কতকিছু প্লাবিত হয়ে যায় বাবাকে দেখেছি ভাসমান নৌকোর মতো ভেসে যেতেন এঘর ওঘর, শাঁখের ধ্বনি শুনে কী ভাবে সন্ধ্যা হয়- রক্তাভ আকাশ, তাও দেখেছি। শুনেছি এই নৌকো, এই শাঁখ নাকি বংশের পরম্পরা। বাজার থেকে মরামাছ এলে হাবুডুবু খেতো উঠোনের জলে, তা দেখে বঁড়শির মতোন হাসতেন ঠাকুমা, সাদা থান ঠেলে ঝুলে পড়তো জীবনের অস্তরেখা। আমরা যারা ছোট্টো...
অনেকদিন প্রণাম করা হয় না কাউকে, বৃষ্টির দিনে সাদা জামা পরে, ছাতা হাতে মানুষকে দেখলেই কেমন যেন মাস্টারমশাই বলে মনে হয়... কালো মেঘের মতো দুর্নীতি ছেয়ে আছে আমাদের সবার উপরে; ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, "কোন পথে যাব স্যার... এত বিভ্রান্তি, এত হাতছানি, এত অন্ধকার, কোন পথে যাব স্যার?" - "যে পথে গেলে আয়নার দিকে...
আমার রক্তের মধ্যে আজীবন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়, সমুদ্রের কাছে আমার যাওয়া হয় না খুব একটা। তবু অফিস- বাড়ি, বাড়ি - অফিস করতে করতেই সমুদ্রের ডাক আমার শিরা উপশিরায় কোলাহল কল্লোল তুলে আসে। প্রেমিকার ডাকের মতোই সে ডাক উপেক্ষা করা যায় না।
সুনীল দাসের ঘোড়াটির গায়ে সেঁটে দিই জাদু বাস্তবতা। ফোলানো কেশর নিয়ে তৈলচিত্র ছেড়ে নেমে আসে ঘোড়া। টগবগে যেন এখনই উড়ালে যাবে। চার পায়ে ক্ষুরগুলি কী বলিষ্ঠ লাগে! দাঁড়ানোর ভঙ্গিটিও মহেঞ্জোদারিক। প্রত্ন ঘুম ভেঙ্গে উঠে আসা ঘোড়া অনন্ত ভ্রমনে যাবে বলে মাটি বক্ষে ক্ষুর আঁচড়ায়। বলে, ডেকেছো যখন তবে কাজ দাও। গতিময় ক্ষুরের আঘাতে ধুলোঝড় জন্ম নিলে...
সে যেন খুব সীমান্তবর্তী গাছ শিকড় এপারে ডুবে খানিক ওপারে ফলের বসত ঘিরে যত আলোচনা মাঠের নোনতা মাখে আচমন সারে মালায় প্রশ্ন আসে এর কিছু পরে জ্বালানির ঘ্রাণটুকু পেলে আজ তাকে ফাঁকা জমি চুষে ফেলা বেহিসেবি রোদ ...
প্রতিষ্ঠান আমাদের বাড়িতে দুটো প্রতিষ্ঠান এক আমার বাবা, আর এক আমি, আমাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে যে আহত হয়, সে মা, কোনো প্রতিবাদ করে না শুধু কাঁদে, আমরা সে জল তুলে নিই হাতে অঞ্জলি ভরে ছিটিয়ে দিই আত্মদাহে। আলো আমাদের পরিবারে একটাই কুপি কেরোসিন উবে গেছে পড়ালেখায় কন্যাদায়ে, এখন কখনো কুপির ভিতর আমি ঢুকি কখনো ঢোকে মা কখনো বাবা এভাবেই আলো জ্বলছে ঘরে ...
বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত নিঃশব্দে বহন করি, একা হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার কোনো অন্তিম নেই, জানি- তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায় তার পিছু পিছু একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা... লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...
এই তো ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। পরিবারের সময় বিক্রি করে আমি নিজের জীবন প্রস্তুত করেছি। আমার ছেলেটি কবে বড় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি, বউ বার্ধক্যে উপনীত, সারা ত্বকে দেশভাগের ফাটল এখন! নদী নেই,গাছ,ফেলে আসা জমি তার কাছে যাবো, যেন প্রাচীন পাখিটি, যে সময় ধ্বংস হয়েছে, দূর গ্রহ থেকে পেড়ে আনব আবার। অভিমানের পথ পুষ্পসংগ্রহ। ফুলে ফুলে ঐরাবত একা, ছুটে এল...
রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায় বাইরে বৃষ্টি নামে --- প্রবল বৃষ্টি ঘরে খিল এঁটে দিই শব্দ আসে শব্দ ভাসে শব্দ হাসেও ঘরে তখন একা এবং অনেকে তবুও শব্দ আসে জাগিয়ে রাখে সমস্ত রাত রাতও জেগে থাকে ঠিক নিশাচর পাশাপাশি সেও অস্ত্র শানায় রাত দীর্ঘ হলে ভয়ও লম্বা হয়ে যায় রাতের সব চরাচর চুপ চুপচাপ ঘরে...
সেই কবেকার সোনাঝুরি জঙ্গল থেকে উঠে এসেছিল শব্দটা। তারপর কত মনসামঙ্গল, চন্ডীমঙ্গল পেরিয়ে মৃত্যুগন্ধ শরীরে মেখে, কমলালেবু রঙের দুপুর পেরিয়ে, থ্রি জি কিংবা ফোর জির চক্করে পড়ে ব্ল্যাকহোলের মতো পরিণত হচ্ছিল নির্মম পরিহাসে - শুধু চিলেকোঠায় পৌঁছে যখন চোখে পড়ে গেল ধুলোময় খাট, আমার বাল্যকালের পড়ার টেবিল, ভাঙা রেডিওটাকে দেখে যখন...
আকাশ অংশত বাকিটা না হয় রইল উহ্য ইচ্ছেমত শব্দ রেখো অথবা চুপচাপ সাবধানে চলাফেরা কোরো দৃষ্টির তীক্ষ্মতা মাছের চোখের মত ক্লান্ত কোন বাণে বিঁধবে তাকে? শীতকাল ফিরে এলো ভাস্করের পাতায় পাতায় তারপর কিছু সূত্র অথবা সমীকরণ শুধু মনে রেখো যে পাতা ঝরল অতর্কিতে তার আর পুনর্জন্ম নেই যে আসবে সে নতুন কেউ!
টুইটারে ২৩ লক্ষ ভিউ আরও বেড়ে যাবে, নেতাদের তেজী হুঙ্কার, ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছে গিয়েছে। যার যায়, সে-ই জানে, বাকিরা মাংস ভাত, বাকিরা মাইক, বাকিরা মন্ত্রী আর সেনাপতি হয়— যারা যারা হাঁটছিল, যারা চোখ রাখছিল, দুই মেয়ে, খোলা স্তন, তার নীচে ইনিবিনি, উল্লাস, উল্লাস! যেন ছয়, ফের ধোনি, ভারত না ইন্ডিয়া, শ্রীরাম না ডাকাতিয়া, মেয়েরাই জানে। ধানখেতে যেইখানে, রক্তের ফোঁটা ঝরে, সেইখানে পুরুষেরা নাচছে ভাসানে।...
বেশ কিছু কথা দিয়ে না রাখা ফুল দিতে অপারগ যে শাখা হাত ধরে-থাকা সেই বোবা হাত থাকতে চেয়েও শেষে না থাকা নেশাতুর, বেলাগাম সে রাতে আদুরে ওমের লোভ পোহাতে সোহাগের চৌকাঠ লঙ্ঘন বিবেকের বেমক্কা জেহাদে শীতঘুমে কুয়াশারা খেলাপি ভুলে থাকা মানুষের থেরাপি বসন্তে বিচ্ছেদ বেসোয়াদ অপমান, বোকাদের সেরা ফি! সময়কে হতে দাও নেশাড়ু সংসারে সবাই তো দাবাড়ু শেষ কথা শেষ চাল : কিস্তি মৌত...
স্রোতের মাঝখানে শান্ত ঘূর্ণির মতন নাভি। নাভির মতন দুরারোগ্য গভীর অবসাদ। শুধু দুধ পোড়ার গন্ধে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। শুধু টেবিলক্লথের ওপরে শুকনো চায়ের দাগ দেখে সাহস করে বলেছিলাম, দরজা খোলো, কিছু কিনতে হবে না। আমি আজ টবের শুকনো গাছগুলোর গোড়ায় জল দিয়ে চলে যাচ্ছি। কাল আমি স্নানঘরের আয়না...
