষ্টিপ্রদীপ ’ উপন্যাসের আশ্চর্য মেঘেরা শেয়ালদাস্টেশনের থেকে বনগাঁলোকাল ছেড়ে দিল … ভিড় কামরায় কে আমি , কে সীতা, কে যে  দাদা , কে বা পাগল -হয়ে -যাওয়া বাবা আর ছেঁড়া -শাড়ি- পরা মা আমার ? ট্রেনের হু হু - হু হু- হু হু - জানলা গুমা- বিড়া- হাবড়ার বিড়িটানা চাঁদ  হারমোনিয়াম বাজিয়ে রসের ভিয়েন...
রাতের আকাশে জ্বল জ্বল করে আলোরবাতি মনে হয় আলোর নেশায় মত্ত কালো এই মহাশূন্য ভোরের পাতায় জমে জল রোদের আলোয় চোখ ফোটে ঘাসেদের রেল লাইনের ধারে সারি সারি যেসব দোকান, তাদের ব্যস্ততা বাড়ে,রোদের তেজ বরাবর, উনুনের আঁচ, ঝেঁটিয়ে ফেলা ধুলো, রাস্তা জুড়ে ছিটিয়ে থাকে জলের ছোপ,আর মাটির গন্ধ এভাবেই সবটুকু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় শুরু হয় ভোরের আজান।
আপেল, ছুরি, জলের পাত্র, না-খোলা খবরের কাগজ আরো কিছু অনাবশ্যক দৃশ্য আর আছো তুমি-নেই ফলের খোসা ছাড়ানোর দৃশ্যের মত— খুব সাবধানে, সন্তর্পণে চেঁছে নেওয়া ফলের অযথা মাংস যেন না ফলের খোসার সঙ্গে যায়… যে-তোমায় সমীচিন করে তুলেছে সে এই ছুরিবিদ্ধ ফলের গায়ে সকালের গমগমে রোদ  
যেটুকু আলো এসে পড়ে রিক্সার গায়ে আমি তার হিসেব লিখে রাখি বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়া আর গমগম করে না স্ট্যান্ড ছাতিমের গন্ধে গলিপথ ভ্রমণ-- গোপনে নেশা ছাড়ানোর পোস্টার নেই আগে-পরের মধ্যে বহুতল দীর্ঘশ্বাস বসন্ত এসে গেলে মনে হয় মানুষ আরো একা হয়ে গেছে!
কত ছদ্মবেশ জানে তোমার প্রতিভা অহংকারে নষ্ট এক নিষেধের মতো নেশায় আকুল হই। কত বিপ্রতীপে ঘাই মারে মাছের স্বভাবে মন ডুবে ডুবে জল খাওয়া চরিত্রের পেটে এত বুদ্ধি ধরো তবু এত রাগ সামলাও কী করে! তোমাকে নেব না ভেবে টেনে আনি ছোঁব না আঘাত তবু দাও কলতলায় যেভাবে বালিশ পেতে ধুয়ে দিলে মুখ্যুসুখ্যু ভ্রমে অন্ধ চোখের...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল, আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল। শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায় হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা, তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায় হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা। তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই বলতে তো, ঘটনার...
কবিতা লিখে খুব বেশি হাসিখুশি থাকা সম্ভব নয় কবিতার মধ্যে এক ধরণের বিপন্নতাবোধ আছে হিংস্র জন্তু যেমন আগুনকে ভয় পায় তেমনি সুখী মানুষ কবিতাকে এড়িয়ে চলে কবিতাগ্রস্ত লোকেদের ভর হয় ভূতে পাওয়ার মত তারা আছাড়ি পিছাড়ি লেখে কল্পনা করে চরমতম অসুখের কবিতার মধ্যে যে শোক যে আঘাত যে মাথাব্যথা সেসব লিখে লিখে কত কবির যে ঘর সংসার ভেসে গ্যাছে সে খেয়াল তাঁদেরই...
এখন আর কিছুই পড়ে নেই পোড়া বসন্ত সারারাত স্মৃতিহীন অতীতের কথা বলার চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না দেওয়ালে তার পিঠ ঠেকে গেছে ! বুকের ভিতরে বাতাস ছিল এখন সে বাতাস অন্ধকার শীতলতম হিম! তোমার সঙ্গেও আর দেখা হবে না কোনওদিন লাস্য হারাতে হারাতে তুমি আজ লাশ হয়ে গেছ!
যেকটি বৃক্ষের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেছি ক্ষয়িষ্ণু রীতি মেনে, যেকটি প্রার্থনাগীতি স্বরলিপি খাতা জুড়ে আলো, যেকটি হননসাধ একান্তে অপূর্ণ থেকে গেছে─ সেসব অধ্যায় যোগ করে করে পৃষ্ঠা গুনে গুনে তুমি জীবনের অদাহ্য আখ্যান রচেছিলে। এই যে বিজন রাত কিছুই দেখে না খুঁজে, সঙ্গোপনে শুধু স্থির সর্বনাশ হয়ে জেগে থাকে স্বপ্নের ভেতরে─ মেঘে কুয়াশায় ছাওয়া উঁচু-নীচু অবাস্তব গ্রাম...
অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন। তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী! তোমাকে যে সাকি বলে চেনে সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর! যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়... বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
ঘরের মৃদু আলো নিভে আসে দিনের শেষে পাশাপাশি শুয়ে থাকে দাদু আর দিদা ঘুমানোর আগে দিদার কত যে অভিযোগ ভেসে আসে— দাদু তেমন কিছুই বলে না। সমস্ত কথার শেষে দিদা বলে ওঠে “আমি যেন ঠিক চলে যেতে পারি তোমার যাবার আগে” দাদুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কেবল একটিই কথা “কেন যে এইসব বলো... সকালে উঠতে হবে...
