উড়ো মেঘে এই যে খানিক বৃষ্টি হয়ে গেল এই যে রাখালের মাঠ থেকে ডেকে উঠলো হারানো বাছুর হাঁসেরা পুকুর ছেড়ে শব্দ করতে করতে চলে যাচ্ছে হাততালি দিচ্ছে ন‍্যাংটো বিভোর, ভেজা ঘাস থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা স্নিগ্ধ আমি তাকে অনুরাগ বলে ডাকি… আমি হাঁটছি , আর সোঁদা গন্ধে ভরে...
জাল যদি বুনে নিতে হয় তবে দেরি কিসের মাছেরা যে প্রস্তুত সমর্পণে সে পাল্লা হোক কি রুই মৌরলা বোকা স্ক্রিন, পণ্য নীতি রঙিন চশমা, জিপিএস আমরাও জালের তলায়...
ও হাওয়া, আমার মুখ মুছিয়ে দাও এইসব অলৌকিক জানালার ধার, বাড়ি ফেরার ট্রেন ফেরিওয়ালা আপেল নীল চশমার ফ্রেম জীববিষয়ক আগ্রহ বা নদীবিষয়ক দিল ঢুঁন্ডতা হ্যায় ফির ওহী... এ এক আশ্চর্য উড়ান অস্থির মায়াচোখ বা নেহাত নিরাসক্ত ঘরবাড়ি মেঘ মেঘ বিচ্ছেদ বিচ্ছেদ পাখিডানা হুইসল বা অনুরূপ সমবৃত্তীয় অঙ্গ এইসব অনন্ত দ্বিধা ঘাম হয়ে ফুটে থাকে মুছিয়ে দাও... স্টেশন নিকটে এলে বিরহী কদম অকালেই ঝরে...
প্রতিষ্ঠান আমাদের বাড়িতে দুটো প্রতিষ্ঠান এক আমার বাবা, আর এক আমি, আমাদের মুখোমুখি সংঘর্ষে যে আহত হয়, সে মা, কোনো প্রতিবাদ করে না শুধু কাঁদে, আমরা সে জল তুলে নিই হাতে অঞ্জলি ভরে ছিটিয়ে দিই আত্মদাহে। আলো আমাদের পরিবারে একটাই কুপি কেরোসিন উবে গেছে পড়ালেখায় কন্যাদায়ে, এখন কখনো কুপির ভিতর আমি ঢুকি কখনো ঢোকে মা কখনো বাবা এভাবেই আলো জ্বলছে ঘরে ...
বিনোদিনী ১ এ চাওয়া আমার আসতনা যদি আমাদের প্রেমটা পূর্ণতা পেত। না পাওয়ার একটা মায়া আছে আলাদা, যেটা কাটানো কঠিন। এরকম একটা বৃষ্টির সন্ধেবেলার জন্যে যেগুলো তোলা থাকে... ২ আমাদের কোনোদিন দেখা হবেনা একান্তে। কিন্তু যদি হতো ! ভাবতে ভাবতে মাথার ক্লিপটা আমি খুলে চুলটা উড়িয়ে দিলাম হাওয়ায়। আমরা একসাথে ভিজতাম না, ভিজলে...
ক্ষতনিঃসৃত নিদ্রার ভিতর জেগে আছি, বিভ্রম নেই কিছু জোনাকি এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় যাবতীয় নীরবতার বিস্তার দূর নক্ষত্রে সান্ত্বনা খুঁজি। প্রস্তর যুগের ছেঁড়া পালক হয়ে বেঁচে উঠি শান্ত দেহ থেকে উঠে আসে দারুচিনি কাঠের গন্ধ দেখি, এক শীতকাল, সর্ষে-হলুদ শাড়ি পরে আমার জন্য দু’হাত ভরে তুলে এনেছে শুষ্ক বরফ আমি বয়ে যায়। জৌলুসে, উত্তাপে, অজ্ঞাত অসুখবোধে নেশা...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল, আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল। শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায় হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা, তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায় হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা। তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই বলতে তো, ঘটনার...