তোমার চিঠির কোনও উত্তর দিইনি বলে নিকটের রাধাচূড়া বিরাগ সেধেছে গত দীর্ঘ এক ঋতু। কী বলি প্রণয়চালে? অথবা শোকের মতো অশ্বত্থের ঝুরি নামা দেখে বিগত মৃত্যুর কোনও অনুষঙ্গ মনে পড়ে যদি? স্থিতধী উদ্ভিদজন্মে কার শিকড়ের টান কার চেয়ে বেশি, এই নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হলে কার কাছে বিষমাখা এঁটো হাত পেতে কোন নামে কাকে ডাকি ময়দানে শহিদ...
কথা'কে এমন করে ঠোঁটে রাখা, যেন মনে পড়ে গেছে প্রথম সাক্ষাৎ! জ্যোৎস্নায় মাতাল রাতের বাতাস বাতাসে স্রোতের ভাঙাচোরা, চাঁদ, ভাঙাচোরা বাতুলতা, যেন এ' পৃথিবী একবারে একটিই জোয়ার, একটি মাত্র আবর্তনের সাক্ষী থাকতে চায় এই অবেলায় পরিচিত সকল পূজা হারায় অর্ঘ্যের অধিকার, তবু অন্তরস্থ ঈশ্বর জাগেন! যেন এইবার সময় পক্ষ নেবার, অথচ তোমার আমার অধিকার শুধু, শুধুই নৌকা...
বাবা বলেছিল- পৃথিবী ঠাকুমার মতো সুন্দরী। ছোটকাকু বলেছিল- আমাদের গ্রামে কোনওদিন যুদ্ধ হবে না। দুজনেই মিথ্যে বলেছিল। আমাকে বাঁচাতে? বুড়ি দিদিমণি বলেছিলেন- অঙ্ক শেখ। সব অঙ্ক মিলবেই। জিতেন স্যর বলেছিলেন- রবীন্দ্রনাথ পড়। শান্তি পাবিই। দুজনেই মিথ্যে বলেছিলেন। আমাকে বাঁচাতে? যেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম। চারজনকে আটকে ফেললাম। একটা গুহায়। ভীষণ রাগ তখন। বললাম- কেন মিথ্যে...
দুহাতে দুচোখ নিয়ে ঘুরে বেড়ালাম এতকাল রেটিনা-ওপড়ানো-মণি : সাদা অংশে লাল দানা-দানা... কেউ দেখতে পায়নি তা’; দেখে শুধু অন্ধের অকাল— খিস্তি-মেরে চলে গেছে। বলছে : ‘এ মা, চোখ থাকতে কানা’ বিক্রি-করে-দেব এদের কলকাতার পাহাড়িয়া-বাঁকে... যেখানে মার্কেট-গিরি— উঁচু-উঁচু শৃঙ্গ-শপিংমল... ‘প্রাইস ট্যাগ’ লটকে-প’ড়ে ঝাঁ-চকচকে কাচমোড়া তাকে— শারদীয়া উৎসবের ধুমে— অন্তর্ভেদী, অতন্দ্র, অতল... ঘুরে-ঘুরে উড়ছে কারা সঙ্গীসহ পাকদণ্ডী-বেয়ে... গলি পেলে চান্স-মারছে।...
মানুষকে কতটুকু জানো তুমি ? কী এমন জানো ? মানুষ তো সাজানো বাগানও তছনছ করে দিয়ে চলে যায় দূরে কোনও বনে ভিড়ের ভেতরে থেকে কেউ যা শোনে না সে তা শোনে মানুষ তো ভরা বরিষণে মাঝ নদী পেরোতে পেরোতে একা একা গল্প হয়ে যায় তুমি শোনো গল্প থেকে হয় ইতিহাস যা কিছু বাস্তবে নেই সেই মাটি সেই জল...
বর্ষায় বাড়িঘর ভেসে যায় জাহাজের মতো।  পাখিদের জায়গায় মেঘেরা দুপুর থেকে ওড়ে।  এইসব স্মৃতিদের রেখে দেয় যারা অক্ষত,  বারবার চাইলেও ফিরতে পারে না বন্দরে।  পাটাতন ভেবে জল বাড়ির বারান্দায় জমে।  নাবিকের লংকোট কেঁপে যায় হাওয়ার দাপটে।  শরীর ধোয়ার পর যত দ্রুত আর্দ্রতা কমে,  ঘরে মেলে দেওয়া শাড়ি ততটা আপন হয়ে ওঠে।  বাতিঘর সেজে দূরে জ্বলে ওঠে শহরের...