শোকের কাছ ঘেঁষে অতীত নদীরা থেমে যায় আঘাত ছোঁয়াচ পেলে ভেঙে যাবে মেঘেদের বাড়ি— সেও বুঝি জল হবে, ধুলো হবে তুচ্ছ শরীর; খাঁচারা বদলে যাবে প্রতি জন্ম-অধ্যায় শেষে। কারা যে বসেছে এসে নির্বাক সময়ের কাছে একা মানুষের অন্ধকারে ঘুম আনে সমস্ত মৃতস্বর, প্রহরের অপেক্ষা শুধু— এই বুঝি সাঙ্গ হবে খেলা কীভাবে নিভে যাবে তারাদের সাবেক উৎসব। স্রোতেরা...
আর কত আলোকবর্ষ ! সকাল দুপুর মধ্য রাত বিরামহীন চলতে হবে আমি জানিনা। নিজের কোন লক্ষ্য নেই আলস্য মাখা কয়েকটি ছোট বড় চোখ ধানকুটি মাড়ানো বলদের মতো আমায় ছুঁটিয়ে বেড়ায় কেন আমি জানিনা। কাঁধের জোয়ালের কথা মনে পড়লে আমার আরও খিদে পায় অথচ ঘুম পায়না, ঘুমের দুয়ারে অক্লান্ত আমি... দন্ডি কাটি কেন আমি জানিনা। শুধু আমি এটুকু জানি যে এসব জানার জন্যই আমি...
একটা উত্তরকে প্রতিউত্তরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাই অপরাধের সূত্র ধরে কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটি সন্তর্পণ জানালার বিচারক্ষেত্রের দিকে ঘুরে দেখি স্পর্শের দক্ষিণ, থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে সিলিং ফ্যান কণ্ঠার মৃদু হাড়ের ওপর জমে আছে অস্পষ্ট আঙুল পোড়া মেঘের ছায়া এসে লাগে কাঁচের ওপর আমি মুখ নামাই, জিভের করুণা খুঁজি, খুঁজে দেখি পারা ওঠা আয়নার ওপর অবশ্যম্ভাবী...
নিজের মতো এক সন্ধ্যায় কেটে ফেলি হাতের শিরা ভ্রম এসে আমাদের ন্যুব্জ করে গেল তার দস্তানার ভিতর লুকোনো ছিল মেঘের পাহারা তারও ভিতর ক্রোধ, মামুলি অস্ত্র চাঁদের দুধ পড়ে পুড়ে গেছে শস্য। আমি সেদিকে যাইনি আজ ধোঁয়া-ওঠা সেই প্রান্তর বীভৎস এক অলৌকিক হয়ে আছে নিজস্ব শিল্পের মতো কেটে ফেলেছি হাতের শিরা। শ্বাস বুজে আসার আগেও একবার...
নরম মাটির ভেতর কেবল মিলিয়ে যাচ্ছো তুমি। মিলিয়ে যাচ্ছে তোমার অস্তিত্বের উড়ন্ত ডানা। রৌদ্রজ্জ্বল সমস্ত দিন বসে আছে তোমার সরলতার পাশে। অথচ তুমি মেলে দিয়েছো শুকনো গাছের ডালে একফালি জটিল অন্ধত্ব। তোমার কাঠবেড়ালি রঙ, দৃষ্টিহীন চোখ ও লুকোচুড়ির সমস্ত সমীকরণ আমাদেরকে একটু একটু করে বিকারহীন নদীর কাছে বসতে শেখায়।...
সাউথ সিটি কলেজের সামনে ডিসেম্বরে যে বর বউ দশটাকায় বারোটা গোলাপ দিত, মনে হতো তারা দেবদেবী। কোন পদ্য লিখে তাদের তুষ্ট করা যেত যদি জানতাম, তাদের জন্য লিখতাম দু এক লাইন। আচ্ছা তুমি প্রেম বলতে কী বোঝ? হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট, পায়ে পা, গায়ে গা... কী বোঝ তুমি? এ চরাচরে প্রেম বলে কিছু নেই জেনে...
উড়ালের আগে যতটা আড়াল যেভাবে গান মিহি হয়ে আসে রাতের দক্ষিণে নামে বেনামে চিনে নিতে থাকি মানচিত্র সুড়ঙ্গেরও নিচে, যেখানে টান জন্ম নেয় ডাকে, ডাকে, ডাকতেই থাকে আর কত নিচে নামবো! প্রতিবর্তে স্পষ্ট হই রোজ
কনিষ্ঠ সময় চিনি। আমারই বরেণ্য ডালে পাখি জ্যোৎস্নায় ডানা মেলে, শালবনে আলো মাখামাখি— অবাধ মৈথুন শেষে ফেরে। ফের, উড়ে যায় বনে বিষাদ প্রস্তর ভেঙে পথ তৈরি করেছে যাপনে… কখনও রক্তাক্ত তির, ক্রৌঞ্চশাবকের ডানা ছিঁড়ে বেপথু ও পরাহত। শবরেরই আকন্ঠ নিবিড়ে গভীর আশ্রয় চায়… চায় শব্দে উচ্চারিত হোক বহুবর্ণ সময়ের ওড়াউড়ি স্তব্ধ করে, শ্লোক— সে-শ্লোক বন্ধক রেখে সময়ের...
জাল যদি বুনে নিতে হয় তবে দেরি কিসের মাছেরা যে প্রস্তুত সমর্পণে সে পাল্লা হোক কি রুই মৌরলা বোকা স্ক্রিন, পণ্য নীতি রঙিন চশমা, জিপিএস আমরাও জালের তলায়...