মোহামেদ মাখজাঁগি

3583
16987


মোহামেদ মাখজাঁগি | জন্ম ১৯৫০ সালে

মোহামেদ মাখজাঁগি একজন মিশরীয় লেখক ও চিকিৎসক। তিনি ১৯৫০ সালে মিসৌরি শহরে জন্মগ্রহন করেন। মেডিসিনে পড়াশোনা সম্পন্ন করে সাইকোলজিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয়ের সময় তিনি ইউক্রেনের কিয়েভ শহরে অবস্থানরত ছিলেন। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘মেমোরিজ অব এ মেল্ট-ডাউন’ লিখেছিলেন। সাংবাদিক এবং লেখক হওয়ার নেশায় মাখজাঁগি চিকিৎসা পেশা ছেড়ে দেন। কায়রোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি কুয়েতি শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন আল-আরাবির জন্যে কাজ করেন। তাঁর বেশ কয়েকটি ছোটগল্প সংকলন এবং উপন্যাস রয়েছে।

গল্পটি ইয়াসমিন হানুস-এর ইংরেজি অনুবাদ হতে বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে।

ভাষান্তর | মাইনুল ইসলাম মানিক

ছন্দোময় ব্যায়াম

সকাল-সন্ধ্যা কারফিউ জারির কয়েকদিনের মধ্যেই একটি আনন্দঘন পরিবারের সদস্যগণ অনুভব করলেন, তারা ফুরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অ্যাপার্টমেন্টে খাদ্য, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জামসহ জরুরিসেবার সকল উপকরণই রয়েছে। এমনকি পড়াশোনা, টিভি দেখা, ভিডিও প্রোগ্রাম, ইন্টারনেটসহ পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থাও। ল্যান্ডফোন বা ব্যক্তিগত সেলফোনের কথা তো বলাই বাহুল্য। তবুও একটা কিছু তাদেরকে সীমাহীন ক্লান্ত করে তুলল, তাদেরকে ক্রমান্বয়ে এমন একটা অনুভূতির দিকে তাড়িত করল যেন তারা একটা বন্দিজীবন যাপন করছে। তাদের কাছে মনে হতে থাকল, তারা একটি প্রশস্ত অন্ধকূপে বসবাস করছে। এই অন্ধকূপের ভেতর তারা ধীরে ধীরে আরেকটি বিষয় লক্ষ করল- তাদের সবার দেহ খুবই দ্রুততার সাথে এমন মুটিয়ে যাচ্ছে যেন সময় তাদের শরীরে চেপে বসেছে। কোনো রকমের বিনোদনই তাদেরকে প্রাণবন্ত করতে পারছিল না। উপরন্তু বারবার কানের কাছে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসছিল আর সেসব শব্দ কল্পনাশক্তিতে বারবার স্নাইপার অপারেশন ও হত্যাকাণ্ডের রক্তাক্ত দৃশ্যের অবতারণা করছিল। পরিবারের সদস্যরা পরস্পরকে ভীতিকর এই পরিস্থিতিতে সৃষ্ট হতাশার বিষয়ে অবগত করল।

