সৌমাভ
জন্ম পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন থেকে এম ফিলের পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে গবেষণারত। প্রকাশিত কবিতার বই 'যতটা না ছিলে সম্পর্কে', 'জল, জানালা ও জন্নত'।
দিল্লি ২০২০
ভারতবর্ষ কোন দিকে
(২৫ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১১টা)
আজাদ মার্কেট, আইস ফ্যাক্টরি পেরিয়ে ডানদিকে মালকাগঞ্জ ঢোকার আগেই
সবাইকে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হল,
‘উস তরফ নেহি যায়েগা ...জলদি...
সৈকত আরেফিন
শিক্ষক
বাংলা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ
পাখি
গোধূলি-গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা
নিতান্ত খেলাচ্ছলে তুমি জানতে চাইলে
প্রিয় পাখির নাম
আসন্ন সন্ধ্যার ম্লান অন্ধকারে
তোমার মুখের দিকে তাকালাম--
কত সহজ প্রশ্ন! অথচ তাতেই দিশেহারা
আমি তুমুল হাহাকারে
দীর্ণ হতে হতে পাখিটির
নাম বললাম।
পাখি আমার একলা পাখি—
পৃথিবীতে কত পাখি আছে
কত গান আছে
অথচ বুকের দিকে তাকিয়ে দেখি
গানঅলা একটি পাখিই
চুপে বসে আছে।
আমার যা কথা...
২৩শে মার্চ থেকে, বাড়িতে পাখি আসে শুধু ,
ফাঁকা ছাদে তারা চোখ মোছে –
আমাদের দেখা হয় না তবুও
সকালের আলো দেখে মনে পড়ে, চিঠি আসতো একদিন
পথে পথে লম্বা হয়ে শুয়ে থাকে ছায়া, বৃক্ষ,চরাচর
আকাশ ভরে যায় শোকময় প্রার্থনায়
বন্দরের ঘন্টা বাজে – বেজেই যায়
মুসাফির সব ফিরে গেছে বলে, শূন্য বিকেলে চৈত্র ওড়ে
একা !
খবরে...
মানিক সাহাজ্বরগালে স্পর্শ পাই। ডুবে যেতে থাকি জ্বরে। আমার কিশোর বয়স। পুটিদি ভরা নদী হয়ে পাশে বসে থাকে। ওর বাঁকগুলি দেখে মনে হয় বাঁশঝাড়ের আড়াল। মনে হয় নির্জন এক কোনে লুকিয়ে রাখা নৌকা। তোমার ঐ নৌকায় আমাকে চড়তে দেবে, কোনদিন বলতে পারিনি। অথচ আমার মাঝি হওয়ার ইচ্ছে ছিল ষোলোআনা।একদিন...
দু পাত্র ঘিয়ের মধ্যে ঢেলেছো আগুন,
দাউদাউ ফূর্তি হলো রাত থেকে ভোর,
হোমে কিংবা যজ্ঞে ভেবে তুমি হেসে খুন;
ভোরবেলা বাগানে ঢোকে দুই ফুলচোর!
হাতের ছোঁয়ায় তারা ভরে তোলে সাজি,
তুমি দেখে নিদ্রা যাও, আমি গাঁথি মালা,
বিগ্রহ কালো রঙের এবং মেজাজি,
ঘিয়ের শিশির পাশে নৈবেদ্যর থালা৷
ঘুম ভেঙে হঠাৎ তুমি হাত দিলে ওটায়,
আগুনও দাউদাউ জ্বলে ঘিয়ের...
বিনোদিনী
১
এ চাওয়া আমার আসতনা যদি আমাদের প্রেমটা পূর্ণতা পেত। না পাওয়ার একটা মায়া আছে আলাদা, যেটা কাটানো কঠিন। এরকম একটা বৃষ্টির সন্ধেবেলার জন্যে যেগুলো তোলা থাকে...
২
আমাদের কোনোদিন দেখা হবেনা একান্তে। কিন্তু যদি হতো ! ভাবতে ভাবতে মাথার ক্লিপটা আমি খুলে চুলটা উড়িয়ে দিলাম হাওয়ায়। আমরা একসাথে ভিজতাম না, ভিজলে...
ঠেলা নিয়ে হাঁক দেয় যে নাঙা কাবাড়ি
তার সঙ্গে সাঙা হলে সুখে থাকা দায়
সূর্য জলে ধোয় পুন্না, রঙের খোঁয়ারি
ঝেড়েঝুড়ে ভোরবেলা আকাশে টাঙায়
সংসার সহজ বড়, সংসার কঠিন
কাবাড়ি যে কিনে ফেরে টুটাফুটা মন
বউটি ঝালাই জানে, অগ্নিদাহে সেঁকে
বিধিমতে সারানোর করে আয়োজন
পদ্মাসনোস্থিত যোগী, দেহপদ্ম নিয়ে
রোজ ভেসে থাকে কন্যা বিবাহের জলে
আশহর দুঃখ কাঁধে কেউ ঘরে...
