Home বাংলা কবিতা

বাংলা কবিতা

বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত নিঃশব্দে বহন করি, একা হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার কোনো অন্তিম নেই, জানি- তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায় তার পিছু পিছু একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা... লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...
উত্তর কলকাতার এক নিষিদ্ধ পল্লীর প্রায়ান্ধকার ঘরে চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় খুঁজে পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালি'র ইন্দির ঠাকরুণকে   এ যেন এক আবিষ্কার কবি রিলকে ও ভাস্কর রদাঁর কিংবা বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের প্রথম সাক্ষাতের মতো।   গাল তুবড়ে গেছে, শরীর ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ আশি বছরের বৃদ্ধা চুনিবালা নিঃশব্দে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন জীর্ণ ঘরের এক কোণে— বলার মতো ঘটনা চলচ্চিত্রে-মঞ্চে...
বালক বয়সে গিঁট খুলতে পারিনি বলে তোমার তীর্থস্থানটি দেখা হয়নি আমার। তারপর গোয়ালন্দ স্টিমারঘাট পেরিয়ে উইপোকার মতো অচেনা দেশের মাটি দিয়ে ঘর বানিয়েছি আমরা ক'জন। ভাগ্যিস তোমার তোমাকে ছাড়া আর কিছু দেখিনি সেদিন তাই শুধু অপরূপ মুখশ্রী নিয়ে আজও তুমি বেঁচে আছো স্রোতস্বিনী কর্ণফুলি হয়ে। তারপর দিন গেছে মন্বন্তরে রাত্রি গেছে বেহুলা-ভেলায়। নিষিদ্ধ মাংসের লোভে কতবার চরিত্র দূষিত হয়ে...
তৃতীয় রঙের মতো শিশু বেড়ালেরা ঢুকে পড়েছিল বলে তুমিও ছায়ার উল্টো দিকে বসে প্রত্যাশিত জমির দখলে নেমে পড়তে গিয়ে দেখো গোল গোল থাবা ঢুকে গেল কোলে কাঁখে এবং বেরালে নিয়ে সেই সব শিকারীর স্তনযন্ত্রণাকে যাতনা মানে তো মুখে অচেনা স্বাদের আনাগোনা চলে আর শ্রাবণ মাসের মধ্যে রেখে আসা ছোট ছোট পাগল পাহাড় পাহাড়ের ফুল দোলে,...
রোজ রোজ ভুলে যেতে চাই তবুও সেই অবাধ্য পিছুটান, প্রতিদিনের আশ্বাসে হারিয়ে ফেলেছি নিজস্বতা, স্তূপীকৃত জঞ্জাল থেকে তুলে নিয়ে ছিলাম পরম সমাদরে, গঙ্গাজলে ধুইয়ে দিয়েছিলাম গা, সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছিলাম বাদশাহী আতর। লুডো খেলায় দানটা চেলে ছিলাম প্রথম থেকেই ভুল। কখনো কখনো তিন ছক্কা ও তোমাকে নিরাশ করতে পারে, সামান্য একটা পুঁট জিতে নেয় জীবনের বাজী। কেউ খুশি তোষামোদে, কেউবা আভিজাত্যে...
এভাবেও চলে যাওয়া যায়! যেভাবে মেলার ভিড়ে পাঁচ বছরের ছেলেকে কোনও দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে বাবা দু'মিনিট আসছি বলে নিরুদ্দেশ, যেভাবে বৌয়ের হাতে সকালের চা খেয়ে ঘুমন্ত ছেলেমেয়েকে রেখে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে মানুষটা ফেরে না আর, সেভাবেই আমাদের ফেলে চলে গেলে। রোদ্দুরে আর অঝোর বৃষ্টিতে আশ্রয়হীন পথ চলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও দিলে না। এখন এত রক্তক্ষরণ,এত নিঃশব্দ শ্রাবণ নিয়ে কী...
সুব্রত দেবনাথ (Subrata Debnath) ফ্রেম একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে আমার চোখ বাঁধা ফ্রেমের বাইরে চোখ নিতে পারি না চেষ্টা করলে হয়তো পারতাম, কিন্তু সে চেষ্টায় ব্যর্থ । জন্ম থেকেই এই ফ্রেমে বন্দি আমার আর্টিস্ট এভাবেই আমাকে গড়েছে । যতবার ফ্রেমের বাইরে তাকাবার চেষ্টা করেছি পাশের ফ্রেম থেকে আওয়াজ এসেছে ধমকের সুরে ! আর সাহস হয়নি। দেখেছি ফ্রেমের বাইরে যারা তাকাবার দুঃসাহস...