কীভাবে এই ভীষণ রকমের মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকে, হতাশার নরক থেকে রেহাই পাওয়া যায়, তা নিয়ে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন পরামর্শ করল। সবার পরামর্শের মধ্যে বাবার দেয়া পরামর্শটি পরিবারের সবার মনে ধরল। তাদের বাবা জানায়, একজন অ্যাথলেট হিসেবে তিনি তরুণ বয়সে যখন যেখানে সম্ভব হতো, একটি আরব্য ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসুরক্ষা করতেন। পরিবারের সবাই যার যার মতো করে এই ধারণাটির প্রয়োগ শুরু করে। খুব দ্রুতই পুত্র ও কন্যার ব্যায়ামপদ্ধতি সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠল। তাদের ব্যায়ামের মধ্যে এক ধরনের ছন্দ ছিল। তাছাড়া এর জন্যে খুব সামান্য জায়গাই যথেষ্ট ছিল। প্রথমে তারা কোনো আনন্দময় সঙ্গীতের সুরের সাথে ব্যায়াম করত। তাদের একজন ব্যায়াম করত এবং অন্যজন সঙ্গীতের সুর তুলত। ধীরে ধীরে অন্যরাও তাদের এই ছন্দোময় ব্যায়াম অনুসরণ করে এবং তাদের সাথে যোগ দেয়। এমনকি তাদের বাবা-মা পর্যন্ত, যদিও প্রথমে কিছুটা জড়তা ছিল তাদের মধ্যে। ধীরে ধীরে এই ছন্দোময় ব্যায়াম ও সঙ্গীতের সুর তাদের বন্দিদশার ভেতর অন্যরকম এক স্বাধীনতা হয়ে ওঠে। যখনই তারা অবসর সময় পেল, এই ব্যায়ামগুলোকে তারা নিজস্ব ছন্দে সন্নিবদ্ধ করে নিতে লাগল। সকালে দাঁত মাজার সময়, মুখ ধোয়ার সময়, প্রিন্টারে বেরিয়ে আসা পত্রিকায় চোখ বুলানোর সময়, বিষণ্ন সময়ে কফির পানি ফোটানোর সময়, দুপুরের খাবার টেবিল গোছানোর সময়, টেলিভিশনের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে এক পলক চোখ বুলিয়ে নেয়ার সময় তারা কিছুটা নাচুনে ঢংয়ের ব্যায়াম চালিয়ে যেতে লাগল। আদতে তাদের ছন্দোময় ব্যায়াম শুধু দাঁড়ানো অবস্থায়ই সীমাবদ্ধ থাকল না। তাদের কেউ কেউ বসে বসে এমনকি ঘুমানোর আগে শোয়া অবস্থায় পর্যন্ত ব্যায়াম চালিয়ে যেতে লাগল।

কোনো এক সময় মনে হচ্ছিল, পুরো অ্যাপার্টমেন্টের আসবাবগুলোও যেন ছন্দের তালে নাচছে। বিস্ফোরণের ভয়ংকর শব্দের মাঝে, স্নাইপারে গোলাগুলির সময়, বিষণ্ন সংবাদের সময় এমনকি ক্রমবর্ধমান কারফিউয়ের সময়ও তা চলতে থাকল। চারতলার এই অ্যাপার্টমেন্টের পরিবর্তনটুকু কোনোভাবে বিপরীত পাশের দালানের কারো দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। বিষয়টি পরিষ্কার নয় ঠিক কীভাবে দেখতে পেল, কারণ এমনকি সবচেয়ে কাছের জানালা থেকেও খোলা চোখে কেউ বুঝতে পারবে না জানালার পেছনে কী ঘটছে। একটা বিষয় পরিষ্কার যে, পরিবারের মা যখন ছন্দের তালে তাল মিলিয়ে ব্যায়াম করতে করতে টিভি দেখছিলেন, ঠিক তখনই জানালার গ্লাসের একটি নির্দিষ্ট জায়গাকে লক্ষ্যবস্তু ধরে ভেতরের টিভিস্ক্রিনের ঠিক মাঝখানে কাঁপিয়ে দেয়ার মতো একটা গুলি অনুমান করে চালানো কখনোই সম্ভব নয়। তিনি বসে ছিলেন, তার হাত দুপাশে প্রসারিত করছিলেন, গুটিয়ে নিচ্ছিলেন, আবার প্রসারিত করছিলেন, আবার গুটিয়ে নিচ্ছিলেন আর বাহু নুইয়ে নিতে নিতে ‘লেফট, রাইট, লেফট, রাইট’ পুনরাবৃত্তি করছিলেন।

