নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও
এখনো ভিড়ের মাঝে ?
কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে?
গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে
অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ
শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে
নীরবে নিভৃতে করা যায়।
সেইক্ষণে
মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে।
ফিরে এসো জনসভা থেকে
ফিরে এসো ভিড় থেকে
বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি
এখনো ভিড়ের মাঝে...
সমরেশ মুখোপাধ্যায়জন্ম সত্তর দশকের প্রথমার্ধে। শিক্ষা ইংরেজি সাহিত্যে এম এ। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় শুকতারা পত্রিকায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ শামুকজন্ম। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ -বিষণ্ণ দাবার কোর্ট, তোমার ইঙ্গিত বুঝি, পুর্বপুরুষের ছায়া, নক্ষত্রবাড়ি, খাদের কিনারে একা। ২০১৫ সালে বনলতা পুরস্কার, ২০১৬ সালে অমিতেশ মাইতি স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৭ সালে নতুন কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন।দীপাবলির...
শংকর দেবনাথ (Sankar Debnath)
ক্ষমতাসীনের প্রেম
৪
চাষির লাঙল আর
মাঝির বৈঠা
সমানুপাতিক ৷
লাঙলের ফলা
ফালাফালা করে দেয়
জমির হৃদয় আর
বৈঠা কাটে
নদীর নাব্যতা মেনে
জলের শরীর
বস্তুত ক্ষমতা-হাত
গোলা ভরে আর
পৌঁছে দেয় গন্তব্যের
প্রিয় ঠিকানায়।
প্রকৃত প্রস্তাবে প্রেম
জোরাজুরি চায়।
ছন্দম মুখোপাধ্যায়ছায়া গণকতাকানো যেতে পারেসমৃদ্ধ কৃষকের স্ত্রী হবার পরবুঝেছি ফসল ঈশ্বরী নয়গোসাপযে, ঘামে, হাসির আড়ালে,স্পর্শটুকু কেড়ে রাখেআমি দাঁড়িয়ে থাকলাম,দেহসাঁটা আলোয়, মাঠের একপাশেযেখানে কোনো স্বপ্নের উদ্বৃত্ত পড়ে আছেসফরজেগে উঠেছেপুড়ে যাওয়া গো-হরণের খালযাকে ঘিরে রয়েছেসুয়েজের থেকেও গভীর একটি রাতধাক্কা নেই,চারপাশে মৃত জনপদতৃতীয় পৃথিবীএ-সবের ভেতরলণ্ঠনের আলোয় রোগা হয়ে যাওয়ানদীর মতো মা, তোমার...
উড়ো মেঘে এই যে খানিক বৃষ্টি হয়ে গেল
এই যে রাখালের মাঠ থেকে
ডেকে উঠলো হারানো বাছুর
হাঁসেরা পুকুর ছেড়ে শব্দ করতে করতে চলে যাচ্ছে
হাততালি দিচ্ছে ন্যাংটো বিভোর,
ভেজা ঘাস থেকে গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা স্নিগ্ধ
আমি তাকে অনুরাগ বলে ডাকি…
আমি হাঁটছি , আর
সোঁদা গন্ধে ভরে...
আপেল, ছুরি, জলের পাত্র,
না-খোলা খবরের কাগজ
আরো কিছু অনাবশ্যক দৃশ্য
আর আছো তুমি-নেই ফলের খোসা ছাড়ানোর দৃশ্যের মত—
খুব সাবধানে, সন্তর্পণে চেঁছে নেওয়া
ফলের অযথা মাংস যেন না ফলের খোসার সঙ্গে যায়…
যে-তোমায় সমীচিন করে তুলেছে সে এই
ছুরিবিদ্ধ ফলের গায়ে সকালের গমগমে রোদ
নাবিক জলের গাথা
১
প্রাচীন নাবিক তুমি, তারও চেয়ে প্রাচীন এই যান
সময় সায়াহ্ন কাল।একটি রমণী বর্শা চিরে দিল
মাছের ওই পুংকেশর ঝাঁক।
২
সেই পাপ আদিপাপ
লাগলো এসে জলের সংসারে
জলের বিরুদ্ধভাব চাকার ঐ জটিল ঘূর্ণনে।
৩
মাঝখানে টুকরো ডেক
মেঘমনা নাবিকের ঘর
মাস্তুলের চেয়েও দীর্ঘ
তার ভাঙা ছায়ার বহর।
৪
অ্যালবাট্রস উড়া দিলে
তুমি বলো, হেমিংওয়ে
আমি কি পাব না জলে পূণ্য কড়িকাঠ!
