১ তোমাকে লিখবো ভাবি তুমি থেকে সম্বৎসর খসে গেলে নাম না জানা আশীর্বাদ দাউদাউ জ্বলেছিল আমাদের মাটি ও দিনাঙ্কে তারপর একটি একাকী মন্ত্র ঝরে পড়ল বিবাহের গায়ে তুমি মৃদুতর হলে আমি যৎসামান্য হলাম তোমার অপলকের ভেতর পলক পলক জল তুললাম তোমার ভেতর চাঁদ স্বচ্ছ হলে আমি বাহারী নাও নিয়ে সাতটি জন্মের অনুপম, ঘরবাদলার কথাকন্না, লুকোচুরির বৃষ্টি দেখে এলাম তুমি স্বাদ ছুঁয়ে দেখো, গ্রহণের সূত্র...
ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে শুরু হয় তার গতিপথ নিয়ে চর্চা গভীর সমুদ্রে মৎস্যজীবীরা ডিঙি-নৌকার অভিমুখ ঘুরিয়ে নেয় উপকূলের দিকে অন্ধকারে ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের দিকে চেয়ে রাত জেগে বসে থাকে তাদের গৃহিণীরা আর বিড়বিড় করে জপতে থাকে দুর্গা নাম ঝড়ের পূর্বাভাস পেলে দায়িত্বশীল প্রশাসন মাইকে নির্দেশ দেন উপকূল খালি করার ঝড়ের পূর্বাভাসে নিরীহ পাখিরা অসহায় নাগরিকের মতো পালকের নীচে ঠোঁট গুঁজে দিয়ে অপেক্ষা করে সর্বনাশের তারপর ঝড় থামে যখন সকলে মাথা...
ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম...
যারা ঘুষি প্রাকটিস করেন তাদের বলি প্লিজ একটু কুলগাছের ছায়ায় চলে যান।লুডু নয়।দাবা খেলুন। বাংলা কবিতায় আপনি জাস্ট একটা উত্তরীয় মাত্র রোদের ভেতর বেড়াল হাঁটছে।আপনার নখে আজকাল মোমের আলো।আপনার চোখের মণিতে আমি দেখতে পাচ্ছি হাডুডু খেলার মাঠ। সমস্ত দুপুর জুড়ে যারা পরকীয়া করে।ঠোটের ওপর যাদের নেমে আসে ঢেঁকিশাকের সবুজ তাদের সাথে সেলফি তুলুন...
নরম মাটির ভেতর কেবল মিলিয়ে যাচ্ছো তুমি। মিলিয়ে যাচ্ছে তোমার অস্তিত্বের উড়ন্ত ডানা। রৌদ্রজ্জ্বল সমস্ত দিন বসে আছে তোমার সরলতার পাশে। অথচ তুমি মেলে দিয়েছো শুকনো গাছের ডালে একফালি জটিল অন্ধত্ব। তোমার কাঠবেড়ালি রঙ, দৃষ্টিহীন চোখ ও লুকোচুড়ির সমস্ত সমীকরণ আমাদেরকে একটু একটু করে বিকারহীন নদীর কাছে বসতে শেখায়।...
যথা-রীতি তোমাকে সোহাগ করব, সাবধানে, কবিতা যেমন গোড়ায় কোমল ছন্দ, উদ্দাম মাত্রার ধাক্কা শেষে— শব্দেরও শিরদাঁড়া-ভাঙা,বাঁকা-লিঙ্গ,ছিঁড়ে-নেওয়া-স্তন... চুমু-শেষে ধাপে-ধাপে অর্গ্যাজমও,আবেশে আশ্লেষে— ভালোবাসতে এসে দেখি চতুর্দিকে সংবাদমাধ্যম: হেডলাইনস্ মুহূর্তে সরে ক্রাইমের বৈচিত্র্য শানিয়ে... কোথাও পূর্বরাগ নেই,কবি সেজে ডেস্কে ব’সে যম... আদর করছি পরস্পরকে, মুখে মুখে, বানিয়ে বানিয়ে লাভ-লাইন দরজা-কপাট ঝপাট খোলা, ঢুকলাম এই— শরীরভাঙা পাল্লা-গরাদ; আয়, চলে আয় বাতাস-বাধাও হাপিশ হল হর্ষ পেয়েই— ঘি...
