নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও এখনো ভিড়ের মাঝে ? কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে? গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে নীরবে নিভৃতে করা যায়। সেইক্ষণে মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে। ফিরে এসো জনসভা থেকে ফিরে এসো ভিড় থেকে বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি এখনো ভিড়ের মাঝে...
ভেবেছিলে ওই পারে শালবন আছে? দীর্ঘ আর ঋজু। তারা কথা বলবে চোখে চোখ রেখে ওই দিকে সুশীতল হাওয়া বয়, নক্ষত্রের ভিড় তোমার নিষ্পত্র শিরে আঁকা হবে জ্যোতির-বলয়? এপার মলিন বড়। আলোহীন রোগা ভালবাসা মাঝারি মাপের, তাই মিহি অজুহাতে ছিঁড়ে ফেলে স্নেহ-রজ্জু, গা থেকে খসিয়ে ফেলে প্রত্নপরিচয় হেঁটে যাচ্ছ ওই পারে, যাও... ওপারে এখন একা, দীর্ঘতর ছায়া পড়ে...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল। বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো। জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...
চারিদিকে নিস্তব্ধ অন্ধকার আলগোছে উড়ে চলেছে মেঘ ভেঙে পড়েছে ধৈর্য্যের সীমানা দুই দেশের মাঠের ওপর ভরা পূর্ণিমা। এখানে রাত জেগে থাকে দিনের আলোর মত অন্ধকার ঘুরে বেড়ায় গুটি পায় আলো এক হানাদারীর নাম গোপনে ধ্বংস করে আবেগের গোপনীয়তা। তোমার পরিশ্রম ধোয়া শীতল জলে একফোঁটা নোনতা স্বাদ লেগেছিল সন্ধ্যা নামার আগে পাখিরা ফেরার আগে ভাবে মাটির ভেতর থেকে জলের ভেতর থেকে সবটুকু সুখ ছেঁচে নিয়ে...
প্রকৃত শোকের কাছে সবকিছু তুচ্ছ হয়ে যায় রোজকার জীবনের শীত, গ্রীষ্ম, মামুলি ঋতুরা প্রকৃত শোকের আছে নিজস্ব উচ্চতা, সম্মোহন ধ্যানের স্তব্ধতা আর আত্মার গভীর উচ্চারণ প্রকৃত শোকের কাছে মাথা নত হয় অনায়াসে ছড়ানো- ছিটানো যত লোভ, সব অর্থহীন লাগে প্রকৃত শোকের আছে বেদনার গোপন আহ্লাদ সুরের নিবিড় স্পর্শ, প্রার্থনার মতো মন্ত্রধ্বনি প্রকৃত শোকের কাছে যেতে হয় খুব...
২৩শে মার্চ থেকে, বাড়িতে পাখি আসে শুধু , ফাঁকা ছাদে তারা চোখ মোছে – আমাদের দেখা হয় না তবুও সকালের আলো দেখে মনে পড়ে, চিঠি আসতো একদিন পথে পথে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে ছায়া, বৃক্ষ,চরাচর আকাশ ভরে যায় শোকময় প্রার্থনায় বন্দরের ঘন্টা বাজে – বেজেই যায় মুসাফির সব ফিরে গেছে বলে, শূন্য বিকেলে চৈত্র ওড়ে একা ! খবরে...
আমাদের আর কিছু নেই শুধু জড়িয়ে ধরতে পারি বাজ বিদ্যুতে ঝড়ে বা তুফানে হাহাকারে মহামারি যা আসে আসুক বুঝে নেব এই বুকের কলিজা পেতে তোমার জন্য রুটি রাখা আছে তোমার জন্য ভাত... এসো আজ এই গল্প করবো পথ দিয়ে যেতে যেতে... যাই হোক যদি অন্যায় দেখো নোয়াবে না আর মাথা.. তোমাকে লিখছি চোখে চোখ রাখো সন্ধ্যার ঝরা পাতা ...
মতলবটা তোমার বুঝে ফেলেছি চাঁদবদন হাড়-পাঁজর আছে ক'খান তা-ও চিবিয়ে খাবে হেঁশেলে তো আগেই ঢুকে পড়েছো বাছাধন ভাতের হাঁড়িটাকেই আখেরে কেড়ে নিয়ে যাবে। জানি গো কত্তা, ভাতে মারার কৌশল তোমাদের গাওনা গাওয়ার আগে করো কত্ত ধানাইপানাই! গরিবগুর্বো, ভাতের হাঁড়িটাই সম্বল আমাদের তারচে' বেশি চাওয়া পাওয়ার অধিকার তো নাই। প্রেম বিলাতে এসেছো, সেজে নদেরই নিমাই প্রেমের আগুনে পুড়ে যদি...