কোর্ট চত্বর
সাদা...
নিজের মতো এক সন্ধ্যায় কেটে ফেলি হাতের শিরা
ভ্রম এসে আমাদের ন্যুব্জ করে গেল
তার দস্তানার ভিতর লুকোনো ছিল মেঘের পাহারা
তারও ভিতর ক্রোধ, মামুলি অস্ত্র
চাঁদের দুধ পড়ে পুড়ে গেছে শস্য। আমি সেদিকে যাইনি আজ
ধোঁয়া-ওঠা সেই প্রান্তর বীভৎস এক অলৌকিক হয়ে আছে
নিজস্ব শিল্পের মতো কেটে ফেলেছি হাতের শিরা। শ্বাস বুজে আসার আগেও
একবার...
কতকিছু প্লাবিত হয়ে যায়
বাবাকে দেখেছি ভাসমান নৌকোর মতো
ভেসে যেতেন এঘর ওঘর,
শাঁখের ধ্বনি শুনে কী ভাবে সন্ধ্যা হয়-
রক্তাভ আকাশ, তাও দেখেছি। শুনেছি
এই নৌকো, এই শাঁখ নাকি বংশের পরম্পরা।
বাজার থেকে মরামাছ এলে হাবুডুবু খেতো
উঠোনের জলে,
তা দেখে বঁড়শির মতোন হাসতেন ঠাকুমা,
সাদা থান ঠেলে ঝুলে পড়তো জীবনের অস্তরেখা।
আমরা যারা ছোট্টো...
শরবিদ্ধ জলপিপি যেভাবে জলের কাছে যায়
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে আমি সীমাহীন পিপাসায়
দেখতে চেয়েছি তোমাকে; ক্ষান্তি নেই অনন্ত ছোটার
গ্রাম পেরিয়ে শহর, শহর পেরিয়ে গ্রহান্তর
ঘাসে ছাপ ফেলতে ফেলতে আমি কত দূর দূর গেছি
সুধার সন্ধানে যায় মহাবনে যেমন মৌমাছি
সন্ধেবেলা যে পরিটি সপেখম ফুচকা খেতে আসে
পাইন পাতার মতো কাঁপি ওর ভোরের বাতাসে
ওই যে গ্রিলে...
সতীন্দ্র অধিকারীজন্ম ১৯৯২ সালে।বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিত্যানন্দপুরে বেড়ে ওঠা এবং বসবাস।পেশা: টিউশন! শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।বিষাদভাষাহীন নিঃস্তব্ধ রাত্রির মতন কারো চেয়ে চেয়েথাকতে ভালো লাগে সাতাশটা বছর!সারা রাত জেগে কি করে মানুষেরা শাদা পাতায়মহাজাগতিক শূন্যতা আর শূন্যতার ভিতরলিখে রাখা সেই সব হাহাকারগুলি।একদিন রিখটার স্কেলও চৌচির হয়ে ছড়িয়ে পড়বেমেঝের ওপর।...
ওরা জন্ম নেয় মৃত্যুর তাগিদে,
সাঁতার শেখেনি বলে জলকে দূর থেকে দেখে
বুকের বোতাম যদি ভুলে যায় পোশাকের প্রয়োজন
আমরা কী ওদের হব না কোনদিন ?
বালিশের গভীরতর তুলো বাঁচতে চায় না যেমন
চাকা ঘুরছে বাম থেকে ডানে,
আমি ঘুরছি মাথার ভিতরে অন্ধকার পুষে
আলোর থেকে দূরে...
মহড়ায় সাতদিন গিয়েছি ।
দু'হাতের মুঠিতে এনেছি ছাই ভস্ম পরিমাণ মতো,
লাট্টুর...
জাহিদ সোহাগমানুষএ-ও এক বিশ্বাস, যারা আগুনের অবশেষ দেখে ছাই; আমি এর উল্টো দেখি। যেমন, মানুষ স্থির, গাছ ভ্রমণশীল : রক্তপাত ও আদর্শ তাদের দরকার।মানুষের কিছু নেই বুক ফাটিয়ে সোনালু জন্ম দেয়া ছাড়া, অন্য সময়ে লাল। যেমন প্রেমের চেয়ে পরিখার কুমির সহনীয়। সিরিয়া সারাদিন শূন্যে তাকিয়েছিলাম। মনে হলো রুটিবৃষ্টি হবে শিগগিরই। রাত মানে...
