বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত
নিঃশব্দে বহন করি, একা
হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে
দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার
কোনো অন্তিম নেই, জানি-
তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে
একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায়
তার পিছু পিছু
একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা...
লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...
ভ্রমণ
তা হলে এমনই সন্ধ্যা লেখা ছিল বনের ভেতর
ছায়া নেমে আসে জলের মন্দির থেকে
সে ছায়ার হাত ধরে আমার ভ্রমণ শুরু হয়, এক জরায়ুর থেকে আরেক জরায়ু
মাঝখানে পাতা কাঁপে, ঝরে পড়ে দু-এক ফোঁটা জলের শরীর
সেক্সটনের মেয়ে
ভাঙাচোরা স্তনের ভেতর থেকে ভেসে আসছে এপ্রিলের আলো
একটি ক্যাথিড্রাল, পাখির ঠোঁটের মতো চূড়া
রোদ্দুর পড়েছে। তার ছায়ায়...
তোমাকে লিখিনি আমি প্রেমের কবিতা একদিনও
ওয়েব সিরিজের মতো ভেসে আসে ছবিময় শুধু
সে ছবির ক্যানভাসে ভেসে আসে মুখ মণ্ডলী
অর্ধেক কালো তার,অর্ধেক মুখোশেই ঢাকা।
প্রেমের কবিতা কেন লিখিনা প্রশ্ন করেছিলে
লিখেছি অনেক উড়ো চিঠি রোজ যাতায়াতপথে
সে সব চিঠিতে নেই স্বাক্ষর মুঠোছাপ কারও
যে হাত ধরতে গেছি সেই হাত ছেড়ে চলে গেছে ।
মাটি ভেদ করে...
ভালোবাসা যায় কিনা, ভালোবাসা থাকে কি, জানি না
স্মৃতির পুরোনো খামে গ্রহণের রেণু লেগে আছে
জুড়িয়েছে চোখ আর মাটি পুড়ে গেছে খোলা পায়ে
কীভাবে কাউকে, বলো, এতখানি ভালোবাসা যায়?
চোখের সামনে থেকে না-দেখার ভান করে দেখি
চোখের আড়াল হলে সে দৃশ্য সহ্য হয় না
বলি তো অনেক কথা, না-বলাটুকুই বেশি বলি
চলি ভাঙা-ভাঙা পথে, পথে পথে...
লহর
কীভাবে লহর চলে মেঘশঙ্খরোদে!
কীভাবে লহর চলে সম্ভাবনা ছাড়া!
ক্রমশঃ পলির দিকে ম্যাজিক সমূহ...পাখি...
পাখি...
সীমান্ত হাত পেরিয়ে যায়...ঐ যায় হুলুস্বর
হংসধ্বনি গোক্ষুরজল
যায় বেজুবান ও নৃশংস ছুরিকা
তবে এসো,কথা হোক মদিরা-শ্রমণ,
রণকৌশলের ব্যপারে তুমি কী ভেবেছিলে,
কোথায় কোথায় ঘটবে ঘনবসতি বিভ্রম?
করোজ্জ্বল
করোজ্জ্বল ভবচরাচরে তুমি হে কৃপাময় একমাত্র লিবিডো,ভর করেছো সমগ্র গগনমণ্ডলে।
ভূধরে শ্যামা ঘাস তার ফসিল হারালো, বীর্য হারালো...
কথা'কে এমন করে ঠোঁটে রাখা,
যেন মনে পড়ে গেছে প্রথম সাক্ষাৎ!
জ্যোৎস্নায় মাতাল রাতের বাতাস
বাতাসে স্রোতের ভাঙাচোরা, চাঁদ, ভাঙাচোরা বাতুলতা,
যেন এ' পৃথিবী একবারে একটিই জোয়ার,
একটি মাত্র আবর্তনের সাক্ষী থাকতে চায়
এই অবেলায় পরিচিত সকল পূজা
হারায় অর্ঘ্যের অধিকার, তবু
অন্তরস্থ ঈশ্বর জাগেন!
যেন এইবার সময় পক্ষ নেবার,
অথচ তোমার আমার অধিকার
শুধু, শুধুই নৌকা...
বাস্তুতন্ত্র
একটা নেড়ি কুত্তা সারাক্ষণ কুঁই কুঁই করছে বুকের ভিতরে
এই বুঝি বেরিয়ে এল প্রকাশ্যে
ভয় পেতে পেতে প্রতিদিন বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে
চতুর্দিকে ঘোরা বিড়ালগুলো ল্যাজ ফোলায়,ঘাড় মোটা করে ঘোরে...
একটা বাস্তু দাঁড়াশ ঢুকে আসে ঘরে
দূরে লাফিয়ে পড়ে ব্যাঙ
আর এভাবেই ব্রম্ভময় হয়ে ওঠে জগত..
