একটা লোক বাসের পাদানিতে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ল একদিন ঘুম যখন ভাঙল,দেখল,এ পৃথিবীতে আর বাস চলে না কোথাও কোনও ট্যাক্সিস্ট্যান্ডও নেই চলে শুধু হাওয়া আর পাটাতনে রাখা সময়... বাসের জানলাগুলো খুলে নিয়েছে কেউ,বসার সিটে তা দিচ্ছে পায়রা এক গায়ক তারই মধ্যে গান গাইছে ইলেকট্রিক গিটারে স্টেশানের ভেতরে,বাইরে প্রেমিকার মতো মেয়েরা উড়িয়ে দিচ্ছে হাহাকার… একটা লোক...
সৌম্যজিৎ আচার্যকবি,গল্পকার। অনুবাদও করেন।লেখা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, বেলজিয়াম, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও পত্র পত্রিকায়।তাঁর কবিতা অনুবাদ হয়েছে ইংরেজি ভাষায়।সম্প্রচারিত হয়েছে বলিভিয়ার একাধিক এফ এম বেতার অনুষ্ঠানে। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট।এক ফেরিওয়ালা এসেছিলএক ফেরিওয়ালা এসেছিলগ্রামে,শহরে প্রতিটা রাস্তায়হেঁকেছিল জোরে জোরেটোকা দিয়েছিল দরজায়বাতিল লণ্ঠন নেবে বলেআজ দেখো,সেসব...
পিকাসোর ছবি একই পথে সব গল্পেরই শেষ বস্তুত একটাই গল্প মাঠের মাঝে তৈরি হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন। শুধুমাত্র মনে হচ্ছে বদলে যাচ্ছে ; মাঠের চারিদিকে বিভিন্ন উচ্চতার ঘিরে আছে যে বাড়িগুলো সেগুলোর বিভিন্ন ছাদ থেকে কেউ দেখছে কান কেউবা একটা চোখ কেউবা নাকের পাশ অথবা মাথার পেছন তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের ওপর চোখ ঢাকা পড়ে যাওয়া কান ছাদের গুঞ্জন শোনার জন্য উঠে আসছে আর একটি...
জাহিদ সোহাগমানুষএ-ও এক বিশ্বাস, যারা আগুনের অবশেষ দেখে ছাই; আমি এর উল্টো দেখি। যেমন, মানুষ স্থির, গাছ ভ্রমণশীল : রক্তপাত ও আদর্শ তাদের দরকার।মানুষের কিছু নেই বুক ফাটিয়ে সোনালু জন্ম দেয়া ছাড়া, অন্য সময়ে লাল। যেমন প্রেমের চেয়ে পরিখার কুমির সহনীয়।  সিরিয়া সারাদিন শূন্যে তাকিয়েছিলাম। মনে হলো রুটিবৃষ্টি হবে শিগগিরই। রাত মানে...
হাসপাতালের ডিউটি সেরে যে ডাক্তার নিজের চেম্বারে বিনে পয়সায় রোগী দেখে ওষুধ কোম্পানি থেকে পাওয়া স্যাম্পেল দেয় দুস্থ রোগীকে আমি তাকে স্যালুট করি। গ্রামীণ হেলথ সেন্টারের যে ডাক্তার তার ডাক্তার সুলভ ভ্যানিটি বাদ দিয়ে তার ডাক্তার সুলভ গ্র‍্যাভিটিকে তোয়াক্কা না করে ইনফ্রাস্টাকচারের বাহানা না দিয়ে উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির দোহাই না দেখিয়ে বাবলা গাছে স্যালাইন ঝুলিয়ে চিকিৎসা করে আমি তাকে...
মুজিব ইরম জন্ম বাংলাদেশে। পড়াশোনা করেছেন সিলেট, ঢাকা ও যুক্তরাজ্যে। বর্তমান বসবাস ব্রিটেনে। তাঁর ১ম কবিতার বই মুজিব ইরম ভনে শোনে কাব্যবান প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে, বাংলা একাডেমি থেকে। কয়েকটি কবিতাগ্রন্থের নাম: ইরমকথা, লালবই, শ্রীহট্টকীর্তন, পাঠ্যবই ইত্যাদি। কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস এবং শিশু কিশোর সাহিত্য বিষয়ে তাঁর একাধিক বই আছে।...
