সোনালী ঘোষ জন্ম: ১৯৮৬শূন্য দশক থেকে লেখালিখি।থাকেন কল্যাণীতে।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।স্রোত১বৃষ্টি থামার পর,জান্তব ফোঁটাকে জিগ্যেস করেছিলাম,'এত নিখুঁত তালিমপেলি কোথা থেকে?'২প্রচ্ছদ ছেঁড়ার পর,মনের গভীরেযে কষ গড়ায়,সে তো চন্দন ঘষা জল!৩বিদ্রোহ যার কাছে গিয়েনীরব হয়ে আসে,তাকে আমি বলিনিষিদ্ধ প্রেতপুরী।৪কত মুহূর্ত যায় ভেঙেগুঁড়িয়ে যায় হিরোসিমা,অবাধে তৈরি সরণীর কাছেবেফিকর দিল রাখব না...৫দফায় দফায়...
ভেবেছিলে ওই পারে শালবন আছে?
দীর্ঘ আর ঋজু। তারা কথা বলবে চোখে চোখ রেখে
ওই দিকে সুশীতল হাওয়া বয়, নক্ষত্রের ভিড়
তোমার নিষ্পত্র শিরে আঁকা হবে জ্যোতির-বলয়?
এপার মলিন বড়। আলোহীন রোগা ভালবাসা
মাঝারি মাপের, তাই মিহি অজুহাতে
ছিঁড়ে ফেলে স্নেহ-রজ্জু, গা থেকে খসিয়ে ফেলে প্রত্নপরিচয়
হেঁটে যাচ্ছ ওই পারে, যাও...
ওপারে এখন একা, দীর্ঘতর ছায়া পড়ে...
বইঘরের উদ্বোধনে, ভোরে
ঠান্ডায় হাড়হিম, সকলের নিঃশ্বাসে কুয়াশা বাড়ছে,
রাস্তায় বইঘরের উদ্বোধনে স্বরচিত জার্মান কবিতা পড়ছেন গিসেলা উইন্টারলিং।
এ হেন হিমাঙ্কের মাঝেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভিড়, সাংবাদিকরা সুদৃশ্য খাতায় তুলে রাখছেন দৃঢ় পঙক্তিগুলি।
রাউএনতালার স্ট্রিট বেয়ে বয়ে যাওয়া গাড়িগুলি থামিয়ে নেমে আসছেন,
ছুটির সকালে, কিছু লোকজন। প্রতিস্পর্ধী ভিড়টা ক্রমেই বেড়ে উঠছে।
কবিতা মধ্যেই করিম ধরলেন...
জানো, ভিক্ষুক এই তিনদিন
আকাশ হয়েছে, প্রভু সিন্নির
পাত্রে মিশিয়ে খেয়েছে অনেক
মায়া-প্রবন্ধ--- জানে জনে-জনে…
বিদ্বান হল দেহ-মন তাই!
প্রতিটি পাতায় সংকেত পাই
রোদ ওঠে রোদ পড়ে যায় জলে
সন্ধ্যা আসেন, প্রবন্ধ বলে:
‘আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা কর’
যত নারীস্রোত, ততদূর নর
প্রবন্ধকার তুলসি-মালিকা
আমি আশ্রিত, তিনিই চালিকা
তবু ভিক্ষুক অসম সাহসী
কাঁধে টিয়া পাখি, ডাকনাম: শশী
তিনদিন ধরে ওরা খড়কুটো
আগলে রেখেছে ঝড়ের উঠোন
বাকি...
কিশোর ঘোষগভীরতাঅন্ধকার জ্বলে উঠতেই বোঝা গেল রাত্রিমাঠ মাঠ কৃষিখেতের কবরশুকনো ফুলের মতো কৃষকের হৃদপিণ্ডপড়ে আছে সমাধিপথেরপাথরের বুকের উপর...আর ওই মৌন চাঁদ, চৈতন্যের আত্মহত্যার সাক্ষীর মতোমহাপ্রভু গভীরতা---ওর আলোর কীর্তন আমাদের মায়ের মতোনসুর করে জাগেওর পদাবলি আয়ু, প্রেমিকার মতো নরমিয়া২অতএব, রোগাটে পাড়ার পেটেবাড়ে অবৈধ দিগন্তের তলানি তারা,দূরকে কাছের করেদূরত্ব ভোলানো আবদারেপথ-ঘাট...
বেবী সাউমূলত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ বনঘাঘরা, ইউথেনেশিয়া, গান লেখে লালনদুহিতা, ছয় মহলা বাড়ি, একান্ন শরীরে ভাঙো। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের এক লুপ্তপ্রায় লোকসঙ্গীত নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণা গ্রন্থ- ‘কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত।’ভোটঅবিশ্বাস ঘুরে ঘুরে আসে গোলচত্বরের পাশে বিপ্লবের দেহমাছি ওড়ে উৎসুক জনতা তারাক্ষোভ নেই, শান্তি নেইশুধু...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল
রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো
তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা
সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল।
বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল
সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর
অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে
সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো।
জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে
জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি
তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...