তোমার ভিতরে পোষা অ্যালসিসিয়ানের ছায়া চমকে দেয় আমাকে!
বিষ
ছোট হতে...
নাবিক জলের গাথা
১
প্রাচীন নাবিক তুমি, তারও চেয়ে প্রাচীন এই যান
সময় সায়াহ্ন কাল।একটি রমণী বর্শা চিরে দিল
মাছের ওই পুংকেশর ঝাঁক।
২
সেই পাপ আদিপাপ
লাগলো এসে জলের সংসারে
জলের বিরুদ্ধভাব চাকার ঐ জটিল ঘূর্ণনে।
৩
মাঝখানে টুকরো ডেক
মেঘমনা নাবিকের ঘর
মাস্তুলের চেয়েও দীর্ঘ
তার ভাঙা ছায়ার বহর।
৪
অ্যালবাট্রস উড়া দিলে
তুমি বলো, হেমিংওয়ে
আমি কি পাব না জলে পূণ্য কড়িকাঠ!
কোর্ট চত্বর
সাদা...
বর্ষায় বাড়িঘর ভেসে যায় জাহাজের মতো।
পাখিদের জায়গায় মেঘেরা দুপুর থেকে ওড়ে।
এইসব স্মৃতিদের রেখে দেয় যারা অক্ষত,
বারবার চাইলেও ফিরতে পারে না বন্দরে।
পাটাতন ভেবে জল বাড়ির বারান্দায় জমে।
নাবিকের লংকোট কেঁপে যায় হাওয়ার দাপটে।
শরীর ধোয়ার পর যত দ্রুত আর্দ্রতা কমে,
ঘরে মেলে দেওয়া শাড়ি ততটা আপন হয়ে ওঠে।
বাতিঘর সেজে দূরে জ্বলে ওঠে শহরের...
আমার রক্তের মধ্যে আজীবন সমুদ্রের শব্দ শোনা যায়,
সমুদ্রের কাছে আমার যাওয়া হয় না খুব একটা।
তবু অফিস- বাড়ি, বাড়ি - অফিস করতে করতেই সমুদ্রের ডাক আমার শিরা উপশিরায় কোলাহল কল্লোল তুলে আসে।
প্রেমিকার ডাকের মতোই সে ডাক উপেক্ষা করা যায় না।
আকাশ অংশত
বাকিটা না হয় রইল উহ্য
ইচ্ছেমত শব্দ রেখো
অথবা চুপচাপ
সাবধানে চলাফেরা কোরো
দৃষ্টির তীক্ষ্মতা মাছের চোখের মত ক্লান্ত
কোন বাণে বিঁধবে তাকে?
শীতকাল ফিরে এলো
ভাস্করের পাতায় পাতায়
তারপর কিছু সূত্র অথবা সমীকরণ
শুধু মনে রেখো
যে পাতা ঝরল অতর্কিতে
তার আর পুনর্জন্ম নেই
যে আসবে সে নতুন কেউ!
অভিমান তোমাকে যত না ঠেলে দেয় দূরে
তার চেয়ে দূরে নিয়ে যায় রোমন্থন।
তার চেয়ে আরও যেন বিরাট-- দূরত্বের যবনিকা পড়ে
আকরিক খুঁজতে খুঁজতে খনি উজাড় ক'রে
উপড়ে আনতে মানিকমঞ্জরী!
তোমাকে যে সাকি বলে চেনে
সে তুমি পেয়ালার সখ্য নিখুঁত, অম্লমধুর!
যে তোমাকে চাঁদ তারায় গুনে দেখেছে
সে তোমার আকাশী জলে পা ধুয়ে দেয়...
বুঝতে বুঝতে শত ঋতু,...
ধীমান ব্রহ্মচারী জন্ম ১৯৮৭ সালে, মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথগঞ্জে। বাংলায় স্নাতকোত্তর। বর্তমানে আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীতে কর্মরত। কবিতা লেখালিখির পাশাপাশি প্রায় দশ বছর ধরে পত্রিকা সম্পাদনার কাজে যুক্ত। প্রথম সম্পাদিত পত্রিকা ‘কবিতা বুলেটিন’। এখন সম্পাদনা করেন মাসিক পত্রিকা ‘এবং অধ্যায়’।ছেন।বিলীনশহর থিতিয়ে পড়ে রয়েছে রক্তাক্ত রাস্তার ওপরকোথাও নির্জনতা আবার কোথাও ঝুলন যাত্রা;আর এমনই...
