কতকিছু প্লাবিত হয়ে যায় বাবাকে দেখেছি ভাসমান নৌকোর মতো ভেসে যেতেন এঘর ওঘর, শাঁখের ধ্বনি শুনে কী ভাবে সন্ধ্যা হয়- রক্তাভ আকাশ, তাও দেখেছি। শুনেছি এই নৌকো, এই শাঁখ নাকি বংশের পরম্পরা। বাজার থেকে মরামাছ এলে হাবুডুবু খেতো উঠোনের জলে, তা দেখে বঁড়শির মতোন হাসতেন ঠাকুমা, সাদা থান ঠেলে ঝুলে পড়তো জীবনের অস্তরেখা। আমরা যারা ছোট্টো...
এই যে নিশঃব্দের ঘরে অজ্ঞাতবাস আমার একথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বাহির আমার অন্তরের থেকে অনেক দূরে বসবাস করে। তুমি আমার বাইরের মানুষটাকে ভালোবাসলে, আমার অন্তরকে খুঁজে দেখলে না। একটাই ক্ষীণ দুয়ার দিয়ে হাওয়া চলাচল করে, একটাই দুয়ার ফিরে আসার, তুমি হাওয়ার কাছে নিজেকে প্রশ্ন করো, কেন অক্ষরের বিষ আমি পান করেছি। কেনই বা আলেয়া ও অতি আলোর...
ছোটনাগপুর থেকে পথ ফিরে এলে সমতলে সমবেগে যেতে যেতে মায়া ধাক্কা দেয় উঁচু আর নিচু লাগোয়া লাগোয়া ছোটাছুটি মন নেমে আসে মন উঠে যায় হুটোপুটি সার ধীরে ধীরে গতি কমে শিথিলতা আসে চোখেমুখে চড়া রোদ, খুব শীত এইসব শীর্ষে যাওয়ার মতন উত্তেজনা থাকে না কোথাও নদী খাল ঝরনার স্ফূলিঙ্গ গায়ে এসে লাগে হাত-পা-শরীর কেঁপে ওঠে আচমকাই মনে পড়ে...
ভষ্মমাখা আমাদের আশ্রয় ১  ঘর বলতে সামান্য এই সন্তানহীন বৃক্ষের মতো পায়ের পাতার কাছে জমে থাকা শূন্যতাটুকু। শেষ রাত্রির গূঢ় অনুশোচনার মতো আজ স্তবকের পর স্তবক ভেঙে রক্ত গড়িয়ে গেল। বিষও উঠে এল কিছু। সান্ধ্য ভ্রমণের বোধহীন চিহ্নগুলি খুলে রেখেছে এক একটি স্পর্শের মতো অজানা সংলাপ। আমার জামা ছিঁড়ে গিয়ে বুকের...
ভারভারা রাও | জন্ম ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর ভারভারা রাও একজন সমাজকর্মী, প্রখ্যাত কবি, সাংবাদিক, সাহিত্য সমালোচক এবং সুবক্তা। ১৯৪০ সালের ৩ নভেম্বর তেলেঙ্গানায় তাঁর জন্ম। তাঁকে তেলেগু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সমালোচক বলে মনে করা হয়। বিগত প্রায় ষাট বছর ধরে তিনি কবিতা লিখে চলেছেন। এখানে অনুদিত ‘মেধা’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন -- তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি! আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি দেবীগন্ধ ছেড়ে...
অর্ঘ্যকমল পাত্রস্কুল পড়ুয়াবসবাস চন্দননগরে১৭ বছর বয়সবই নেইঢিল১.যতক্ষণ অনাদরে পড়ে থাকে ঢিলততক্ষণ একটি পাখিও গ্রাহ্য করে নাঅভাগার বেঁচে থাকাপাখি উড়ে যায়, মলত্যাগ করে...অথচ, তাকে হাতে তুলে নিতেইহয়ে ওঠে কাপুরুষ, চুল্লুখোর এক ঘাতক!২.যেভাবে কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাপিঠে তুলে ফেলে কাঞ্চনজঙ্ঘাসদ্যযুবা রাত জেগে পড়েচে-গুয়েভারার ডায়েরিসেভাবেই কোনো দামাল ছেলের হাতে পড়েহতাশ ঢিলও, ব্যাঙাচির খেলা দেখাতে...