সূর্য, ঘোড়া বরং এবার আলাদা রাখি সূর্য, ঘোড়ার কথা। মাটির যে ঢাল তেষ্টা চেনে, আইঢাই খুব– মরতে গেল জলের কাছে। সূর্য তখন তেষ্টা দ্যাখে, আচমনে সাজিয়ে রাখে খুরের দায়ভার। ছুটছে আড়াল, ভাসান প্রখর, ডুবছে কাঁপন, মন্থনবোধ উঠছে অধীর– দরদাম তার খোলস শুধুই আনকোরা দাগ রেসের আওয়াজ– সাতটা শরীর স্রোতের ফাঁকে রশ্মি চাটে, হিসেব রাখে, কখন অনুশাসন ভুলে...
অযথা পায়ের তলে মাটি সরে সরে গেছে প্রতিদিন, হৃদয়ের দেনা-পাওনাতে, আমিও রাখিনি কোনো ঋণ। দু'হাতেই বিলিয়েছি সব - যা কিছু অজড়, অব্যয়, বেদনার দাগ মুছে গেলে, নিষ্কাম পরে থাকে ক্ষয়। চিরাগের আলো খুঁজে খুঁজে প্রহরা রেখেছি প্রতিবার, আঁধার নামার পর বুঝি, ততোধিক দামি সংহার। স্মৃতিরা যেটুকু রেখে যায়, তারও বেশি যদি অভিমানী, নিয়ত অমোঘ সংশয়ে, আমাকেই শুধু আমি জানি।
বড় মুখ করে বললে, সংসারই চলে না এবার কবিতাটা ছাড়ো ভিতরটা তোলপাড় করে দিলে এতদিনের সখ্যটা নিজে-নিজেই খেলে তোমাকে বোঝানোর ভাষাই নেই কবিতা নেশাও নয়, কবিতা পেশাও নয় কবিতার জন্যে মই বাইতে হয় না কবিতার জন্যে আকাশেও উড়তে হয় না মাটিতেও টলতে হয় না আমার সংসার আর কবিতা মাখামাখি ওরা সহাবস্থান জানে, ওরা রাগ-অনুরাগ জানে ওরা জানে কবিতা সম্রাটের আর একটু...
নরম মাটির ভেতর কেবল মিলিয়ে যাচ্ছো তুমি। মিলিয়ে যাচ্ছে তোমার অস্তিত্বের উড়ন্ত ডানা। রৌদ্রজ্জ্বল সমস্ত দিন বসে আছে তোমার সরলতার পাশে। অথচ তুমি মেলে দিয়েছো শুকনো গাছের ডালে একফালি জটিল অন্ধত্ব। তোমার কাঠবেড়ালি রঙ, দৃষ্টিহীন চোখ ও লুকোচুড়ির সমস্ত সমীকরণ আমাদেরকে একটু একটু করে বিকারহীন নদীর কাছে বসতে শেখায়।...
আলোর মতো রাত্রি নামে, উপচে পড়ে ঘর, স্বপ্ন জুড়ে জাগল কি মর্মর? চাঁদের মতো হাঁড়ির ভিতর গান ধরেছেন তাপ, খিদের ছায়া মারল এসে ঝাঁপ। ঝাঁপ দিয়েছে হাজারো চোখ, ঝাঁপ দিয়েছে দেশ, এক হাঁড়িতেই মস্তানি সব শেষ। যুদ্ধ কেবল অন্ধকারের, যুদ্ধ কেবল নিজের। যত হারজিত খিদের রক্তবীজে। আলোর মতো রাত্রি নামে - পরনে রাজবেশ হাঁড়ির ভেতর, জলের ভেতর ফুটছে...
শোকের কাছ ঘেঁষে অতীত নদীরা থেমে যায় আঘাত ছোঁয়াচ পেলে ভেঙে যাবে মেঘেদের বাড়ি— সেও বুঝি জল হবে, ধুলো হবে তুচ্ছ শরীর; খাঁচারা বদলে যাবে প্রতি জন্ম-অধ্যায় শেষে। কারা যে বসেছে এসে নির্বাক সময়ের কাছে একা মানুষের অন্ধকারে ঘুম আনে সমস্ত মৃতস্বর, প্রহরের অপেক্ষা শুধু— এই বুঝি সাঙ্গ হবে খেলা কীভাবে নিভে যাবে তারাদের সাবেক উৎসব। স্রোতেরা...
মধুমিতা চক্রবর্তী রিমি দে অনিন্দিতা গুপ্ত রায় মনোনীতা চক্রবর্তী মাধবী দাস পঞ্চ কবির কবিতাকেন যাবমধুমিতা চক্রবর্তীযাব না কোথাও,ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ মেখে নিশিন্দা পাতার মত লেপটে পড়ে থাকবপোরবস্তিতে, ডিমা নদীর তীরে।ডলোমাইট ভেসে আসা সাদা জলে চাল ধুয়ে ভাত বসাব,চারটে ভাত ছ'জন মিলে খাব, গেঁড়ি গুগলি মেটে আলু সেদ্ধ মেখে...বর্ষা বাদলা হিম জোনাকির আলো নিয়ে...