সুবীর বোসবহু পত্রিকায় তাঁর কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত বই: আঙুলের সংলাপ, ভাঙা কলমের আন্তরিকে।ছায়া যুদ্ধমধ্যবিত্ত শেষ বিকেলে শুনেছি সংলাপআমি তো বেশ ভালোই আছি আমার গূঢ় পাপঅনুদ্ধারে দিব্যি আছি তোমার কথা বলোআমি এখন ছায়া যুদ্ধে ভীষণ টলোমলোএকাই হাঁটি অমনস্ক পাহাড় নদী ভুলেকারণ জানি আমার পাপে দোষ লেগেছে ফুলেএবার...
ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর
ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম...
সৈকত আরেফিন
শিক্ষক
বাংলা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
পাখি
গোধূলি-গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা
নিতান্ত খেলাচ্ছলে তুমি জানতে চাইলে
প্রিয় পাখির নাম
আসন্ন সন্ধ্যার ম্লান অন্ধকারে
তোমার মুখের দিকে তাকালাম--
কত সহজ প্রশ্ন! অথচ তাতেই দিশেহারা
আমি তুমুল হাহাকারে
দীর্ণ হতে হতে পাখিটির
নাম বললাম।
পাখি আমার একলা পাখি—
পৃথিবীতে কত পাখি আছে
কত গান আছে
অথচ বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি
গানঅলা একটি পাখিই
চুপে বসে আছে।
আমার যা কথা...
ভেবেছিলে ওই পারে শালবন আছে?
দীর্ঘ আর ঋজু। তারা কথা বলবে চোখে চোখ রেখে
ওই দিকে সুশীতল হাওয়া বয়, নক্ষত্রের ভিড়
তোমার নিষ্পত্র শিরে আঁকা হবে জ্যোতির-বলয়?
এপার মলিন বড়। আলোহীন রোগা ভালবাসা
মাঝারি মাপের, তাই মিহি অজুহাতে
ছিঁড়ে ফেলে স্নেহ-রজ্জু, গা থেকে খসিয়ে ফেলে প্রত্নপরিচয়
হেঁটে যাচ্ছ ওই পারে, যাও...
ওপারে এখন একা, দীর্ঘতর ছায়া পড়ে...
বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়হৃদরোগ ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।কবি, গল্পকার, গদ্য লেখক এবং অনুবাদক। প্রকাশিত বই সংখ্যা ১৪সম্পাদনা করেছেন একাধিক বাঙলা ও ইংরেজি পত্রিকা।কবিতার জন্য পেয়েছেন দু’টি পুরস্কার।ভালো শহরখারাপ শহর থেকে ভালো শহরের দিকে কবে যাব?যে পথ দেখাবে সেওপথ হারিয়েছে।কালো চশমা পরে আমিহাসপাতালের গেটে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছি।পথে কেউ নেই।প্রতিটি পায়ের শব্দ, এ শহরে, সন্দেহজনক।কেউ...
হাবীবুল্লাহ সিরাজী | জন্ম ১৯৪৮
বাংলা ভাষার অগ্রগণ্য কবি। বসবাস ঢাকায়। তাঁর একাধিক বই প্রকাশিত হয়েছে। কয়েকটি বইয়ের নাম-- 'কত কাছে জলছত্র', 'কত দূর চেরাপুঞ্জি', 'কাদামাখা পা', 'ভুলের কোনও শুদ্ধ বানান নেই', 'শূন্য, পূর্বে না উত্তরে', 'আমার জ্যামিতি' ইত্যাদি। ২০১৬ সালে সম্মানিত হয়েছেন একুশে পদকে। বর্তমানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।
পরীক্ষা প্রার্থনীয়
শাদা...
বইঘরের উদ্বোধনে, ভোরে
ঠান্ডায় হাড়হিম, সকলের নিঃশ্বাসে কুয়াশা বাড়ছে,
রাস্তায় বইঘরের উদ্বোধনে স্বরচিত জার্মান কবিতা পড়ছেন গিসেলা উইন্টারলিং।
এ হেন হিমাঙ্কের মাঝেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভিড়, সাংবাদিকরা সুদৃশ্য খাতায় তুলে রাখছেন দৃঢ় পঙক্তিগুলি।
রাউএনতালার স্ট্রিট বেয়ে বয়ে যাওয়া গাড়িগুলি থামিয়ে নেমে আসছেন,
ছুটির সকালে, কিছু লোকজন। প্রতিস্পর্ধী ভিড়টা ক্রমেই বেড়ে উঠছে।
কবিতা মধ্যেই করিম ধরলেন...