জানো, ভিক্ষুক এই তিনদিন
আকাশ হয়েছে, প্রভু সিন্নির
পাত্রে মিশিয়ে খেয়েছে অনেক
মায়া-প্রবন্ধ--- জানে জনে-জনে…
বিদ্বান হল দেহ-মন তাই!
প্রতিটি পাতায় সংকেত পাই
রোদ ওঠে রোদ পড়ে যায় জলে
সন্ধ্যা আসেন, প্রবন্ধ বলে:
‘আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা কর’
যত নারীস্রোত, ততদূর নর
প্রবন্ধকার তুলসি-মালিকা
আমি আশ্রিত, তিনিই চালিকা
তবু ভিক্ষুক অসম সাহসী
কাঁধে টিয়া পাখি, ডাকনাম: শশী
তিনদিন ধরে ওরা খড়কুটো
আগলে রেখেছে ঝড়ের উঠোন
বাকি...
একহাতে রেখেছি অপেক্ষা অন্য হাতে সময়
হাত দু'টো ছড়িয়ে রাখি...
মাঝখান দিয়ে ঝুঁকে পড়ে রোদ
ঝরে বৃষ্টি
কখনও কখনও ধোঁয়ার মতো মেঘ উড়ে ঢেকে দেয় জ্যোৎস্না।
মাঝখানের এই শূন্যতায় অনিবার্য কল্পনা লুকিয়ে রাখি।
বেনিয়ম সারসের ডাক, গলা থেকে চুঁয়ে
মিশে যায় ঝরা ফসলের দানায় দানায়।
দ্রুতগামী ট্রেন প্ল্যাটফর্ম পার করে মাঝরাতে।
পরিকল্পনাহীন চাওয়া আর অপর্যাপ্ত পাওয়ায়
কোনও ঋতু পরিবর্তন...
১
নীরবতার ভেতর লাল নীল সাদা
পতাকা মিছিল করে। ওড়ে । গান গায়
ঘাসে ঘাসে জলবিন্দু বৃষ্টি হয়ে ঝরে
কাচের ও পিঠে বসে থাকে
কোজাগরী চাঁদ...কে মোহ, কে ভালবাসা?
ধূলায় যে সব অন্ধকার !
২
আলুথালু বারন্দায় ছড়ানো রয়েছে
ধানের শীষের আলপনা
পাশ দিয়ে হেঁটে গেছে চকিত সংসার
দূর থেকে মনে হয় যেন, গৃহিণীর অভিমান।
ঘরের মধ্যেও তাঁর ঘর নেই, লুপ্ত...
আলো আর বৃষ্টি জড়াল
ছবিটা সরিয়ে নিলে একটা ফুলদানি হতে পারে
আলোফুল ...
আমেরিকা সাত, ইউরোপ পাঁচ, রাশিয়া সাকুল্যে চার দিন
জীবনের বাকি দিনগুলো আমি চেয়েছিলাম তোমাকে দিতে
ফোড়নের মতো দপ করে জ্বলে উঠে
তুমি, কয় মন অসন্তোষ ঢেলে দিলে...
অথচ আমাকে ধরে রাখতে চেয়েছে, সমুদ্দুর
সামুদ্রিক ফ্যানা, সে-ই আরব্যরজনী, এক একলা আকাশ
চীনের প্রাচীর
আজও দেখো রয়েছে একই
কত পর্যটক প্রতিদিন আসে যায়!
ব্যবধান গড়েছে সময়
শীতের শহরে, বস্তা, আরাম যখন
রূপকথা...
শবের পাশে সবই কেমন অর্থহীন!
শেয়ার বাজার, নিউজ পেপার,সেফটিপিন...
শবের পাশে সবই ভীষণ অর্থহীন।
ভাতের হাঁড়ি,মাসকাবারি,মুড়ির টিন,
ফার্নিশ ফ্ল্যাট,দক্ষিণে রোদ, ফলস সিলিং
পিএনপিসি, ই জেড সি সি,ব্যস্ত দিন...
সেলেব রোয়াব,ফ্যান ফলোয়ারস,লেগ পুলিং...
শবের পাশে সবই বড়ো অর্থহীন।
প্রত্যাখ্যান,প্রতিশ্রুতি অন্তহীন...
উড়োচিঠি,মন্দ কথা, ফোনের রিং...
যুদ্ধবিমান,শান্তির গান, বা পুতিন...
শবের পাশে সবই ভীষণ অর্থহীন।
ঘুমিয়ে থাকা একখানা মুখ কী কঠিন!
এক পৃথিবী হিসেব-নিকেশ অর্থহীন...
শবের...
দ্যূতসভাস্থল মধ্যে পৌঁছলেন অনিন্দিতরুচি।
বয়োবৃদ্ধ, জ্ঞানবৃদ্ধ প্রত্যেকের চোখে চোখ রেখে
নিক্ষেপিত হল তার প্রশ্নবাণ--
যিনি নিজে পরাজিত, তার অধিকার ছিল অন্যকে পণ রাখা?
এর উত্তর কী, সে তো সকলের জ্ঞাত;
ফলাফল সুদূরপ্রসারী; সে কথা বুঝতে এই সভাস্থলে জ্ঞানী-অজ্ঞানী--
অসুবিধা ছিল না কারোরই।
তবু সেই নিয়তিতে পাঞ্জাছাপ দিলেন সকলে।
আরও এক দ্যূতক্রীড়া শুরু হয়ে গেছে।
নীতি-নির্ধারক যারা, আত্মবিক্রয় করে
পণ...
অন্ধকার ছুঁয়ে ছুঁয়ে মনে মনে বারবার গঙ্গায় গিয়েছি...