নাবিক জলের গাথা ১ প্রাচীন নাবিক তুমি, তারও চেয়ে প্রাচীন এই যান সময় সায়াহ্ন কাল।একটি রমণী বর্শা চিরে দিল মাছের ওই পুংকেশর ঝাঁক। ২ সেই পাপ আদিপাপ লাগলো এসে জলের সংসারে জলের বিরুদ্ধভাব চাকার ঐ জটিল ঘূর্ণনে। ৩ মাঝখানে টুকরো ডেক মেঘমনা নাবিকের ঘর মাস্তুলের চেয়েও দীর্ঘ তার ভাঙা ছায়ার বহর। ৪ অ্যালবাট্রস উড়া দিলে তুমি বলো, হেমিংওয়ে আমি কি পাব না জলে পূণ্য কড়িকাঠ! কোর্ট চত্বর সাদা...
সন্ধ্যা তারা পথে পথে জল দুরূহ বেদনা! পথে পথে বেজে যায় গান ক্ষমার মতন অদূরে গোলাপ ভাঙা পাপড়ির শোকে লেখাটি বিহ্বল! বিকেলে পথিক নামে সন্ধ্যার জটলা একা একা তারা উঠেছে আকাশে প্রেমিকার মতো। পুজো সেই লেখাটিকে নতুন পোশাক দেব ভাবি যার নাম, পাঠকের মুখে শুনি। প্রেমিক সে আসেনি এসেছে কুয়াশা বেড়াতে চোখের বাড়ি আমি তাই প্রহরী শুধুই আমার ছায়ার! শূন্যতা জানিল শুধু সে কিছুই জানিলনা! শুধু সুর বুকে নিয়ে গান কিছুটা থমকে ফের বেজে যায় সন্ধের মায়ায়... তুলনা নবীন...
হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক। ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে ...
কোন অনুতাপ বা অভিযোগ ছাড়াই আমি এঁকে ফেলি চাঁদ, চুম্বন আর মরণাপন্ন বেহালা তুলির টানে সম্পূর্ণ করি নদীর বাঁক, মন্দার বন এই ক্যানভাস আর গৃহস্থালি আমি মেলাতে পারিনা সমস্ত দিনের শেষে নোনাধরা দেয়াল, হয়তো বা অনায়াসে ছেড়ে চলে যাই ভাঙনের শহর... তোমারও কি মনে পড়ে পুরুষালি ভ্রমণকাহিনী সূর্যাস্তের মুহূর্ত, গানের কলি, জৈব রসায়ন রোদের নামতা, ছায়ার নামতা,...
দেবাশিস তেওয়ারীজন্ম ১৯৮২২০০২ সালে দেশ পত্রিকায় কবিতা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে পাঠকসমাজে পরিচিতি।বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে নিয়মিত লেখালিখি করেন। অনুবাদ সাহিত্যে আগ্রহী।প্রকাশিত হয়েছে ছয়টি কবিতার বই।নারীভিতরে ভিতরে একটা মেঘের জন্ম হলেবৃষ্টি পড়ে, ঝমঝমিয়ে ভিজতে থাকে পাতাবাহারের পাতা।তোমার রংবেরঙের ইচ্ছেডানা মেলে উড়তে থাকে আরকুর্নিশ জানায় আমার আঁধার রাতের অশনিকে।সামনের লন তখনও ভেজেনি অথচভিতরে ভিতরে...
অনেক অশান্ত নদী পেরিয়ে এসেছে নিস্তব্ধতা অনেক ঘুমহীন রাত পেরিয়ে আসে জানলা পৃথিবীর মতো সুখী হতে চাওয়া চাতক দম্পতি চঞ্চুতে চঞ্চু ঠেকায়, তবু রাত আনচান ঘুমের রক্তাক্ত স্বপ্নেরা একমুঠো বুকেতে হানে আগুন অভয় দেয় পৃথিবী তবু চিলেকোঠা ছেড়ে মাটি খুঁজি, অর্থভেদ করি, তাড়াও খাই ঘুমহীন রাতে কিন্তু বিশ্বাস করার মতো কোনো অমৃতের ডাল ছিলনা কখনো। তাই দুহাত...
