সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় | জন্ম ১৯৮৪
বসবাস বারাসাতে। কবিতার বই: চারদেওয়ালি চুপকথারা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন।
স্টেশন
হাওয়া আসে
বিছানার চাদর উড়ে যায়।
শোয়ার আগে এখনও পরিষ্কার পাতি।
ঝেড়ে ফেলি ছড়ানো বইয়ের গন্ধ,
দুপুরের ঘাম,
তোমাকে ছুঁয়ে থাকা সমস্ত জল।
পুরোনো পাড়ায় আজকাল যাওয়া হয় না আর।
কাঁচা মুদির দোকান, পঞ্চাশ পয়সার মৌরি লজেন্স।
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সদ্য ওঠা...
সতীন্দ্র অধিকারীজন্ম ১৯৯২ সালে।বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিত্যানন্দপুরে বেড়ে ওঠা এবং বসবাস।পেশা: টিউশন! শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।বিষাদভাষাহীন নিঃস্তব্ধ রাত্রির মতন কারো চেয়ে চেয়েথাকতে ভালো লাগে সাতাশটা বছর!সারা রাত জেগে কি করে মানুষেরা শাদা পাতায়মহাজাগতিক শূন্যতা আর শূন্যতার ভিতরলিখে রাখা সেই সব হাহাকারগুলি।একদিন রিখটার স্কেলও চৌচির হয়ে ছড়িয়ে পড়বেমেঝের ওপর।...
ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর
ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম...
১
তোমাকে লিখবো ভাবি
তুমি থেকে সম্বৎসর খসে গেলে
নাম না জানা আশীর্বাদ দাউদাউ জ্বলেছিল
আমাদের মাটি ও দিনাঙ্কে
তারপর একটি একাকী মন্ত্র
ঝরে পড়ল বিবাহের গায়ে
তুমি মৃদুতর হলে
আমি যৎসামান্য হলাম
তোমার অপলকের ভেতর
পলক পলক জল তুললাম
তোমার ভেতর চাঁদ স্বচ্ছ হলে
আমি বাহারী নাও নিয়ে
সাতটি জন্মের অনুপম, ঘরবাদলার কথাকন্না,
লুকোচুরির বৃষ্টি দেখে এলাম
তুমি স্বাদ ছুঁয়ে দেখো, গ্রহণের সূত্র...
আকাশ অংশত
বাকিটা না হয় রইল উহ্য
ইচ্ছেমত শব্দ রেখো
অথবা চুপচাপ
সাবধানে চলাফেরা কোরো
দৃষ্টির তীক্ষ্মতা মাছের চোখের মত ক্লান্ত
কোন বাণে বিঁধবে তাকে?
শীতকাল ফিরে এলো
ভাস্করের পাতায় পাতায়
তারপর কিছু সূত্র অথবা সমীকরণ
শুধু মনে রেখো
যে পাতা ঝরল অতর্কিতে
তার আর পুনর্জন্ম নেই
যে আসবে সে নতুন কেউ!
ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর
ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম...
সূর্য, ঘোড়া
বরং এবার আলাদা রাখি সূর্য, ঘোড়ার কথা।
মাটির যে ঢাল তেষ্টা চেনে, আইঢাই খুব–
মরতে গেল জলের কাছে। সূর্য তখন
তেষ্টা দ্যাখে, আচমনে সাজিয়ে রাখে খুরের দায়ভার।
ছুটছে আড়াল, ভাসান প্রখর, ডুবছে কাঁপন,
মন্থনবোধ উঠছে অধীর– দরদাম তার খোলস শুধুই
আনকোরা দাগ রেসের আওয়াজ– সাতটা শরীর স্রোতের
ফাঁকে রশ্মি চাটে, হিসেব রাখে, কখন অনুশাসন ভুলে...
একটা উত্তরকে প্রতিউত্তরের দিকে ঠেলে নিয়ে যাই
অপরাধের সূত্র ধরে কাঁচের ওপর দিয়ে হাঁটি
সন্তর্পণ জানালার বিচারক্ষেত্রের দিকে ঘুরে দেখি
স্পর্শের দক্ষিণ, থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে সিলিং ফ্যান
কণ্ঠার মৃদু হাড়ের ওপর জমে আছে অস্পষ্ট আঙুল
পোড়া মেঘের ছায়া এসে লাগে কাঁচের ওপর
আমি মুখ নামাই, জিভের করুণা খুঁজি,
খুঁজে দেখি পারা ওঠা আয়নার ওপর অবশ্যম্ভাবী...
