ভ্রমণ
তা হলে এমনই সন্ধ্যা লেখা ছিল বনের ভেতর
ছায়া নেমে আসে জলের মন্দির থেকে
সে ছায়ার হাত ধরে আমার ভ্রমণ শুরু হয়, এক জরায়ুর থেকে আরেক জরায়ু
মাঝখানে পাতা কাঁপে, ঝরে পড়ে দু-এক ফোঁটা জলের শরীর
সেক্সটনের মেয়ে
ভাঙাচোরা স্তনের ভেতর থেকে ভেসে আসছে এপ্রিলের আলো
একটি ক্যাথিড্রাল, পাখির ঠোঁটের মতো চূড়া
রোদ্দুর পড়েছে। তার ছায়ায়...
সাউথ সিটি মল
'তোমার হৃৎপিণ্ড যেন বিনামূল্যে
ওয়াই ফাই জোন
ফ্রি সিগন্যাল যাবে তাই,
সারাক্ষণ ফোনে রাখি চোখ'
এই বলে দুজনেই
অক্টোপাস খেতে ঢুকে গেল
লিরিল যুবতী আর তার সঙ্গে ডেনিম যুবক
মনুমেন্ট
কলকাতা শুয়ে থাকা,
তীব্র এক রাক্ষসের নাম
মনুমেন্ট তার উথ্বিত শিশ্ন,
ত্বক ভেদ করে
ভরা পূর্ণিমার রাতে
মাতালেরা যখন ঘুমিয়ে,
শিশ্নমুখ চুঁইয়ে রক্ত মাখা গাঢ় বীর্য ঝরে পড়ে
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট
মিসেস ব্রিগান্জা...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা
বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন
চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি
মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি
নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...
ট্রেন যত এগোচ্ছিল গধনি পেরিয়ে
ততই কমছিল মানুষের তাড়া,
ট্রেনে ওঠা-নামার, দৌড়ে জায়গা ধরার....
জানালার ধারের সিট , তাতেও গা নেই ।
কানিমহুলি স্টেশন থেকে উঠল ,একই মন্ত্র জানা অনেক সোদর ;
নামবে গালুডিতে, হেঁটে যাবে স্বর্ণরেখার তীর ধরে ।
সুবর্ণরেখাকে ওরা স্বর্ণরেখা বলে ।
ফেরার সময় ছোটো লাল লাল শোলবাচ্চার পুরো চাকটাকে
জল থেকে পিঠে তুলে...
বড় মুখ করে বললে, সংসারই চলে না
এবার কবিতাটা ছাড়ো
ভিতরটা তোলপাড় করে দিলে
এতদিনের সখ্যটা নিজে-নিজেই খেলে
তোমাকে বোঝানোর ভাষাই নেই
কবিতা নেশাও নয়, কবিতা পেশাও নয়
কবিতার জন্যে মই বাইতে হয় না
কবিতার জন্যে আকাশেও উড়তে হয় না
মাটিতেও টলতে হয় না
আমার সংসার আর কবিতা মাখামাখি
ওরা সহাবস্থান জানে, ওরা রাগ-অনুরাগ জানে
ওরা জানে কবিতা সম্রাটের
আর একটু...
কত ছদ্মবেশ জানে তোমার প্রতিভা
অহংকারে নষ্ট এক নিষেধের মতো নেশায় আকুল হই। কত বিপ্রতীপে
ঘাই মারে মাছের স্বভাবে মন
ডুবে ডুবে জল খাওয়া চরিত্রের পেটে
এত বুদ্ধি ধরো তবু এত রাগ সামলাও কী করে!
তোমাকে নেব না ভেবে টেনে আনি ছোঁব না আঘাত
তবু দাও কলতলায় যেভাবে বালিশ পেতে
ধুয়ে দিলে মুখ্যুসুখ্যু ভ্রমে অন্ধ চোখের...
বুকের ভেতর জাহাজ ডুবেছে যত
নীরবতা নিয়ে মরে গেছি বহুবার,
আমার চোখেতে নালিশ ছিল না কোনো
হেরে যাওয়াটুকু মৃত্যুরই দাবিদার।
প্রশ্নতে ছিল অনেক চিহ্ন আঁকা
ঘেমেছে চশমা কমেছে জলের দাম,
চিরকুটে লেখা লোডশেডিং এর বুলি
প্রেম ভালোবাসা ভাঙনেরই সৎ নাম,
তাসের ভাগ্যে জোকার এসেছে হাতে
জবাব ছিল না, হাসিতেই জাদুঘর
কলব্রে-র থেকে নেমে আসে কোনো গাধা
পিঠে বাঁধা ছিল আপোসকালীন...