কতদিন বৃষ্টি পড়ে না বুকের পাটায় সকারণ ভেজেনি পাঁজর জলের খাতায় পাঁচিলে শ্যাওলা জমেছে অবোধ হৃদয় ঘড়িদাগে সেসব আজ শুধু অসময় নিয়েছি দুহাত মাটি, চাক ঘোরে লাঠির খোঁচায় জল সরে গিয়ে, পলি গভীরে, সব দেখা যায়
এই যে নিশঃব্দের ঘরে অজ্ঞাতবাস আমার একথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বাহির আমার অন্তরের থেকে অনেক দূরে বসবাস করে। তুমি আমার বাইরের মানুষটাকে ভালোবাসলে, আমার অন্তরকে খুঁজে দেখলে না। একটাই ক্ষীণ দুয়ার দিয়ে হাওয়া চলাচল করে, একটাই দুয়ার ফিরে আসার, তুমি হাওয়ার কাছে নিজেকে প্রশ্ন করো, কেন অক্ষরের বিষ আমি পান করেছি। কেনই বা আলেয়া ও অতি আলোর...
কামাল চৌধুরী | জন্ম ১৯৫৭ বাংলা ভাষার অগ্রগণ্য কবি। তাঁর কয়েকটি বইয়ের নাম এই পথ এই কোলাহল, এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা, রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল, পান্থশালার ঘোড়া ইত্যাদি। ২০১২ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। বসবাস ঢাকায়। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৭ সালে। একটি দাদাবাদী কবিতা ভেতরে ভেতরে দাদা, তুমি দাদা ভেতরে ভেতরে পরাবাস্তব ইটা...
জাহিদ সোহাগমানুষএ-ও এক বিশ্বাস, যারা আগুনের অবশেষ দেখে ছাই; আমি এর উল্টো দেখি। যেমন, মানুষ স্থির, গাছ ভ্রমণশীল : রক্তপাত ও আদর্শ তাদের দরকার।মানুষের কিছু নেই বুক ফাটিয়ে সোনালু জন্ম দেয়া ছাড়া, অন্য সময়ে লাল। যেমন প্রেমের চেয়ে পরিখার কুমির সহনীয়।  সিরিয়া সারাদিন শূন্যে তাকিয়েছিলাম। মনে হলো রুটিবৃষ্টি হবে শিগগিরই। রাত মানে...
বুকের ভেতর জাহাজ ডুবেছে যত নীরবতা নিয়ে মরে গেছি বহুবার, আমার চোখেতে নালিশ ছিল না কোনো হেরে যাওয়াটুকু মৃত্যুরই দাবিদার। প্রশ্নতে ছিল অনেক চিহ্ন আঁকা ঘেমেছে চশমা কমেছে জলের দাম, চিরকুটে লেখা লোডশেডিং এর বুলি প্রেম ভালোবাসা ভাঙনেরই সৎ নাম, তাসের ভাগ্যে জোকার এসেছে হাতে জবাব ছিল না, হাসিতেই জাদুঘর কলব্রে-র থেকে নেমে আসে কোনো গাধা পিঠে বাঁধা ছিল আপোসকালীন...
একটা সাদা-কালো ছবিতে আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি রক্তকরবী! যদিও আমার কল্পনা কোনো অবয়বে ধরতে পারেনি সে ফুল! রঙ দিতে পেরেছে কেবল...লাল, খুব গাঢ় সমস্ত ছবিটায় ওই রঙটুুকু জানান দিয়ে বলবে ঠোঁটে অমন করে লিপস্টিক আঁকার কারণ শরীর থেকে শুকিয়ে যাবার আগে হেমন্তের শিশির ওষ্ঠে ধারণ করো... একটা কোনো ধ্রুব ইশারা তো চাই তারই জন্য এমন রক্তকরবী। তুমি নেবে? কবিরা শুনেছি ফেরায়...
অরুণ পাঠক শূন্য দশকের কবি। জন্ম ১৯৭৬ সালে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় পিতৃভিটেতে আজন্ম বসবাস। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গভাষা ও সাহিত্য- এ স্নাতকোত্তর এবং ওই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ফকিরচাঁদ কলেজ (বি.এড বিভাগ) থেকে শিক্ষক শিক্ষণ ডিগ্রিপ্রাপ্ত। শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ এগারোটি। সম্পাদিত পত্রিকা: সাহিত্যের বেলাভূমি। প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়া স্বপ্নের টুকরোগুলোই জীবন যে...