ক্ষতনিঃসৃত নিদ্রার ভিতর জেগে আছি, বিভ্রম নেই কিছু জোনাকি এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় যাবতীয় নীরবতার বিস্তার দূর নক্ষত্রে সান্ত্বনা খুঁজি। প্রস্তর যুগের ছেঁড়া পালক হয়ে বেঁচে উঠি শান্ত দেহ থেকে উঠে আসে দারুচিনি কাঠের গন্ধ দেখি, এক শীতকাল, সর্ষে-হলুদ শাড়ি পরে আমার জন্য দু’হাত ভরে তুলে এনেছে শুষ্ক বরফ আমি বয়ে যায়। জৌলুসে, উত্তাপে, অজ্ঞাত অসুখবোধে নেশা...
একটা লোক বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ল একদিন ঘুম যখন ভাঙল,দেখল,এ পৃথিবীতে আর বাস চলে না কোথাও কোনও ট্যাক্সিস্ট্যান্ডও নেই চলে শুধু হাওয়া আর পাটাতনে রাখা সময়... বাসের জানলাগুলো খুলে নিয়েছে কেউ,বসার সিটে তা দিচ্ছে পায়রা এক গায়ক তারই মধ্যে গান গাইছে ইলেকট্রিক গিটারে স্টেশানের ভেতরে,বাইরে প্রেমিকার মতো মেয়েরা উড়িয়ে দিচ্ছে হাহাকার… একটা লোক...
প্রাচীন গুম্ফা থেকে ভেসে আসে মেঘ যেন বহুদূরের বারান্দা থেকে তুমি হেঁটে এলে ধীরে অর্কিড-উপত্যকায় সন্ধে নামছে এখন , ঘন হয়ে উঠছে ধোঁয়াকুয়াশার মরসুম আমার আর কিছু পাবার নেই, কিছু হারাবার নেই পাইনবনের পথে ওই দ্যাখো হাতে হাত আমাদের ছায়া বাচ্চা লামারা ফুটবল খেলছে কিছুদূরে আমি কোনদিকে যাবো বুঝতে না পেরে শেষমেষ খাদের দিকেই চলে যাই এতো...
যেখানে সেখানে মরব না আমি। যেমন তেমন করেও নয়। অনেক আর্তি, অনেক কাতর ভিক্ষা, বহু আনত জ্যোৎস্না মাড়িয়ে, এতৎকালের জমানো সব পুত্তলিকাপ্রবাহ; দু হাতের নখে ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলব শ্মশানচারী শৃগালের মত। যত পলাতক পরীদের দল, আর রক্ষে থাকবে না হাহাকারে। যত আমন্ত্রণ, যত নিহত শিশু পঙ্গপাল সব সব ছত্রভঙ্গ হবে - দানব হুঙ্কারে। হে ক্ষত্রদেবতা,...
পৃথিবীর সেরা বেহালা বাদক জসুয়া বেল ওয়াশিংটনের সাবওয়ে স্টেশনে ঘন্টাখানেক বেহালা বাজালেন সাতজন শ্রোতার সামনে । তারমধ্যে একজনের বয়স তিন একজন মাত্র চিনতে পেরেছিলেন তাঁকে। হুগলির ওভারব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে কবিতা পড়েছিলেন একজন। যেখানে শ্রোতার সংখ্যা ছয় একজনের বয়স নয় কেউ চিনলো না তাকে কোনো কমেন্ট কোনো শেয়ার কোনো লাইক থাকল না শুধু দুন আর শতাব্দী এক্সপ্রেস শব্দ করে চলে গেল দুদিকে উড়তে...
কার দিকে চোখ? কোথায় তোমার মাথা? কার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে আছে? অমন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভ্রমরও তো যায় না অতো কাছে! মুখ লুকিয়ে কীসের অত হাসি? সারাটাদিন কীসের এত মেসেজ? নদীর জলও আয়না মুছে ফেলে সে-ই বা কেন এমন দাঁড়ায় এসে? এতটা ছাড় দিয়েছ কেন তুমি? বন্ধু শুধু? বন্ধু কেমন জানি ওর দেওয়া বই বুকের কাছে রাখো আমি তো...