গুলি যখন রাঁধুনির পেটে আঘাত করল, সস ও জুসের বোতল উড়িয়ে নিল, ঝনঝন আওয়াজে পাতিল গড়িয়ে নিল, রান্নাঘরের বাতিটি বিচূর্ণ করে দিল, যখন ধূসর জানালার কাচ ভেঙে তার ভেতর দিয়ে পোড়া প্লাস্টিকের গন্ধ বেরিয়ে যেতে সাহায্য করল, তখন মা বসে বসে রান্নার অনুষ্ঠান দেখছিলেন। সুযোগ বুঝে কেউ একজন বিপরীত পাশের উঁচু জানালা বা ছাদ হতে স্নাইপার রাইফেলে গুলি চালিয়েছেন। স্নাইপারের একটিমাত্র গুলি পরিবারের পাঁচ সদস্যের বুকের ভেতর বাজতে থাকা সব সুর থামিয়ে দেয়। একজন ঘাতক এই ঘরটিতে চলমান সকল ছন্দোময় ব্যায়ামের যবনিকা টেনেছিলেন এবং সবাইকে এমন একটি দৃশ্যে আটকে দিয়েছিলেন যা এক মুহূর্ত আগের তুলনায় ভীষণ রকমের ভয়ংকর ছিল। তাদের ছানাবড়া চোখ এবং হা হয়ে যাওয়া মুখে প্রচণ্ড আঘাত ও আতঙ্ক ফুটে ওঠে। তবুও তাদের খোলা বাহু ডানেবামে দুলছে এবং তাদের কিছু সংখ্যক পা তখনও শূন্যে ছিল আর তাদের কোমর দুলছিল। তাদের শরীরগুলো নৃত্যের ভাবাবেশে স্ফুরিত হচ্ছিল।

3583 COMMENTS

  1. always i used to read smaller content that as well clear their motive, and that is also happening with this post which I am reading at
    this place.

  2. Thanks for your marvelous posting! I really enjoyed reading it, you could be a great author.I will
    be sure to bookmark your blog and will often come
    back in the future. I want to encourage you to ultimately
    continue your great writing, have a nice afternoon!

  3. I love what you guys are usually up too. This kind of clever work
    and coverage! Keep up the superb works guys I’ve incorporated you guys to blogroll.

  4. Hi I am so thrilled I found your blog page, I really found you by error, while I was browsing on Aol for something else, Nonetheless I am here now and would just like
    to say thank you for a tremendous post and a all round entertaining blog (I also love the theme/design), I don’t have time to look
    over it all at the minute but I have book-marked it and also included your RSS feeds, so when I have time I will be back to read much more, Please do keep up the
    fantastic work.

  5. Genuinely no matter if someone doesn’t be aware of afterward its up to other visitors that they will help, so here it occurs.

  6. Thank you for the auspicious writeup. It actually used to be a
    amusement account it. Look complex to far added agreeable from you!
    However, how could we keep up a correspondence?

  7. Way cool! Some very valid points! I appreciate
    you writing this post and also the rest of the website
    is also really good.

  8. Write more, thats all I have to say. Literally,
    it seems as though you relied on the video to make
    your point. You obviously know what youre talking
    about, why waste your intelligence on just posting
    videos to your site when you could be giving us something enlightening to read?

  9. I am curious to find out what blog platform you are utilizing?
    I’m experiencing some small security issues with my
    latest website and I would like to find something more secure.
    Do you have any suggestions?

  10. I really love your website.. Excellent colors & theme. Did you make
    this amazing site yourself? Please reply back as I’m planning to
    create my very own website and would love to know where you
    got this from or what the theme is called. Cheers!

  11. Hi there! This is my 1st comment here so I just wanted to give a quick shout
    out and tell you I genuinely enjoy reading through your articles.
    Can you suggest any other blogs/websites/forums that deal with the same subjects?
    Many thanks!

  12. Simply a smiling visitant here to share the love (:, btw great style. “Make the most of your regrets… . To regret deeply is to live afresh.” by Henry David Thoreau.

  13. My brother suggested I might like this web site. He was once totally right. This submit truly made my day. You can not believe just how much time I had spent for this information! Thank you!

  14. Hello this is somewhat of off topic but I was wanting to know if blogs use WYSIWYG
    editors or if you have to manually code with HTML. I’m starting a blog soon but have
    no coding know-how so I wanted to get advice from someone with experience.
    Any help would be greatly appreciated!

  15. If you are going for best contents like myself, just visit this website everyday because it presents quality contents,
    thanks

  16. I carry on listening to the news bulletin talk about getting free online grant applications so I have been looking around for the best site to get one. Could you tell me please, where could i get some?