বেশ কিছু কথা দিয়ে না রাখা ফুল দিতে অপারগ যে শাখা হাত ধরে-থাকা সেই বোবা হাত থাকতে চেয়েও শেষে না থাকা নেশাতুর, বেলাগাম সে রাতে আদুরে ওমের লোভ পোহাতে সোহাগের চৌকাঠ লঙ্ঘন বিবেকের বেমক্কা জেহাদে শীতঘুমে কুয়াশারা খেলাপি ভুলে থাকা মানুষের থেরাপি বসন্তে বিচ্ছেদ বেসোয়াদ অপমান, বোকাদের সেরা ফি! সময়কে হতে দাও নেশাড়ু সংসারে সবাই তো দাবাড়ু শেষ কথা শেষ চাল : কিস্তি মৌত...
একটা লোক বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ল একদিন ঘুম যখন ভাঙল,দেখল,এ পৃথিবীতে আর বাস চলে না কোথাও কোনও ট্যাক্সিস্ট্যান্ডও নেই চলে শুধু হাওয়া আর পাটাতনে রাখা সময়... বাসের জানলাগুলো খুলে নিয়েছে কেউ,বসার সিটে তা দিচ্ছে পায়রা এক গায়ক তারই মধ্যে গান গাইছে ইলেকট্রিক গিটারে স্টেশানের ভেতরে,বাইরে প্রেমিকার মতো মেয়েরা উড়িয়ে দিচ্ছে হাহাকার… একটা লোক...
এসেছ আষাঢ় তাই, কৃষ্ণ সেজে আজ হোলিখেলা   ভিজে যাচ্ছে মাটি আর খুলে যাচ্ছে সব ঘর দোর এতদিন ধুয়ে মুছে যা রেখেছি,   সব শুধু তোর   খসে পড়ছে পলেস্তরা, জেনে গেছে পাড়া প্রতিবেশি নিভৃত ঘরে আজ বসে আছে   দুই সন্নেসী!   এসেছ আষাঢ় তাই, রাই আজ শ্যামসঙ্গ করে, হয়েছে কলঙ্কিনী এইবার বানপ্রস্থে যাবে…   শরীরেই মোক্ষ তার, বৈধব্যে দারুণ অনিহা   রাধা রাধা করে শ্যাম, রাই শুধু...
একদিন সমস্ত সহজ হবে , জানি। লিখতে লিখতে হবে, সে তো। লেখা এক স্বরাজ রাজধানী। লেখা এক মস্ত বড় সেতু। সেতুবন্ধ করেছি শরীরে। হাত আর পায়ের ভিতরে কাজ আর বিশ্রাম পুরেছি। শিশু হয়ে মাঠে নেমে গেছি। এই ত সফল বিদ্যালাভ। এই ত সজীব প্রতি কোষ। হাত আর পায়ের মিলনে এই ত ভুলেছি আক্রোশ। শরীরকে করেছি মন্দির হাত জুড়ে হয়ে আছি স্থির সমস্ত সহজ...
সন্ধ্যা তারা পথে পথে জল দুরূহ বেদনা! পথে পথে বেজে যায় গান ক্ষমার মতন অদূরে গোলাপ ভাঙা পাপড়ির শোকে লেখাটি বিহ্বল! বিকেলে পথিক নামে সন্ধ্যার জটলা একা একা তারা উঠেছে আকাশে প্রেমিকার মতো। পুজো সেই লেখাটিকে নতুন পোশাক দেব ভাবি যার নাম, পাঠকের মুখে শুনি। প্রেমিক সে আসেনি এসেছে কুয়াশা বেড়াতে চোখের বাড়ি আমি তাই প্রহরী শুধুই আমার ছায়ার! শূন্যতা জানিল শুধু সে কিছুই জানিলনা! শুধু সুর বুকে নিয়ে গান কিছুটা থমকে ফের বেজে যায় সন্ধের মায়ায়... তুলনা নবীন...
কনিষ্ঠ সময় চিনি। আমারই বরেণ্য ডালে পাখি জ্যোৎস্নায় ডানা মেলে, শালবনে আলো মাখামাখি— অবাধ মৈথুন শেষে ফেরে। ফের, উড়ে যায় বনে বিষাদ প্রস্তর ভেঙে পথ তৈরি করেছে যাপনে… কখনও রক্তাক্ত তির, ক্রৌঞ্চশাবকের ডানা ছিঁড়ে বেপথু ও পরাহত। শবরেরই আকন্ঠ নিবিড়ে গভীর আশ্রয় চায়… চায় শব্দে উচ্চারিত হোক বহুবর্ণ সময়ের ওড়াউড়ি স্তব্ধ করে, শ্লোক— সে-শ্লোক বন্ধক রেখে সময়ের...