জানো, ভিক্ষুক এই তিনদিন আকাশ হয়েছে, প্রভু সিন্নির পাত্রে মিশিয়ে খেয়েছে অনেক মায়া-প্রবন্ধ--- জানে জনে-জনে… বিদ্বান হল দেহ-মন তাই! প্রতিটি পাতায় সংকেত পাই রোদ ওঠে রোদ পড়ে যায় জলে সন্ধ্যা আসেন, প্রবন্ধ বলে: ‘আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা কর’ যত নারীস্রোত, ততদূর নর প্রবন্ধকার তুলসি-মালিকা আমি আশ্রিত, তিনিই চালিকা তবু ভিক্ষুক অসম সাহসী কাঁধে টিয়া পাখি, ডাকনাম: শশী তিনদিন ধরে ওরা খড়কুটো আগলে রেখেছে ঝড়ের উঠোন বাকি...
আমি আজ বড়ই একা প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি ফুলের ঘ্রাণে মাতাল করেছে আমার মনন বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বুকের ওড়না তারপর? এক কাপ চা খেয়ে যা শান্তি পাই তোমাদের আপ্যায়নে তা পাই না হাজারো অভিযোগ মেনে নিয়েও যখন ভালোবাসি ভুলে যাই পূর্বের সকল কথোপকথন তারপর? কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে পথ ঢেকেছি, হাঁটছি না দাঁড়িয়ে আছি, অপেক্ষায় আছি ঢেউ এসে...
তোমাকে দুঃখবোধে ডুবিয়ে রাখতে চাইনি। দোষ আমার! একের পর এক যে তীর আমি মেরেছি, তা এমন নির্মম হয়ে ফিরবে ভাবিনি। তুমি বুঝবে না, তোমাকে ছাড়া রাত-দিন কেমন দুর্বিষহ কঠিন ধাঁধার মতো হয়ে উঠছে। পোড়ো বাড়ির গুমোট অন্ধকার যেমন গলা টিপে ধরে পিছন থেকে। আমি হিসেব মেলাতে পারছি না। চাঁদ...
মনে মনে অধীন থাকা সহজ অনায়াসে চরণ ধূলায় লীন ফুলচয়ন, গাগরিভরন সবই কল্পসম্ভব যদি তুমি রাখো। কোথায় রাখবে শ্যামরায়? তোমার দু'পা গলে গেছে ওই পাহাড় বনের ধারে এদিকে বেলা নেমে এলো আমি সাজে বসি শেষ দিনে এসো ছায়ার মত পাশে রেখো যা দেবে তা-ই স্বীকার্য সেদিন, কী পিপাসু এই দাস্যভাব! চোখ গেঁথে রাখলাম মাটিতে যে চোখে জল এলে ভেবো গান-- বৃন্দাবনী সারং
আমার বঁধুয়া নয়, তবু রাত জেগে দেখি তার অমন আনবাড়ি যাওয়া ধুলোনদী পার হয়ে, ডিঙিতে পদ্মের ছাপ রেখে কার কুঞ্জে এত রাত? ভাবি একদিন কাছে ডেকে কপট জিজ্ঞাসা করি, ভালোমানুষের ছেলে, শোনো- চোখের দিঘলে এসে নদীশব্দ পেয়েছ কখনও? সে ঢেউ আমার নয়। ভীষণ এই আনচান দিনে না, গাঙ্গিনি নই আর। জল নেই যমুনাপুলিনে। খরার ভিতরে জ্বলে হু...
হেমন্ত এসব গোধূলি আলো স্বজন হারানো লোভে একা পথেই পায়ের ছাপ তারপাশে লিখে রাখা ঘাতক আলোয় আঁকশি ফেরানো চোখে ফেরা যায়! বলো! দেহ নেই! জন্ম নেই মাতৃহননের সুরে কাকেই বা প্রিয় ডাকি, কাকে যে দেবতা ! এসব গোধূলি আলো একা...   সন্ধ্যা কাকে বল ছায়া? আলোর দরজা পেতে, রোজ সেও হেঁটে গেছে জারুল বাগানে মৃত গাছেদের চোখে ঘৃণা জন্ম নিতে দেখে-- চুপচাপ পুঁতে দেয়...