এই যে নিশঃব্দের ঘরে অজ্ঞাতবাস আমার
একথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বাহির
আমার অন্তরের থেকে অনেক দূরে বসবাস করে।
তুমি আমার বাইরের মানুষটাকে ভালোবাসলে,
আমার অন্তরকে খুঁজে দেখলে না।
একটাই ক্ষীণ দুয়ার দিয়ে হাওয়া চলাচল করে,
একটাই দুয়ার ফিরে আসার, তুমি হাওয়ার কাছে
নিজেকে প্রশ্ন করো,
কেন অক্ষরের বিষ আমি পান করেছি।
কেনই বা আলেয়া ও অতি আলোর...
অনেকদিন প্রণাম করা হয় না কাউকে,
বৃষ্টির দিনে সাদা জামা পরে, ছাতা হাতে মানুষকে দেখলেই কেমন যেন মাস্টারমশাই বলে মনে হয়...
কালো মেঘের মতো দুর্নীতি ছেয়ে আছে আমাদের সবার উপরে;
ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
"কোন পথে যাব স্যার... এত বিভ্রান্তি, এত হাতছানি, এত অন্ধকার,
কোন পথে যাব স্যার?"
- "যে পথে গেলে আয়নার দিকে...
নিজের মতো এক সন্ধ্যায় কেটে ফেলি হাতের শিরা
ভ্রম এসে আমাদের ন্যুব্জ করে গেল
তার দস্তানার ভিতর লুকোনো ছিল মেঘের পাহারা
তারও ভিতর ক্রোধ, মামুলি অস্ত্র
চাঁদের দুধ পড়ে পুড়ে গেছে শস্য। আমি সেদিকে যাইনি আজ
ধোঁয়া-ওঠা সেই প্রান্তর বীভৎস এক অলৌকিক হয়ে আছে
নিজস্ব শিল্পের মতো কেটে ফেলেছি হাতের শিরা। শ্বাস বুজে আসার আগেও
একবার...
সন্ধ্যা তারা
পথে পথে জল
দুরূহ বেদনা!
পথে পথে বেজে যায় গান
ক্ষমার মতন
অদূরে গোলাপ
ভাঙা পাপড়ির শোকে
লেখাটি বিহ্বল!
বিকেলে পথিক নামে
সন্ধ্যার জটলা
একা একা তারা
উঠেছে আকাশে
প্রেমিকার মতো।
পুজো
সেই লেখাটিকে নতুন পোশাক দেব ভাবি
যার নাম, পাঠকের মুখে শুনি।
প্রেমিক
সে আসেনি
এসেছে কুয়াশা
বেড়াতে চোখের বাড়ি
আমি তাই
প্রহরী শুধুই
আমার ছায়ার!
শূন্যতা জানিল শুধু
সে কিছুই জানিলনা!
শুধু সুর বুকে নিয়ে গান
কিছুটা থমকে
ফের বেজে যায়
সন্ধের মায়ায়...
তুলনা
নবীন...
ভ্রমণ
তা হলে এমনই সন্ধ্যা লেখা ছিল বনের ভেতর
ছায়া নেমে আসে জলের মন্দির থেকে
সে ছায়ার হাত ধরে আমার ভ্রমণ শুরু হয়, এক জরায়ুর থেকে আরেক জরায়ু
মাঝখানে পাতা কাঁপে, ঝরে পড়ে দু-এক ফোঁটা জলের শরীর
সেক্সটনের মেয়ে
ভাঙাচোরা স্তনের ভেতর থেকে ভেসে আসছে এপ্রিলের আলো
একটি ক্যাথিড্রাল, পাখির ঠোঁটের মতো চূড়া
রোদ্দুর পড়েছে। তার ছায়ায়...
সুবীর সরকার জন্ম ১৯৭০ সালে। বেড়ে ওঠা উত্তর জনপদের কোচবিহার শহরে। নয়ের দশকে কবিতা লিখতে এসেছেন। ভিন্নধর্মী গদ্যও নিয়মিত লিখে থাকেন। বেশ কয়েকটি কবিতা ও গদ্যের বই রয়েছে। লেখা পড়া আর হাটগঞ্জের ভিতর ঘুরে বেড়ানোর যাপনেই মেতে থাকেন। প্রকাশিত হয়েছে একাধিক কবিতার বই।বাহান্নঘর কলোনি থেকেবাহান্নঘর কলোনি থেকে আমি আর্তনাদ তুলেএনেছিজোড়া...