শোকের কাছ ঘেঁষে অতীত নদীরা থেমে যায় আঘাত ছোঁয়াচ পেলে ভেঙে যাবে মেঘেদের বাড়ি— সেও বুঝি জল হবে, ধুলো হবে তুচ্ছ শরীর; খাঁচারা বদলে যাবে প্রতি জন্ম-অধ্যায় শেষে। কারা যে বসেছে এসে নির্বাক সময়ের কাছে একা মানুষের অন্ধকারে ঘুম আনে সমস্ত মৃতস্বর, প্রহরের অপেক্ষা শুধু— এই বুঝি সাঙ্গ হবে খেলা কীভাবে নিভে যাবে তারাদের সাবেক উৎসব। স্রোতেরা...
কার দিকে চোখ? কোথায় তোমার মাথা? কার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে আছে? অমন ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভ্রমরও তো যায় না অতো কাছে! মুখ লুকিয়ে কীসের অত হাসি? সারাটাদিন কীসের এত মেসেজ? নদীর জলও আয়না মুছে ফেলে সে-ই বা কেন এমন দাঁড়ায় এসে? এতটা ছাড় দিয়েছ কেন তুমি? বন্ধু শুধু? বন্ধু কেমন জানি ওর দেওয়া বই বুকের কাছে রাখো আমি তো...
কাবেরী নদীর তীরে আমি তাকে পাইলাম ছোট শীর্ণ গল্পগুলি, তাকে চাইলাম
যারা ঘুষি প্রাকটিস করেন তাদের বলি প্লিজ একটু কুলগাছের ছায়ায় চলে যান।লুডু নয়।দাবা খেলুন। বাংলা কবিতায় আপনি জাস্ট একটা উত্তরীয় মাত্র রোদের ভেতর বেড়াল হাঁটছে।আপনার নখে আজকাল মোমের আলো।আপনার চোখের মণিতে আমি দেখতে পাচ্ছি হাডুডু খেলার মাঠ। সমস্ত দুপুর জুড়ে যারা পরকীয়া করে।ঠোটের ওপর যাদের নেমে আসে ঢেঁকিশাকের সবুজ তাদের সাথে সেলফি তুলুন...
অরিন্দম রায় জন্ম: ১৯৮০ সালে। হাওড়ার বাসিন্দা।এখন কর্মসূত্রে মুর্শিদাবাদবাসী।ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।প্রকাশিত কবিতার বই: অষ্টধাতুর পৃথিবী,শবসাধনা, রোজনামতা, নির্বাচিত শূন্য।সম্পাদিত পত্রিকা: লালন। গীতিকাসমকাল ভরা চাতুরীইতিহাস ছিল মিথ্যেহ্যান্ডেল ভাঙা হাতুড়িফাংগাস মম চিত্তে!সকলেই ভালো চেয়েছেকেউ তো মন্দ চায় নাপেট ভরে যত খেয়েছেতত বেড়ে গেছে বায়না!মেঘের ওপরে কাকেরাউঠে ত্যাগ করে বিষ্ঠাতুমি তাকে ভাবো চন্দনতুমি তাকে ভাবো...
“in the silence behind what can be heard lies the answers we have been saerching for so long’’ Andreas fransson একটা পোকার ভোঁ ভোঁ আওয়াজ অনেকক্ষণ মাথার মধ্যে বাজছিল। খুব সহজেই ওকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে পারতাম আমি।হয়ত,সেটাই ও চেয়েছিল। গরমের দিন সন্ধেবেলায় আশ্চর্য হাওয়াটার জন্য অথবা অন্য কোনও কারণে,জানি...
সবর্ণা চট্টোপাধ্যায় | জন্ম ১৯৮৪ বসবাস বারাসাতে। কবিতার বই: চারদেওয়ালি চুপকথারা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। স্টেশন হাওয়া আসে বিছানার চাদর উড়ে যায়। শোয়ার আগে এখনও পরিষ্কার পাতি। ঝেড়ে ফেলি ছড়ানো বইয়ের গন্ধ, দুপুরের ঘাম, তোমাকে ছুঁয়ে থাকা সমস্ত জল। পুরোনো পাড়ায় আজকাল যাওয়া হয় না আর। কাঁচা মুদির দোকান, পঞ্চাশ পয়সার মৌরি লজেন্স। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সদ্য ওঠা...