সৈকত ঘোষরূপকথা নয়ঘটনাটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে,পৃথিবীর সব সম্পর্ক একটা জায়গায় এসে শেষ হয়নিজেকে গোপন করলেঅনুশোচনা বাড়ে মাত্রঘটনাটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারেজোয়ারের পর যেমন ভাঁটা আসেতেমনি তোমার লাবন্য খুঁজিদীর্ঘ বৃষ্টির পরসিনেমা থেকে উঠে আসা চরিত্রগুলো ঘুরপাক খায়আমি জীবিত,মৃত্যু লিখি ...জরাসন্ধের বিছানাভূ-ত্বকের নীচে ক্রমাগত বিস্তার পাচ্ছে অধিকারবোধআমাদের জামাগুলো...
তাপস চক্রবর্তীজন্ম ১৯৭৪পেশা- ইঞ্জিনিয়ারপ্রকাশিত গ্রন্থ- কবি ও ঈশ্বর, জলমুখোশ ও সন্ধের কবিতাগুচ্ছ, ক্রুসেডরভ্রমণঅসংখ্য মানুষ ঘোরে।তাদের অজস্র সাঙ্কেতিক ভাষাবিদেশি নাবিক বোঝে চোখে চোখেসমুদ্রপিপাসা।আছড়ে পড়ছে ঢেউ।মাঝিদের বুকে গর্ত। লবণের খাদ।ঘোর লেগে নুলিয়ারা ডোবে।ডুবে যায়। ভাসে আর্তনাদ।আজানের ঘন্টা বাজে। ঘরে ফেরে দরিদ্র নমাজী।হারায় সঙ্কেতভাষা। বিপন্ন জাহাজী । সঙ্গমধোঁওয়া ওঠে। পাক খেয়ে ধোঁওয়া চলে...
দু পাত্র ঘিয়ের মধ্যে ঢেলেছো আগুন,
দাউদাউ ফূর্তি হলো রাত থেকে ভোর,
হোমে কিংবা যজ্ঞে ভেবে তুমি হেসে খুন;
ভোরবেলা বাগানে ঢোকে দুই ফুলচোর!
হাতের ছোঁয়ায় তারা ভরে তোলে সাজি,
তুমি দেখে নিদ্রা যাও, আমি গাঁথি মালা,
বিগ্রহ কালো রঙের এবং মেজাজি,
ঘিয়ের শিশির পাশে নৈবেদ্যর থালা৷
ঘুম ভেঙে হঠাৎ তুমি হাত দিলে ওটায়,
আগুনও দাউদাউ জ্বলে ঘিয়ের...
সঞ্চারী ভৌমিকপ্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের স্নাতকোত্তর প্রথম বর্ষের ছাত্রী।বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালিখি।একমাত্র বই ‘আলপনা বাড়ি‘।১.খুব বৃষ্টি হলে মাটির রঙ বদলে যায়,বৃষ্টিতে ভেজা নরমমাটি কে দেখলে আমার মায়ের কথা মনে পরে;সোঁদা গন্ধের গায়ে লেগে থাকে সদ্যমাঠ থেকে ফিরে আসা মায়ের ক্লান্তিজল।বৃষ্টিতে মাটির সর্বশরীর ভেজে, আগুনআঁচ আমার মায়ের শরীর ভেজায়।তখন...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম
বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন
অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা
দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম
নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে
রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন --
তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি!
আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি
দেবীগন্ধ ছেড়ে...