মধুদা ডাকছে
মধুদা ডাকছে
সবাই বলছে, মধুদা ডাকছে
মধুদার এরিয়ায় থাকি
ঘাড়ে একটাই মাথা
কিন্তু ভয় পাব না আর
এখন আঙুল তুলতে হবে এখন প্রশ্ন করতে হবে
কী হবে এই আবছা স্বাধীনতার দেশে ফালতু বেঁচে থেকে?
যেখানে মহাত্মা গান্ধী টাকা হয়ে লুকিয়ে থাকেন বাথরুমের দেওয়ালে?
ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমরা রাজনীতি করি না
রাজনীতি আমাদের করে
রাজনীতি উপভোগ করে আমাদের...
সেতু
নদীটার নাম টুংটুং
এ নাম তুমি দিয়েছিলে।
লোকাল কোন নামতো নিশ্চিত আছে
অথবা ভৌগোলিক
যা ইচ্ছে হোক এ নদীর নাম টুংটুং।
সালটা মনে নেই। পুজোর একটু আগে
পরিকল্পনাহীন পৌঁছে গেছিলাম পাহাড় দেখব বলে।
নদীতীর ছুঁয়ে আছি চার হাত দিয়ে নদীজল
আমাদের উত্তরমাঠের বিপিনকাকা,পেশায় বাউল,
বলেছিল, নদীজলে পা দিও না
মেয়েমানুষের হৃদয়ের মতো নদী ব্যাথা পায়
তাই দুজনে ছুঁয়ে আছি জল...
দীপ শেখর চক্রবর্তীছায়া সম্পর্কে যতটুকু আমি জানিকিছুদিন ছায়ার কথা না লেখা হলে আমি মোটেই ভালো থাকি না।অযথা লোকের সাথে খিটমিট করি,অথবা গুমরে গুমরে নিজেকে করে তুলি আস্ত একটা ব্যথার পুতুল।ছায়া, যে গা এলিয়ে শুয়ে থাকে, ব্যস্ত হয় না।চারপাশে কড়া রোদের জীবন যাকে দেখে ছিঃ ছিঃ করে-বলে,এতটাও নিশ্চিত থাকা ভালো...
২৩শে মার্চ থেকে, বাড়িতে পাখি আসে শুধু ,
ফাঁকা ছাদে তারা চোখ মোছে –
আমাদের দেখা হয় না তবুও
সকালের আলো দেখে মনে পড়ে, চিঠি আসতো একদিন
পথে পথে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে ছায়া, বৃক্ষ,চরাচর
আকাশ ভরে যায় শোকময় প্রার্থনায়
বন্দরের ঘন্টা বাজে – বেজেই যায়
মুসাফির সব ফিরে গেছে বলে, শূন্য বিকেলে চৈত্র ওড়ে
একা !
খবরে...
অসুরের মুখে আমাদের শান্তিকামী জননেতার মুখ
আমাদের অহিংসার ক্ষত
নতুন নতুন পথ খুঁজছে মুখ লুকোনোর
বছরের পর বছর
কাকে চির অশুভের প্রতীক বানিয়ে
ত্রিশূলে বেঁধা কার হত্যাকান্ড দেখে
আমরা পথ খুঁজছি মঙ্গলকামনার!
আমাদের মঙ্গলঘট রক্তমাখা
আমাদের শান্তির দেবতার দিকে
নিত্য উঁচিয়ে ধরছি
ধর্ম আর মতবাদ-অন্ধতার ত্রিশূল
পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস পেরিয়ে
দিগন্তব্যাপী সত্যাগ্রহ আর অনশনের শেষে
কে আজ একফোঁটা...
ক্ষতনিঃসৃত নিদ্রার ভিতর জেগে আছি,
বিভ্রম নেই
কিছু জোনাকি এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় যাবতীয় নীরবতার বিস্তার
দূর নক্ষত্রে সান্ত্বনা খুঁজি। প্রস্তর যুগের ছেঁড়া পালক হয়ে বেঁচে উঠি
শান্ত দেহ থেকে উঠে আসে দারুচিনি কাঠের গন্ধ
দেখি, এক শীতকাল, সর্ষে-হলুদ শাড়ি পরে
আমার জন্য দু’হাত ভরে তুলে এনেছে শুষ্ক বরফ
আমি বয়ে যায়। জৌলুসে, উত্তাপে, অজ্ঞাত অসুখবোধে
নেশা...
ফুলের বাগান করার অভিজ্ঞতা নেই, বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা নেই। তবু একটা বারান্দা আমিও চেয়েছি। বারান্দার দড়িতে ভাঁজ করে ঝুলিয়ে রাখব জঙ্গল, কিছু পাখির ডাক, একটা পাহাড়ি নদী আর তাতে পা ডুবিয়ে তোমার হেঁটে বেড়ানো। যে রঙমিস্ত্রির দেয়াল রঙ করার কথা ছিল, বালতিতে রঙের ব্রাশ ডুবিয়ে ফিরে গেছে, তার উৎকণ্ঠাও...