ক্ষতনিঃসৃত নিদ্রার ভিতর জেগে আছি,
বিভ্রম নেই
কিছু জোনাকি এসে কুড়িয়ে নিয়ে যায় যাবতীয় নীরবতার বিস্তার
দূর নক্ষত্রে সান্ত্বনা খুঁজি। প্রস্তর যুগের ছেঁড়া পালক হয়ে বেঁচে উঠি
শান্ত দেহ থেকে উঠে আসে দারুচিনি কাঠের গন্ধ
দেখি, এক শীতকাল, সর্ষে-হলুদ শাড়ি পরে
আমার জন্য দু’হাত ভরে তুলে এনেছে শুষ্ক বরফ
আমি বয়ে যায়। জৌলুসে, উত্তাপে, অজ্ঞাত অসুখবোধে
নেশা...
যেটুকু আলো এসে পড়ে রিক্সার গায়ে
আমি তার হিসেব লিখে রাখি
বিশ্বকর্মা পুজো ছাড়া আর গমগম করে না স্ট্যান্ড
ছাতিমের গন্ধে গলিপথ ভ্রমণ--
গোপনে নেশা ছাড়ানোর পোস্টার নেই
আগে-পরের মধ্যে বহুতল দীর্ঘশ্বাস
বসন্ত এসে গেলে মনে হয়
মানুষ আরো একা হয়ে গেছে!
ভালোবাসা যায় কিনা, ভালোবাসা থাকে কি, জানি না
স্মৃতির পুরোনো খামে গ্রহণের রেণু লেগে আছে
জুড়িয়েছে চোখ আর মাটি পুড়ে গেছে খোলা পায়ে
কীভাবে কাউকে, বলো, এতখানি ভালোবাসা যায়?
চোখের সামনে থেকে না-দেখার ভান করে দেখি
চোখের আড়াল হলে সে দৃশ্য সহ্য হয় না
বলি তো অনেক কথা, না-বলাটুকুই বেশি বলি
চলি ভাঙা-ভাঙা পথে, পথে পথে...
বিকেলবেলার হাওয়া এসে বলে গেল
প্রশ্রয় পেতে পেতেই কেউ উদ্ধত হয়,
তোমার কাছে আরেকটু উদ্ধত হতে চাইলাম,
সত্যযুগের এডিটর কুমুদ দাশগুপ্তর কথা লিখলাম
৭১-এর কলকাতায় গড়ের মাঠে সরোজ দত্তকে নামিয়ে দিলেন
অফিসার রুনু নিয়োগী, তারপর একটা গুলি......
প্রাতঃভ্রমণে এসে কেঁপে উঠলেন মহানায়ক।
আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ২৪মিলিমিটার ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ফোকাল লেন্স ক্যামেরায়
কানু সান্যালের ছবি তুলেছিলেন যে চিত্রগ্রাহক,...
( আঙ্গিক ঋণ; পিনাকী ঠাকুর )
এখন আছে "আর সে নেই " বাড়ি
পাশের রাস্তা দু-দিক খোলা আজও
শূন্যতা ছোঁয় টগর, বকুল,ঝাউ-ও
ও সান্তনা,তুমি এলে, তুমিও!
জানি, মা কাঁদতে পারছেন না
পিছুটানে জানলা খোলে বোন ---
"কাকাতুয়া, আই, ভুল হচ্ছে কেন ?
দাদা-ই ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত
যথারীতি মায়া-ও আঁকে ছায়া
(আমরা রইলাম সৌজন্য বোধক)
কাজ ফুরোলে পালায় সূর্যি মামা
কোথা থেকে...
তখনও তো ওরা কেউ শরীর বোঝেনি
প্রেমের গন্ধ ছিল টিউশন জুড়ে
এলোমেলো চুল তাতে লাল নীল গার্ডার
সপ্তাহে তিনদিন মন ফুরফুরে।
ওরা কেউ চেনে না কি, আদরের মায়া
শুধু বোঝে কালো শার্ট, নীল চুড়িদারে
একটুও হাত যদি লেগে যায় হাতে
দিনটা দিব্যি কাটে নচিকেতা সুরে।
এইভাবে ফেলে এসে সময়ের ক্ষত
হঠাৎ বজ্রপাত, গড়িয়ার মোড়ে
অটোর লাইনে জ্যাম, মেঘ করে...
