এসেছ আষাঢ় তাই, কৃষ্ণ সেজে আজ হোলিখেলা
ভিজে যাচ্ছে মাটি আর খুলে যাচ্ছে সব ঘর দোর
এতদিন ধুয়ে মুছে যা রেখেছি,
সব শুধু তোর
খসে পড়ছে পলেস্তরা,
জেনে গেছে পাড়া প্রতিবেশি
নিভৃত ঘরে আজ
বসে আছে
দুই সন্নেসী!
এসেছ আষাঢ় তাই, রাই আজ শ্যামসঙ্গ করে,
হয়েছে কলঙ্কিনী
এইবার বানপ্রস্থে যাবে…
শরীরেই মোক্ষ তার, বৈধব্যে দারুণ অনিহা
রাধা রাধা করে শ্যাম, রাই শুধু...
ছেঁকেছুঁকে লিখেছি কত না –
মাতৃকুলের অপযশ হবে,সেই ভয়ে।
গর্ভের জল ভেঙে গেলে বলেছি,
কিছু না কিছু না!
ঘর পুড়ে গেলে সেই ধোঁয়া,পোড়া মাংসের ধোঁয়া,পাকিস্তানের দিকে উড়িয়ে দিয়েছি।
কেউ আর কানাকানি করেনি আমাকে নিয়ে!
সমাজ, সংসারে,যন্ত্রণায় মরে যেতে যেতে, সেয়ানার মতো,উৎস ঘুরিয়ে দিয়েছি ধর্মতলায়,যেখানে ধর্ণায় বসেছে নরনারী।
কখনও -বা,প্রেমিকের মিছিল চলেছে –
ওরা স্রেফ বন্ধু আমার, এইমতো...
কামাল চৌধুরী | জন্ম ১৯৫৭
বাংলা ভাষার অগ্রগণ্য কবি। তাঁর কয়েকটি বইয়ের নাম এই পথ এই কোলাহল, এই মেঘ বিদ্যুতে ভরা, রোদ বৃষ্টি অন্ত্যমিল, পান্থশালার ঘোড়া ইত্যাদি। ২০১২ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার। বসবাস ঢাকায়। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন ২০১৭ সালে।
একটি দাদাবাদী কবিতা
ভেতরে ভেতরে দাদা, তুমি দাদা
ভেতরে ভেতরে পরাবাস্তব
ইটা...
স্বপ্ন যদি তর্ক করে
আমি তার দু'ঠোঁটে আঙুল
না রেখে বুঝিয়ে দেব
বাস্তবের সবক'টা ভুল;
কিন্ত ভুল ঠিক করব না।
বালির ভিতরে থাকা সোনা
গয়না হয়ে যদি ফিরে আসে
ছোট বউ গায়ে দিয়ে,
আবারও পালিয়ে যাবে
সরল বিশ্বাসে...
কবিতা তো জটিল বিষয়
অনেকের হয় না
কিন্তু কারও কারও হয়।
যার হয়, তার হাতে থালা দিয়ে বাড়ো মাছ-ভাত;
যার হয়...
একহাতে রেখেছি অপেক্ষা অন্য হাতে সময়
হাত দু'টো ছড়িয়ে রাখি...
মাঝখান দিয়ে ঝুঁকে পড়ে রোদ
ঝরে বৃষ্টি
কখনও কখনও ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে ঢেকে দেয় জ্যোৎস্না।
মাঝখানের এই শূন্যতায় অনিবার্য কল্পনা লুকিয়ে রাখি।
বেনিয়ম সারসের ডাক, গলা থেকে চুঁয়ে
মিশে যায় ঝরা ফসলের দানায় দানায়।
দ্রুতগামী ট্রেন প্ল্যাটফর্ম পার করে মাঝরাতে।
পরিকল্পনাহীন চাওয়া আর অপর্যাপ্ত পাওয়ায়
কোনও ঋতু পরিবর্তন...
কার দিকে চোখ? কোথায় তোমার মাথা?
কার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে আছে?
অমন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ভ্রমরও তো যায় না অতো কাছে!
মুখ লুকিয়ে কীসের অত হাসি?
সারাটাদিন কীসের এত মেসেজ?