ঘরের মৃদু আলো নিভে আসে দিনের শেষে পাশাপাশি শুয়ে থাকে দাদু আর দিদা ঘুমানোর আগে দিদার কত যে অভিযোগ ভেসে আসে— দাদু তেমন কিছুই বলে না। সমস্ত কথার শেষে দিদা বলে ওঠে “আমি যেন ঠিক চলে যেতে পারি তোমার যাবার আগে” দাদুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে কেবল একটিই কথা “কেন যে এইসব বলো... সকালে উঠতে হবে...
ট্রেন যত এগোচ্ছিল গধনি পেরিয়ে ততই কমছিল মানুষের তাড়া, ট্রেনে ওঠা-নামার, দৌড়ে জায়গা ধরার.... জানালার ধারের সিট , তাতেও গা নেই । কানিমহুলি স্টেশন থেকে উঠল ,একই মন্ত্র জানা অনেক সোদর ; নামবে গালুডিতে, হেঁটে যাবে স্বর্ণরেখার তীর ধরে । সুবর্ণরেখাকে ওরা স্বর্ণরেখা বলে । ফেরার সময় ছোটো লাল লাল শোলবাচ্চার পুরো চাকটাকে জল থেকে পিঠে তুলে...
অসুরের মুখে আমাদের শান্তিকামী জননেতার মুখ আমাদের অহিংসার ক্ষত নতুন নতুন পথ খুঁজছে মুখ লুকোনোর বছরের পর বছর কাকে চির অশুভের প্রতীক বানিয়ে ত্রিশূলে বেঁধা কার হত্যাকান্ড দেখে আমরা পথ খুঁজছি মঙ্গলকামনার! আমাদের মঙ্গলঘট রক্তমাখা আমাদের শান্তির দেবতার দিকে নিত্য উঁচিয়ে ধরছি ধর্ম আর মতবাদ-অন্ধতার ত্রিশূল পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে দিগন্তব্যাপী সত্যাগ্রহ আর অনশনের শেষে কে আজ একফোঁটা...
যেকটি বৃক্ষের কাছে ক্ষমাভিক্ষা করেছি ক্ষয়িষ্ণু রীতি মেনে, যেকটি প্রার্থনাগীতি স্বরলিপি খাতা জুড়ে আলো, যেকটি হননসাধ একান্তে অপূর্ণ থেকে গেছে─ সেসব অধ্যায় যোগ করে করে পৃষ্ঠা গুনে গুনে তুমি জীবনের অদাহ্য আখ্যান রচেছিলে। এই যে বিজন রাত কিছুই দেখে না খুঁজে, সঙ্গোপনে শুধু স্থির সর্বনাশ হয়ে জেগে থাকে স্বপ্নের ভেতরে─ মেঘে কুয়াশায় ছাওয়া উঁচু-নীচু অবাস্তব গ্রাম...
পোড়া রুটি ও কয়েকটি কবিতা দ্বিতীয় ঢেউ ভালো লাগছে না বলতে নেই বলো লড়াই-ই জীবন মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে অস্বীকার করার শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই চিয়ার্স বাকি সবকিছু আবর্জনা টান মেরে ছুঁড়ে ফেলো হাসো,লুটোপুটি খাও কোনো নিউজ চ্যানেলের দিকে তাকিও না বরং নিজেই একটা নিউজ হয়ে যাও অদৃশ্য বিভীষিকাকে ছেয়ে ফেলুক আমাদের অট্টহাসি... এই প্রথম গোটা একখানা মহামারির ময়না তদন্তের রিপোর্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের হাতে...
অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন। তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী! তোমাকে যে সাকি বলে চেনে সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর! যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়... বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
দিনলিপি প্রথম প্রেমের মতো শরীরের আড়ভাঙা গূঢ় কামনার অস্ফুট রোমাঞ্চ নিয়ে আলো ফোটে স্বপ্ন ফিকে হলে। অতঃপর দিন কাটে মোহে ও বিস্তারে, দিন কাটে একটানা একঘেয়ে দীর্ঘ বিনোদনে— আরও বেশি অধুনার অবরুদ্ধ এইসব দিন— পূত শুভ্র কিশোরী কুসুম তার বৃন্তের দৃঢ়তা হারিয়ে যৌতুক পায় সংসারশোভন ভালোবাসা। তুমি স্থায়ী, তুমিই সঞ্চারী। তোমারই মহিমে গড়া শুদ্ধ এই পরাক্রান্ত রীতি। নিভৃত রক্তের...
মৌমিতা পাল ততোধিকডুবতে পারিনি।হারাতে পারি না।ঘুমিয়ে জাগার চেয়ে কষ্টকর কিছু নেই।শেষ না করে আরম্ভ করার মধ্যে বঞ্চনাযেহেতু, আমি জানি ব্যাধির বীজে মসৃণ ভেনাস।শরীরে মেঘনার গান নিয়ে মেরুচূড়ারা জনহীন।যদি তুমি মানো, তবে রেশমী আড়াল,পর্দায় ঢাকা বাড়ি, আরধনুকের বিস্তীর্ণ সংক্রমণেপ্রজাপতির বিভ্রমণ।যদিও বিনিদ্র দিনরাত ঘোরে।(শরীরে ঘনিষ্ঠ রূপসীর বিপরীত মায়া নিয়ে প্রেম জ্বালিয়ে ছিল...
ভালোবাসা যায় কিনা, ভালোবাসা থাকে কি, জানি না স্মৃতির পুরোনো খামে গ্রহণের রেণু লেগে আছে জুড়িয়েছে চোখ আর মাটি পুড়ে গেছে খোলা পায়ে কীভাবে কাউকে, বলো, এতখানি ভালোবাসা যায়? চোখের সামনে থেকে না-দেখার ভান করে দেখি চোখের আড়াল হলে সে দৃশ্য সহ্য হয় না বলি তো অনেক কথা, না-বলাটুকুই বেশি বলি চলি ভাঙা-ভাঙা পথে, পথে পথে...
দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়জন্ম: ১৯৯২ ২০১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর।প্রকাশিত কবিতার বই:আমি অলকানন্দা ও ডায়েরির নীল পাতা (২০১৮)ভালবাসার ডাকপাখি (২০১৯)যেখানে নেমেছে রাত্রিযেখানে নেমেছে রাত্রিযেখানে নিবিড় গন্ধমাখা পুরনো কিছু বিকেলশ্মশান ধোঁয়ার অভিসার আতরের মতোঘুমে বুঁদ হয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়ার প্রেমিকসুইসাইড নোটের না লেখা পাতাআর প্রশ্ন...রাইন নদীর তীরে শীততখনও সকাল হয়নিশুকনো পাতারা হাওয়ার স্রোতেতোমার...
ব্যর্থতা বড়র দায়, শিশু কি কখনও ব্যর্থ হয় হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা সেও এক এভারেস্ট জয় আমি সেই জয়ের পতাকা কুরুক্ষেত্রে নিয়ে গেলে মাটি থেকে উঠে আসে চাকা যুবতী মায়ের স্তনে কানীন পুত্রের জিভ বলে ওঠে,শেষ নয়,যুদ্ধ শেষ নয়।
আলো আর বৃষ্টি                                                                            জড়াল ছবিটা সরিয়ে নিলে একটা ফুলদানি হতে পারে আলোফুল     ...
একটা উত্তরকে প্রতিউত্তরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাই অপরাধের সূত্র ধরে কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটি সন্তর্পণ জানালার বিচারক্ষেত্রের দিকে ঘুরে দেখি স্পর্শের দক্ষিণ, থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে সিলিং ফ্যান কণ্ঠার মৃদু হাড়ের ওপর জমে আছে অস্পষ্ট আঙুল পোড়া মেঘের ছায়া এসে লাগে কাঁচের ওপর আমি মুখ নামাই, জিভের করুণা খুঁজি, খুঁজে দেখি পারা ওঠা আয়নার ওপর অবশ্যম্ভাবী...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল। বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো। জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...