অনেকদিন প্রণাম করা হয় না কাউকে, বৃষ্টির দিনে সাদা জামা পরে, ছাতা হাতে মানুষকে দেখলেই কেমন যেন মাস্টারমশাই বলে মনে হয়... কালো মেঘের মতো দুর্নীতি ছেয়ে আছে আমাদের সবার উপরে; ছুটে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, "কোন পথে যাব স্যার... এত বিভ্রান্তি, এত হাতছানি, এত অন্ধকার, কোন পথে যাব স্যার?" - "যে পথে গেলে আয়নার দিকে...
১ যা হচ্ছে তা হোক যা হচ্ছে না তা হওয়ার বৃত্ত থেকে খুলে খুলে পড়ছে শব্দ মিথ্যের সত্যিরা লুকিয়ে থাকে ডানায় সত্যির মিথ্যের জেগে থাকে বুকে.... কিছু জটিল শিরশিরানি মানুষকে বাঁচতে দিচ্ছে গুটিপোকার মতো... একটা দুটো সত্যি আকস্মিক ভাগ্যের মুখে থুবড়ে পড়ে হাসে... কান্নার এক আলোকিত জোর আছে বুকে এখানে লুডোতে সাপ আর সাপ সাপের শরীর ধরে মন্ত্র শিখেছি বলে এখন আমাকে...
তোমার চিঠির কোনও উত্তর দিইনি বলে নিকটের রাধাচূড়া বিরাগ সেধেছে গত দীর্ঘ এক ঋতু। কী বলি প্রণয়চালে? অথবা শোকের মতো অশ্বত্থের ঝুরি নামা দেখে বিগত মৃত্যুর কোনও অনুষঙ্গ মনে পড়ে যদি? স্থিতধী উদ্ভিদজন্মে কার শিকড়ের টান কার চেয়ে বেশি, এই নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হলে কার কাছে বিষমাখা এঁটো হাত পেতে কোন নামে কাকে ডাকি ময়দানে শহিদ...
সন্দ্বীপের চর বাবা নেই। মা নেই। শ্মশানের রাত। হেঁটমুণ্ড ছায়াবাহকেরা হরিধ্বনি তুলে মিশে গেল চুল্লির দ্বারে। একটা রাক্ষসী আগুন দুহাত বাড়িয়ে গিলে নিতে চায় চরাচর। কাকজ্যোৎস্নায় শিস দিতে দিতে পিশাচিনী তার পুঁজ-রক্ত-কফ রেখে গেল মাটির মালসায়। আশ্চর্য এ জীবনের কাঁথা-কানি কড়ি ও কোমল। নরম তালুতে রাখা বেলকাঁটার ভাব-ভালোবাসা। পুনর্জন্মের আশা...
সাউথ সিটি কলেজের সামনে ডিসেম্বরে যে বর বউ দশটাকায় বারোটা গোলাপ দিত, মনে হতো তারা দেবদেবী। কোন পদ্য লিখে তাদের তুষ্ট করা যেত যদি জানতাম, তাদের জন্য লিখতাম দু এক লাইন। আচ্ছা তুমি প্রেম বলতে কী বোঝ? হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট, পায়ে পা, গায়ে গা... কী বোঝ তুমি? এ চরাচরে প্রেম বলে কিছু নেই জেনে...
কথা'কে এমন করে ঠোঁটে রাখা, যেন মনে পড়ে গেছে প্রথম সাক্ষাৎ! জ্যোৎস্নায় মাতাল রাতের বাতাস বাতাসে স্রোতের ভাঙাচোরা, চাঁদ, ভাঙাচোরা বাতুলতা, যেন এ' পৃথিবী একবারে একটিই জোয়ার, একটি মাত্র আবর্তনের সাক্ষী থাকতে চায় এই অবেলায় পরিচিত সকল পূজা হারায় অর্ঘ্যের অধিকার, তবু অন্তরস্থ ঈশ্বর জাগেন! যেন এইবার সময় পক্ষ নেবার, অথচ তোমার আমার অধিকার শুধু, শুধুই নৌকা...