নদীর জলও আয়না মুছে ফেলে
সে-ই বা কেন এমন দাঁড়ায় এসে?
এতটা ছাড় দিয়েছ কেন তুমি?
বন্ধু শুধু? বন্ধু কেমন জানি
ওর দেওয়া বই বুকের কাছে রাখো
আমি তো...
অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে
তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন।
তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে
আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে
উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী!
তোমাকে যে সাকি বলে চেনে
সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর!
যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে
সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়...
বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা
মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল,
আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা
ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল।
শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায়
হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা,
তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায়
হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা।
তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই
বলতে তো, ঘটনার...
তোমাকে দুঃখবোধে ডুবিয়ে রাখতে চাইনি। দোষ আমার! একের পর এক যে তীর আমি মেরেছি, তা এমন নির্মম হয়ে ফিরবে ভাবিনি। তুমি বুঝবে না, তোমাকে ছাড়া রাত-দিন কেমন দুর্বিষহ কঠিন ধাঁধার মতো হয়ে উঠছে। পোড়ো বাড়ির গুমোট অন্ধকার যেমন গলা টিপে ধরে পিছন থেকে। আমি হিসেব মেলাতে পারছি না। চাঁদ...
বুকের ভেতর জাহাজ ডুবেছে যত
নীরবতা নিয়ে মরে গেছি বহুবার,
আমার চোখেতে নালিশ ছিল না কোনো
হেরে যাওয়াটুকু মৃত্যুরই দাবিদার।
প্রশ্নতে ছিল অনেক চিহ্ন আঁকা
ঘেমেছে চশমা কমেছে জলের দাম,
চিরকুটে লেখা লোডশেডিং এর বুলি
প্রেম ভালোবাসা ভাঙনেরই সৎ নাম,
তাসের ভাগ্যে জোকার এসেছে হাতে
জবাব ছিল না, হাসিতেই জাদুঘর
কলব্রে-র থেকে নেমে আসে কোনো গাধা
পিঠে বাঁধা ছিল আপোসকালীন...
রিয়া চক্রবর্তীজন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায়। দুটি কবিতার বই প্রকাশ পেয়েছে ‘নিয়ন আলোর দৃশ্যরা’ এবং ‘রাই পদাবলী’। দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন।আলোর গল্পআমার পাঁজর থেকে একটা একটা করে খুলে নিচ্ছ হাড়,আর বাঁধ ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে আমার বুক ভরা স্বপ্নেরা...দু হাতের আঙুল থেঁতলে দিচ্ছো,যাতে না কোনও দিন স্ফুলিঙ্গরা দাবানল...
ব্যর্থতা বড়র দায়, শিশু কি
কখনও ব্যর্থ হয়
হামাগুড়ি দিতে দিতে উঠে দাঁড়ানোর
চেষ্টা
সেও এক এভারেস্ট জয়
আমি সেই জয়ের পতাকা
কুরুক্ষেত্রে নিয়ে গেলে মাটি থেকে
উঠে আসে চাকা
যুবতী মায়ের স্তনে
কানীন পুত্রের জিভ
বলে ওঠে,শেষ নয়,যুদ্ধ শেষ নয়।
সাউথ সিটি কলেজের সামনে ডিসেম্বরে যে বর বউ
দশটাকায় বারোটা গোলাপ দিত, মনে হতো তারা
দেবদেবী। কোন পদ্য লিখে তাদের তুষ্ট করা যেত
যদি জানতাম, তাদের জন্য লিখতাম দু এক লাইন।
আচ্ছা তুমি প্রেম বলতে কী বোঝ? হাতে হাত, ঠোঁটে
ঠোঁট, পায়ে পা, গায়ে গা... কী বোঝ তুমি? এ চরাচরে
প্রেম বলে কিছু নেই জেনে...
মানিক সাহাজ্বরগালে স্পর্শ পাই। ডুবে যেতে থাকি জ্বরে। আমার কিশোর বয়স। পুটিদি ভরা নদী হয়ে পাশে বসে থাকে। ওর বাঁকগুলি দেখে মনে হয় বাঁশঝাড়ের আড়াল। মনে হয় নির্জন এক কোনে লুকিয়ে রাখা নৌকা। তোমার ঐ নৌকায় আমাকে চড়তে দেবে, কোনদিন বলতে পারিনি। অথচ আমার মাঝি হওয়ার ইচ্ছে ছিল ষোলোআনা।একদিন...