১
যা হচ্ছে তা হোক
যা হচ্ছে না তা হওয়ার বৃত্ত থেকে
খুলে খুলে পড়ছে শব্দ
মিথ্যের সত্যিরা লুকিয়ে থাকে ডানায়
সত্যির মিথ্যের জেগে থাকে বুকে....
কিছু জটিল শিরশিরানি
মানুষকে বাঁচতে দিচ্ছে গুটিপোকার মতো...
একটা দুটো সত্যি
আকস্মিক ভাগ্যের মুখে থুবড়ে পড়ে হাসে...
কান্নার এক আলোকিত জোর আছে বুকে
এখানে লুডোতে সাপ আর সাপ
সাপের শরীর ধরে মন্ত্র শিখেছি বলে
এখন আমাকে...
শ্যামশ্রী রায় কর্মকারমূলত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। গল্প লেখেন। অনুবাদ করেন। লেখা প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশ, ব্রিটেন, ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং পত্রপত্রিকায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরোজা রঙের ঘুম’। প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল- ‘বব ডিলান: অন্তহীন যাত্রা’, ‘বিটলস: বদলের তালে তালে’, ‘পল রোবসন: শিকল ভাঙার গান’।প্রবল ঝড়ের আগেকাছে এসে বসেছে...
যেটুকু আলো এসে পড়ে রিক্সার গায়ে
আমি তার হিসেব লিখে রাখি
বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়া আর গমগম করে না স্ট্যান্ড
ছাতিমের গন্ধে গলিপথ ভ্রমণ--
গোপনে নেশা ছাড়ানোর পোস্টার নেই
আগে-পরের মধ্যে বহুতল দীর্ঘশ্বাস
বসন্ত এসে গেলে মনে হয়
মানুষ আরো একা হয়ে গেছে!
জানো, ভিক্ষুক এই তিনদিন
আকাশ হয়েছে, প্রভু সিন্নির
পাত্রে মিশিয়ে খেয়েছে অনেক
মায়া-প্রবন্ধ--- জানে জনে-জনে…
বিদ্বান হল দেহ-মন তাই!
প্রতিটি পাতায় সংকেত পাই
রোদ ওঠে রোদ পড়ে যায় জলে
সন্ধ্যা আসেন, প্রবন্ধ বলে:
‘আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা কর’
যত নারীস্রোত, ততদূর নর
প্রবন্ধকার তুলসি-মালিকা
আমি আশ্রিত, তিনিই চালিকা
তবু ভিক্ষুক অসম সাহসী
কাঁধে টিয়া পাখি, ডাকনাম: শশী
তিনদিন ধরে ওরা খড়কুটো
আগলে রেখেছে ঝড়ের উঠোন
বাকি...
ফুলের বাগান করার অভিজ্ঞতা নেই, বিড়াল পোষার অভিজ্ঞতা নেই। তবু একটা বারান্দা আমিও চেয়েছি। বারান্দার দড়িতে ভাঁজ করে ঝুলিয়ে রাখব জঙ্গল, কিছু পাখির ডাক, একটা পাহাড়ি নদী আর তাতে পা ডুবিয়ে তোমার হেঁটে বেড়ানো। যে রঙমিস্ত্রির দেয়াল রঙ করার কথা ছিল, বালতিতে রঙের ব্রাশ ডুবিয়ে ফিরে গেছে, তার উৎকণ্ঠাও...
জাংশানে খুঁজি রোজ গজমতি মালা
প্রেমের ঘোড়ার সাজ চেতকের মতো
ছাই মেখে বসে আছে সাগর মেলায়
ভগীরথ এনে দেবে পয়োমন্ত জল
অপেক্ষা ফিরে যায় মুখ ভার করে
টেবিলে ডুকরে কাঁদে বেলিফুল সুগন্ধি রুমাল
মাছের পেটের খাঁজে রাজার আংটি খুঁজি আমি
বিদূষক কৌতুকে হিসেবের বিল দিয়ে যায়
গজমতি মালা হায় কখন পরাবে প্রিয়তমা
জরুরি বিভাগ বলে হাতে বড় অল্প...
উড়ো মেঘে এই যে খানিক বৃষ্টি হয়ে গেল
এই যে রাখালের মাঠ থেকে
ডেকে উঠলো হারানো বাছুর
হাঁসেরা পুকুর ছেড়ে শব্দ করতে করতে চলে যাচ্ছে
হাততালি দিচ্ছে ন্যাংটো বিভোর,
ভেজা ঘাস থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা স্নিগ্ধ
আমি তাকে অনুরাগ বলে ডাকি…
আমি হাঁটছি , আর
সোঁদা গন্ধে ভরে...