দিনলিপি
প্রথম প্রেমের মতো শরীরের আড়ভাঙা গূঢ় কামনার
অস্ফুট রোমাঞ্চ নিয়ে আলো ফোটে স্বপ্ন ফিকে হলে।
অতঃপর দিন কাটে মোহে ও বিস্তারে,
দিন কাটে একটানা একঘেয়ে দীর্ঘ বিনোদনে—
আরও বেশি অধুনার অবরুদ্ধ এইসব দিন—
পূত শুভ্র কিশোরী কুসুম তার বৃন্তের দৃঢ়তা
হারিয়ে যৌতুক পায় সংসারশোভন ভালোবাসা।
তুমি স্থায়ী, তুমিই সঞ্চারী।
তোমারই মহিমে গড়া শুদ্ধ এই পরাক্রান্ত রীতি।
নিভৃত রক্তের...
বাবা বলেছিল- পৃথিবী ঠাকুমার মতো সুন্দরী। ছোটকাকু বলেছিল- আমাদের গ্রামে কোনওদিন যুদ্ধ হবে না।
দুজনেই মিথ্যে বলেছিল। আমাকে বাঁচাতে?
বুড়ি দিদিমণি বলেছিলেন- অঙ্ক শেখ। সব অঙ্ক মিলবেই। জিতেন স্যর বলেছিলেন- রবীন্দ্রনাথ পড়। শান্তি পাবিই।
দুজনেই মিথ্যে বলেছিলেন। আমাকে বাঁচাতে?
যেদিন প্রথম বুঝতে পারলাম। চারজনকে আটকে ফেললাম। একটা গুহায়। ভীষণ রাগ তখন। বললাম-
কেন মিথ্যে...
হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে
রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক।
ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে
...
মিলন
বারবার দেখা হবে আমাদের
নদীর ধারে...
পাহাড়ের ঢালে...
অথবা গ্রন্থাগারের নীরবতায়
এই চরাচর ছেড়ে যাচ্ছ
যাও—
তবে মোহনায় যেও না
ওখানে নবীন পলি
রাত্রির কারণ বোঝে না
জেনে রাখো অভিমান
সফল সন্ন্যাসী কামনাসাগর পাড়ি দিয়ে
ছুটে যায় অরণ্যে, মোক্ষ লাভের আশায়
চিন্তা হয়... যদি পথ হারিয়ে ফেলো
প্যাডক গাছের ছায়ায়
নাভি ভরা তেজ পথে উগরে দিয়ে,
জলপাত্র উজাড় করে ফিরে এসো
দেখা হোক আমাদের নাগরদোলায়,
দেখা...
সূর্য, ঘোড়া
বরং এবার আলাদা রাখি সূর্য, ঘোড়ার কথা।
মাটির যে ঢাল তেষ্টা চেনে, আইঢাই খুব–
মরতে গেল জলের কাছে। সূর্য তখন
তেষ্টা দ্যাখে, আচমনে সাজিয়ে রাখে খুরের দায়ভার।
ছুটছে আড়াল, ভাসান প্রখর, ডুবছে কাঁপন,
মন্থনবোধ উঠছে অধীর– দরদাম তার খোলস শুধুই
আনকোরা দাগ রেসের আওয়াজ– সাতটা শরীর স্রোতের
ফাঁকে রশ্মি চাটে, হিসেব রাখে, কখন অনুশাসন ভুলে...
আপোষ
তোমার মুখে মুখোশ পরা— আমার মুখে মুখোশ
একটি চুমুর জন্য না হয় একটু করি আপোষ
একটু ছুঁয়ে তোমার হাত– সাবান জলে ধুই
ভ্যাক্সিন নেয়া প্রেমিক আমি; মন সেলাইয়ের সুঁই
প্রণয়ঘরে
আমি কেবল কান্না করি– যেদিন থেকে তুলো হলে! উড়ছো কেবল, ঘুরছো কেবল হাওয়ায়–হাওয়ায়— তেপান্তরে। বৃষ্টি রাতে পাই না কাছে, কুসুম কলির ঘ্রাণ উবে যায়!...
এভাবেও চলে যাওয়া যায়!
যেভাবে মেলার ভিড়ে পাঁচ বছরের ছেলেকে
কোনও দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে
বাবা দু'মিনিট আসছি বলে নিরুদ্দেশ,
যেভাবে বৌয়ের হাতে সকালের চা খেয়ে
ঘুমন্ত ছেলেমেয়েকে রেখে মর্নিং ওয়াকে গিয়ে
মানুষটা ফেরে না আর,
সেভাবেই আমাদের ফেলে চলে গেলে।
রোদ্দুরে আর অঝোর বৃষ্টিতে
আশ্রয়হীন পথ চলার
প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ও দিলে না।
এখন এত রক্তক্ষরণ,এত নিঃশব্দ শ্রাবণ নিয়ে
কী...