এই দেখ মেয়ে, সামনে দেখ তাকিয়ে --
কি হ'লো, মিললো কথা ?
এবার বল তবে বুকে হাত রেখে সত্যি কথা
কবিতার সব কথা মিলে গেলো তো !
প্রথমটায় শুধুই করেছিলি অবিশ্বাস
আর আমি, বলেছিলাম তো --
জাদু আছে জাদু, দেখিয়ে ছাড়বো
দেখ তাকিয়ে, দরজা খুলে গেলো তো --
নে মেয়ে উঁকি দিয়ে দেখ ভিতরে
কী সুন্দর ঘরটা দেখ,
কতো...
অন্ধকার ছুঁয়ে ছুঁয়ে মনে মনে বারবার গঙ্গায় গিয়েছি...
ভোরবেলা অশ্রুটুকু তর্পণের ফুল
অচেনা আলোর মুখ জেগে ওঠে আকাশ গঙ্গায়
দেবী জাগে, মা প্রসীদ, ঝাঁকড়া এলোচুল
দশমহাবিদ্যা জাগে, নিধনপ্রহর শেষে
মাতৃরূপ জাগে!
নতুন আকাশ জাগে, হে শরৎ,
জেগে ওঠে পুলক ও প্রতিমা!
অন্ধকার ধুয়ে মুছে আলো আসে কল্পপারাবারে—
আলোর সমষ্টি থেকে
অশ্রুর অভূতপূর্ব সুর জাগে শ্রবণের পারে!
অতিব্যক্তিগত সেই সুর!
বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত
নিঃশব্দে বহন করি, একা
হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে
দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার
কোনো অন্তিম নেই, জানি-
তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে
একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায়
তার পিছু পিছু
একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা...
লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...
রঞ্জন ভট্টাচার্যজন্ম: ১৯৮১ সালে শ্যামনগরে।কলা বিভাগে স্নাতকপেশা: শিক্ষকতা।কাব্যগ্রন্থ: ছায়া বিকেলের ঘর (২০১৭) ডাকাডাকি ৩৫তোমাকে আজ পর্যন্ত যা যা বলেছি, বন্ধুরা সব মনোযোগ দিয়ে শুনেছে। তোমাকে সকালের সর্ষে ফুলের মধ্যে বসিয়ে রেখে গোধূলির কচুরিপানার ফুল এনে দিয়েছি। আমি আর তুমি ছোটদের সঙ্গে গোল হয়ে বসে একদিন মিডডে মিল খেয়েছি। একটা মেয়ে...
আকাশ থেকে অশ্রু ঝরে কার?
লুকিয়ে কেন মেঘের বাড়ি থাকো?
এ ভরা বাদর বিরহের কারবার
বুকের ভিতর কার ছবি তুমি আঁকো?
চিরদিন কানু মন্দিরে মোর
বনমালী তুমি ভাগ্যে নেই
এ শহর মেঘে ঘনঘটা ঘোর
বৃষ্টি মানে বুঝি তোমাকেই
যতটুকু আজ দিয়েছি ক্ষত
অশ্রুতে সব রেখেছি মেপে
নব জলধর বিজুরি যত
ফিরে দেখি অতি সংক্ষেপে
এ বরষায় তুমি একাই নাব্য
রাধিকার চোখে মনখারাপ
শুনো...
আপোষ
তোমার মুখে মুখোশ পরা— আমার মুখে মুখোশ
একটি চুমুর জন্য না হয় একটু করি আপোষ
একটু ছুঁয়ে তোমার হাত– সাবান জলে ধুই
ভ্যাক্সিন নেয়া প্রেমিক আমি; মন সেলাইয়ের সুঁই
প্রণয়ঘরে
আমি কেবল কান্না করি– যেদিন থেকে তুলো হলে! উড়ছো কেবল, ঘুরছো কেবল হাওয়ায়–হাওয়ায়— তেপান্তরে। বৃষ্টি রাতে পাই না কাছে, কুসুম কলির ঘ্রাণ উবে যায়!...