যখন আকাশের ছবি তুলি
মানচিত্রের খন্ড খন্ড দেশ গুলোর কথা মনে পড়ে
এঁকেবেঁকে কত রেখা
ভূখণ্ড কে ভাগ করেছে দৃঢ়তার সঙ্গে
দাগের এপারে ওপারে,
কত বিভেদ, কাটাকাটি, মারামারি
অথচ আকাশে কিছুই ছাপ ফেলেনা এসব।
এখনও ভূখণ্ড নিয়ে টানাটানি হয়
কিন্তু, আকাশ নিয়ে কেউ টানাটানি করে না
কারণ, মানচিত্রে আকাশ দেখা যায় না
তাই মান্টো আকাশের গল্প বলে গেছে...
বেবী সাউমূলত কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ বনঘাঘরা, ইউথেনেশিয়া, গান লেখে লালনদুহিতা, ছয় মহলা বাড়ি, একান্ন শরীরে ভাঙো। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলের এক লুপ্তপ্রায় লোকসঙ্গীত নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গবেষণা গ্রন্থ- ‘কাঁদনাগীত: সংগ্রহ ও ইতিবৃত্ত।’ভোটঅবিশ্বাস ঘুরে ঘুরে আসে গোলচত্বরের পাশে বিপ্লবের দেহমাছি ওড়ে উৎসুক জনতা তারাক্ষোভ নেই, শান্তি নেইশুধু...
১
যা হচ্ছে তা হোক
যা হচ্ছে না তা হওয়ার বৃত্ত থেকে
খুলে খুলে পড়ছে শব্দ
মিথ্যের সত্যিরা লুকিয়ে থাকে ডানায়
সত্যির মিথ্যের জেগে থাকে বুকে....
কিছু জটিল শিরশিরানি
মানুষকে বাঁচতে দিচ্ছে গুটিপোকার মতো...
একটা দুটো সত্যি
আকস্মিক ভাগ্যের মুখে থুবড়ে পড়ে হাসে...
কান্নার এক আলোকিত জোর আছে বুকে
এখানে লুডোতে সাপ আর সাপ
সাপের শরীর ধরে মন্ত্র শিখেছি বলে
এখন আমাকে...
আর কত আলোকবর্ষ !
সকাল দুপুর মধ্য রাত
বিরামহীন চলতে হবে আমি জানিনা।
নিজের কোন লক্ষ্য নেই
আলস্য মাখা কয়েকটি ছোট বড় চোখ
ধানকুটি মাড়ানো বলদের মতো
আমায় ছুঁটিয়ে বেড়ায়
কেন আমি জানিনা।
কাঁধের জোয়ালের কথা মনে পড়লে
আমার আরও খিদে পায়
অথচ ঘুম পায়না,
ঘুমের দুয়ারে অক্লান্ত আমি...
দন্ডি কাটি কেন আমি জানিনা।
শুধু আমি এটুকু জানি যে
এসব জানার জন্যই আমি...
গৃহ
আমিও মুখ দেখি শীর্ণ ভাতের থালায়
মুখ দেখি ভাঙা স্লেটে
জেনে ফেলি বিরহী পাঠশালা,
নিঝুম মায়ের লেখা রান্নাবান্না
সমর্থিত ছোয়ের মুখোশ খুলে পাতায় আবৃত করেছি দেহ
পাতায় দ্বিমুখী টান...
এই যে পাঠশালার খেলনা, আমিও সহযাত্রী
চাঁদের প্রতিবিম্বে
আর ফিরব না জন্মকালে মুঠো শূন্য গৃহে
সেইখানে নিয়ে চলো প্রিয় কাক, যেখানে
ঝিনুকে পা কেটেছিল তোমার আমার
জঙ্গলমহল
কখনও দুই ঠেঙ ফাঁক করে...
নিমগ্ন দীঘির মুখোমুখি বসে বুনছি রুমাল
রুমালে লিখছি চিঠি পিগমিদের মতো
তোমার তানপুরায় জাল বুনে চলেছে মাকড়শা
সেই জালে সরগম সাধছে বিকেল।
বিষণ্ণ মেঘে তিরিতিরি কাঁপে খেপলির জল
সেই কম্পনে ধরে রাখতে চাইছি সুর
অপেরাঘরের মতো পদ্মপাতার জলে
সিমফনি বেজে চলে উদ্দাম চুম্বনের মতো।
জোছনা আয়না জুড়ে বেহালায় তর্পণ বাজে
জুপযন্ত্রের মতো মৃতদেহ সেলাই করেছি
তখনও কাঁপছে দেখি চোখের...