স্রোতের মাঝখানে শান্ত ঘূর্ণির মতন নাভি। নাভির মতন দুরারোগ্য গভীর অবসাদ। শুধু দুধ পোড়ার গন্ধে আমি তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। শুধু টেবিলক্লথের ওপরে শুকনো চায়ের দাগ দেখে সাহস করে বলেছিলাম, দরজা খোলো, কিছু কিনতে হবে না। আমি আজ টবের শুকনো গাছগুলোর গোড়ায় জল দিয়ে চলে যাচ্ছি। কাল আমি স্নানঘরের আয়না...
এবারের দশমীতে সমস্ত দম্ভ বিসর্জন দিয়েছি নাওভাঙার জলে এবছর বৃষ্টি হয়নি, জল কম নদীতে দেখি আবার সব জীবন্ত হয়ে উঠে আসছে আমার শরীরে ক্রমশ বুক ফুলছে, চোখ দু'টো হয়ে আসছে লাল আমি আবার বিদ্রোহের কবিতা লিখব আগামীকাল সবাই বলছে প্রেমের কথা, চাঁদের গায়ে জ্যোৎস্না কিন্তু হাওয়া অফিস বলছে মেঘের খবর নেই বৃষ্টি অধরা... বৃষ্টি অধরা... ভরদুপুরে বীজতলা থেকে কৃষক দম্পতির...
সৈকত আরেফিন  শিক্ষক বাংলা বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ পাখি গোধূলি-গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা নিতান্ত খেলাচ্ছলে তুমি জানতে চাইলে প্রিয় পাখির নাম আসন্ন সন্ধ্যার ম্লান অন্ধকারে তোমার মুখের দিকে তাকালাম-- কত সহজ প্রশ্ন! অথচ তাতেই দিশেহারা আমি তুমুল হাহাকারে দীর্ণ হতে হতে পাখিটির নাম বললাম। পাখি আমার একলা পাখি— পৃথিবীতে কত পাখি আছে কত গান আছে অথচ বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি গানঅলা একটি পাখিই চুপে বসে আছে। আমার যা কথা...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল, আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল। শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায় হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা, তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায় হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা। তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই বলতে তো, ঘটনার...
তোমাকে লিখিনি আমি প্রেমের কবিতা একদিনও ওয়েব সিরিজের মতো ভেসে আসে ছবিময় শুধু সে ছবির ক্যানভাসে ভেসে আসে মুখ মণ্ডলী অর্ধেক কালো তার,অর্ধেক মুখোশেই ঢাকা। প্রেমের কবিতা কেন লিখিনা প্রশ্ন করেছিলে লিখেছি অনেক উড়ো চিঠি রোজ যাতায়াতপথে সে সব চিঠিতে নেই স্বাক্ষর মুঠোছাপ কারও যে হাত ধরতে গেছি সেই হাত ছেড়ে চলে গেছে । মাটি ভেদ করে...
প্রসূন মজুমদার | জন্ম ১৯৭৮পেশা শিক্ষকতা। কবিতার বই চারটি-- অসুখ ও আরোগ্য, অধরে গোখুরদন্ত, রাত্রিচর বুনোচাঁদ, নিষ্ফলতা- প্রিয় ফুল। কবিতা-বিষয়ক প্রবন্ধের বই - অপরাপর কবিতাসফর।কে আমি?যে লোক আমিও নয় আমারও তেমন নয়তারই জন্য রোদ পেতে রাখি।একটি চড়ুই আসে। ধান খায়। দুঃখ খুঁটে খায়।আকাশে আবার যায়, গান গায়, ফিরে ফিরে...
যথেষ্ট ব্যথার দেনমোহর দিয়ে তোমার ঋণ চুকিয়েছি কি? কত অশ্রুর মুক্তো দানা গুনে গুনে বটুয়াতে ভরতে হয় খাজানা চুকিয়ে দিতে, বলো মহাকাল? তবুও পরোয়া নেই। তুমি বল। বলতে থাকো। হাঁকো নীলামের দস্তুর। আমি সব কর্জ, দায়, ঋণ পাই পাই চুকিয়ে দেব। আনা, দুই আনা, অর্থ, অনর্থের মূলে শুধে দেবো ধার। পাতো হাত। অঞ্জলিতে পান্না চুনি...