সন্দ্বীপের চর
বাবা নেই। মা নেই। শ্মশানের রাত। হেঁটমুণ্ড ছায়াবাহকেরা হরিধ্বনি তুলে মিশে গেল চুল্লির দ্বারে। একটা রাক্ষসী আগুন দুহাত বাড়িয়ে গিলে নিতে চায় চরাচর। কাকজ্যোৎস্নায় শিস দিতে দিতে পিশাচিনী তার পুঁজ-রক্ত-কফ রেখে গেল মাটির মালসায়। আশ্চর্য এ জীবনের কাঁথা-কানি কড়ি ও কোমল। নরম তালুতে রাখা বেলকাঁটার ভাব-ভালোবাসা। পুনর্জন্মের আশা...
হঠাৎ কোনো তপ্ত গ্রীষ্মদিন,
বৃষ্টি এলো শহরতলীর পাড়ায়
দু-চোখ জুড়ে অতীত কিছু ঋণ—
ঝাপসা স্মৃতি প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়
বিষাদ বুঝি জলের ছদ্মবেশে
আঁধার হয়ে রাখছে লিখে নাম
হঠাৎ যদি সন্ধ্যা এলো ভেসে
নিম্নচাপের মেঘে ছুটির খাম
দু-খানি ট্রেন ছুটবে দুইটি দিকে
বাজলো বাঁশি, বিসর্জনের ডাক,
কক্ষপথে চিহ্নটুকু রেখে
একলা মেয়ে একলা পড়ে থাক...
আপোষ
তোমার মুখে মুখোশ পরা— আমার মুখে মুখোশ
একটি চুমুর জন্য না হয় একটু করি আপোষ
একটু ছুঁয়ে তোমার হাত– সাবান জলে ধুই
ভ্যাক্সিন নেয়া প্রেমিক আমি; মন সেলাইয়ের সুঁই
প্রণয়ঘরে
আমি কেবল কান্না করি– যেদিন থেকে তুলো হলে! উড়ছো কেবল, ঘুরছো কেবল হাওয়ায়–হাওয়ায়— তেপান্তরে। বৃষ্টি রাতে পাই না কাছে, কুসুম কলির ঘ্রাণ উবে যায়!...
মানুষকে কতটুকু জানো তুমি ?
কী এমন জানো ?
মানুষ তো সাজানো বাগানও
তছনছ করে দিয়ে
চলে যায় দূরে
কোনও বনে
ভিড়ের ভেতরে থেকে কেউ যা শোনে না
সে তা শোনে
মানুষ তো ভরা বরিষণে মাঝ নদী
পেরোতে পেরোতে একা একা
গল্প হয়ে যায়
তুমি শোনো
গল্প থেকে হয় ইতিহাস
যা কিছু বাস্তবে নেই
সেই মাটি সেই জল...
বেশ কিছু কথা দিয়ে না রাখা
ফুল দিতে অপারগ যে শাখা
হাত ধরে-থাকা সেই বোবা হাত
থাকতে চেয়েও শেষে না থাকা
নেশাতুর, বেলাগাম সে রাতে
আদুরে ওমের লোভ পোহাতে
সোহাগের চৌকাঠ লঙ্ঘন
বিবেকের বেমক্কা জেহাদে
শীতঘুমে কুয়াশারা খেলাপি
ভুলে থাকা মানুষের থেরাপি
বসন্তে বিচ্ছেদ বেসোয়াদ
অপমান, বোকাদের সেরা ফি!
সময়কে হতে দাও নেশাড়ু
সংসারে সবাই তো দাবাড়ু
শেষ কথা শেষ চাল : কিস্তি
মৌত...
পোড়া রুটি ও কয়েকটি কবিতা
দ্বিতীয় ঢেউ
ভালো লাগছে না বলতে নেই
বলো লড়াই-ই জীবন
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে অস্বীকার করার
শক্তিকে বাঁচিয়ে রাখাটাই চিয়ার্স
বাকি সবকিছু আবর্জনা
টান মেরে ছুঁড়ে ফেলো
হাসো,লুটোপুটি খাও
কোনো নিউজ চ্যানেলের দিকে তাকিও না
বরং নিজেই একটা নিউজ হয়ে যাও
অদৃশ্য বিভীষিকাকে ছেয়ে ফেলুক আমাদের
অট্টহাসি...
এই প্রথম গোটা একখানা মহামারির
ময়না তদন্তের রিপোর্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে
মানুষের হাতে...