১ তোমাকে লিখবো ভাবি তুমি থেকে সম্বৎসর খসে গেলে নাম না জানা আশীর্বাদ দাউদাউ জ্বলেছিল আমাদের মাটি ও দিনাঙ্কে তারপর একটি একাকী মন্ত্র ঝরে পড়ল বিবাহের গায়ে তুমি মৃদুতর হলে আমি যৎসামান্য হলাম তোমার অপলকের ভেতর পলক পলক জল তুললাম তোমার ভেতর চাঁদ স্বচ্ছ হলে আমি বাহারী নাও নিয়ে সাতটি জন্মের অনুপম, ঘরবাদলার কথাকন্না, লুকোচুরির বৃষ্টি দেখে এলাম তুমি স্বাদ ছুঁয়ে দেখো, গ্রহণের সূত্র...
স্রোতের মাঝখানে শান্ত ঘূর্ণির মতন নাভি। নাভির মতন দুরারোগ্য গভীর অবসাদ। শুধু দুধ পোড়ার গন্ধে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। শুধু টেবিলক্লথের ওপরে শুকনো চায়ের দাগ দেখে সাহস করে বলেছিলাম, দরজা খোলো, কিছু কিনতে হবে না। আমি আজ টবের শুকনো গাছগুলোর গোড়ায় জল দিয়ে চলে যাচ্ছি। কাল আমি স্নানঘরের আয়না...
ব্যর্থতা বড়র দায়, শিশু কি কখনও ব্যর্থ হয় হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা সেও এক এভারেস্ট জয় আমি সেই জয়ের পতাকা কুরুক্ষেত্রে নিয়ে গেলে মাটি থেকে উঠে আসে চাকা যুবতী মায়ের স্তনে কানীন পুত্রের জিভ বলে ওঠে,শেষ নয়,যুদ্ধ শেষ নয়।
তোমাকে দুঃখবোধে ডুবিয়ে রাখতে চাইনি। দোষ আমার! একের পর এক যে তীর আমি মেরেছি, তা এমন নির্মম হয়ে ফিরবে ভাবিনি। তুমি বুঝবে না, তোমাকে ছাড়া রাত-দিন কেমন দুর্বিষহ কঠিন ধাঁধার মতো হয়ে উঠছে। পোড়ো বাড়ির গুমোট অন্ধকার যেমন গলা টিপে ধরে পিছন থেকে। আমি হিসেব মেলাতে পারছি না। চাঁদ...
আমাদের আর কিছু নেই শুধু জড়িয়ে ধরতে পারি বাজ বিদ্যুতে ঝড়ে বা তুফানে হাহাকারে মহামারি যা আসে আসুক বুঝে নেব এই বুকের কলিজা পেতে তোমার জন্য রুটি রাখা আছে তোমার জন্য ভাত... এসো আজ এই গল্প করবো পথ দিয়ে যেতে যেতে... যাই হোক যদি অন্যায় দেখো নোয়াবে না আর মাথা.. তোমাকে লিখছি চোখে চোখ রাখো সন্ধ্যার ঝরা পাতা ...
একটা লোক এই মুহূর্ত থেকে ‘নেই’ হয়ে গেল। নিমেষে বদলে যাওয়া বাড়ি, তার নিজস্ব এক ঘর, আলনায় গোছানো পোশাক একইভাবে পড়ে থাকে। বিছানায় শোয়ানো মলিন হ্যান্ডস্টিক, ঘরের কোণে পানের ডিবে সবাই নিশ্চুপ। একটা অভ্যস্ত শরীরের গন্ধ ধীরে ধীরে ফিকে হচ্ছে। জানলায় ঝুলে থাকা না-কাচা পর্দা, ব্যবহারিক খুঁটিনাটি ইত্যাকার অবশেষ ঘেঁটেও তার হদিশ মেলে না। শুধু,...
ভষ্মমাখা আমাদের আশ্রয় ১  ঘর বলতে সামান্য এই সন্তানহীন বৃক্ষের মতো পায়ের পাতার কাছে জমে থাকা শূন্যতাটুকু। শেষ রাত্রির গূঢ় অনুশোচনার মতো আজ স্তবকের পর স্তবক ভেঙে রক্ত গড়িয়ে গেল। বিষও উঠে এল কিছু। সান্ধ্য ভ্রমণের বোধহীন চিহ্নগুলি খুলে রেখেছে এক একটি স্পর্শের মতো অজানা সংলাপ। আমার জামা ছিঁড়ে গিয়ে বুকের...