বিশ্বজিৎশব্দের বিপরীতে১চুপ থাকাএক অসম্ভব শিল্প।জানি,কেউ কারোর ধার ধারে নাকেউ কারোর ঘর চালায় না।তবুও টিকিটএকই স্টেশনের দিকে…২অসুখ-বিসুখেতুমি থাকাটা জরুরি।তুমি নামটাই সব…সারাদিন পারদ ওঠে-নামেতুমিও ওঠা,নামার ভেতরপৃথিবীজুড়ে একটা কার্ফু চলছে৩জন্ম নিয়ে প্রশ্ন বাড়েশিক্ষার কোনও শেষ নেই।শূন্য বাড়তে বাড়তেসংখ্যারাও মুখোমুখি ভাস্কর্যে…৪মৈথুন শেষেসব অভিমান কেটে যায়।দিন বদলে আলোর কাছাকাছিছুঁয়ে যাই…একে অপরের মুহুর্ত
হেমন্ত
এসব গোধূলি আলো
স্বজন হারানো লোভে একা
পথেই পায়ের ছাপ তারপাশে লিখে রাখা ঘাতক আলোয়
আঁকশি ফেরানো চোখে
ফেরা যায়! বলো!
দেহ নেই! জন্ম নেই
মাতৃহননের সুরে
কাকেই বা প্রিয় ডাকি, কাকে যে দেবতা !
এসব গোধূলি আলো একা...
সন্ধ্যা
কাকে বল ছায়া?
আলোর দরজা পেতে, রোজ সেও হেঁটে গেছে জারুল বাগানে
মৃত গাছেদের চোখে ঘৃণা জন্ম নিতে দেখে--
চুপচাপ পুঁতে দেয়...
কনিষ্ঠ সময় চিনি। আমারই বরেণ্য ডালে পাখি
জ্যোৎস্নায় ডানা মেলে, শালবনে আলো মাখামাখি—
অবাধ মৈথুন শেষে ফেরে। ফের, উড়ে যায় বনে
বিষাদ প্রস্তর ভেঙে পথ তৈরি করেছে যাপনে…
কখনও রক্তাক্ত তির, ক্রৌঞ্চশাবকের ডানা ছিঁড়ে
বেপথু ও পরাহত। শবরেরই আকন্ঠ নিবিড়ে
গভীর আশ্রয় চায়… চায় শব্দে উচ্চারিত হোক
বহুবর্ণ সময়ের ওড়াউড়ি স্তব্ধ করে, শ্লোক—
সে-শ্লোক বন্ধক রেখে সময়ের...
ব্রহ্মজিৎ সরকারপ্রথম দশকের কবি। সীমান্ত ঘেরা ছোট্ট জনবসতি হলদিবাড়িতে বেড়ে ওঠা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালিখি। প্রকাশিত কবিতার বই ‘জড়িয়ে আছি কাঁটাতার’।চেপে রাখা কান্নাএকটা সকাল এসে, হাওয়া আর মেঘ এসেবন্ধ জানালা খুলে দিকপৃথিবীতে কি কারণে ঘুমঅন্ধ কুয়োর মত মজে আছে!পুরুষেরা কেন আজ বামন হয়ে গেছে?স্বপ্নের ভেতর যারা পেরিয়ে এসেছে নদীসেই সাঁকো...
কথা বেড়ে দিচ্ছে স্ত্রী
বেকার স্বামীর থালায়
এমন রেসিপির বিকল্প কিছু নেই
বনের শেয়াল, শহরের নেড়িকুত্তা
সকলে বুঝতে পারছে
আজ কবি-র বাড়িতে রান্না হচ্ছে প্রেম
হাত-বদলের হাসি আমাকে আশ্বস্ত করে নৌকা খুলে রাখে।
এবার পতন হবে: যেমন দক্ষিণা দেবে এই পরপারে
মন্ত্রোচ্চারণে কাঠের তৃষ্ণা তেমনই উজ্জ্বল হবে
অমাবস্যা ঢালা হবে শ্বেতকরবীতে
তুমি কি মাধবী ছিলে?
জলতলে অনাগত নিমগ্ন সূর্যাস্ত?
পাতাবাহারের রাতে কোমল কড়ির খেলা এমন উদিত হবে শ্রীপুষ্পসঙ্কটে
না জানি আকর্ষ তার কার কাছে ভেসে ভেসে যাবে
খুঁটে বাঁধা অভিকর্ষ--এমন আরতি...
উড়ালের আগে যতটা আড়াল
যেভাবে গান মিহি হয়ে আসে রাতের দক্ষিণে
নামে বেনামে চিনে নিতে থাকি মানচিত্র
সুড়ঙ্গেরও নিচে, যেখানে টান জন্ম নেয়
ডাকে, ডাকে, ডাকতেই থাকে
আর কত নিচে নামবো!
প্রতিবর্তে স্পষ্ট হই রোজ