ভোরবেলা অশ্রুটুকু তর্পণের ফুল
অচেনা আলোর মুখ জেগে ওঠে আকাশ গঙ্গায়
দেবী জাগে, মা প্রসীদ, ঝাঁকড়া এলোচুল
দশমহাবিদ্যা জাগে, নিধনপ্রহর শেষে
মাতৃরূপ জাগে!
নতুন আকাশ জাগে, হে শরৎ,
জেগে ওঠে পুলক ও প্রতিমা!
অন্ধকার ধুয়ে মুছে আলো আসে কল্পপারাবারে—
আলোর সমষ্টি থেকে
অশ্রুর অভূতপূর্ব সুর জাগে শ্রবণের পারে!
অতিব্যক্তিগত সেই সুর!
১
আনারকলিকে ঘিরে গাথা হচ্ছে পাথর
সেলিমের কথা বলতে গিয়ে বারবার
ধরে আসছে বাবার গলা আর ঘুমের মধ্যে
তলানি হয়ে যেতে যেতে বাদশাহের নির্দেশ
মিশে গেল লতা মঙ্গেশকরের রেকর্ডে
২
ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে একে একে নেমে যাচ্ছে
বিষণ্ণ জোকারেরা
শীতে শাস্তি পাওয়া ছেলেদের কথা ভেবে
আর ফিরবে না তারা
শুধু মরচে পড়বে উৎসব
৩
শেষপর্যন্ত দ্বিচারিতাই থেকে যায়
বিশেষত এই পাখির উড়ে যাওয়া
সূর্যাস্তের...
এই যে নিশঃব্দের ঘরে অজ্ঞাতবাস আমার
একথা আমি কাউকে বলিনি। আমার বাহির
আমার অন্তরের থেকে অনেক দূরে বসবাস করে।
তুমি আমার বাইরের মানুষটাকে ভালোবাসলে,
আমার অন্তরকে খুঁজে দেখলে না।
একটাই ক্ষীণ দুয়ার দিয়ে হাওয়া চলাচল করে,
একটাই দুয়ার ফিরে আসার, তুমি হাওয়ার কাছে
নিজেকে প্রশ্ন করো,
কেন অক্ষরের বিষ আমি পান করেছি।
কেনই বা আলেয়া ও অতি আলোর...
অযথা পায়ের তলে মাটি
সরে সরে গেছে প্রতিদিন,
হৃদয়ের দেনা-পাওনাতে,
আমিও রাখিনি কোনো ঋণ।
দু'হাতেই বিলিয়েছি সব -
যা কিছু অজড়, অব্যয়,
বেদনার দাগ মুছে গেলে,
নিষ্কাম পরে থাকে ক্ষয়।
চিরাগের আলো খুঁজে খুঁজে
প্রহরা রেখেছি প্রতিবার,
আঁধার নামার পর বুঝি,
ততোধিক দামি সংহার।
স্মৃতিরা যেটুকু রেখে যায়,
তারও বেশি যদি অভিমানী,
নিয়ত অমোঘ সংশয়ে,
আমাকেই শুধু আমি জানি।
না - ই বা থাকলো শরীর,আমার ভাবনাছবি ইতস্তত রইলো পড়ে ঝর্ণা,নদী,গ্রামের স্নিগ্ধ দীঘির মতন
ঢেউ তো ছিলোই লোকায়ত,অদৃশ্য,ভূমধ্যসাগর ভ্রু - সন্ধিতে...
রাতভর জলের ভিতরে ডুবে ডুবে যাই
খুলে যায় কত যে দরজা !
জলের দরজা বুঝি এরকম !
ডুবে যেতে যেতে কী যে ঘুম পায় !
আমি আগামীর কপাট খুলতে গিয়ে দেখি---
অবুঝ সুখেরা সব পেখম তুলেছে যেন অবিনশ্বর আলো
সে-আলোয় ভাসতে ভাসতে কত কিছু তুচ্ছ হয়ে যায় !
গাছের কোটরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা অতৃপ্তির ঘুণপোকা...
এমন কোনও বৃষ্টি নেই
এমন কোনও দৃষ্টি নেই
মেঘলা নেই যাতে
এমন কোনও ক্রান্তি নেই
এমন কোনও ভ্রান্তি নেই
ছায়ার চেয়ে গাঢ়
এমন কোনও আগল নেই
এমন কোনও বাকল নেই
বনস্পতি মায়া
এমন কোনও প্রান্ত নেই
এমন কোনও শ্রান্ত নেই
বিরহ যার আয়ু
এমন কোনও শব্দ নেই
কাল কিংবা অব্দ নেই
নিরপেক্ষ, সাদা
এমন কোনও পাত্র নেই
এমন দিবা রাত্র নেই
জলের দরে বুক
এমন কোনও ভূমিও...
তোমার চলে যাওয়ার মধ্যে
আমি সন্ধেকে সরে যেতে দেখি।
যেমন করে সরে যায় কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ
ঘোর অমাবস্যার দিকে।
সাগরের ঢেউ ফুলে ফুলে
বেলাভূমিকে পাগল করে
যে অমাবস্যায়,
তুমি চলে গেলে
সেই অমাবস্যার মতো হয়ে থাকে ঘরবাড়ি।
ঘুম থেকে উঠি
চায়ের জল চাপাতে গিয়ে
চা পাতার কৌটো খুঁজে পাই না
থাক গে, পরে খাব ভেবে
খবরের কাগজ নিয়ে বসি
সেখানে কোনও এক বউয়ের
খুনের খবর...
গৃহ
আমিও মুখ দেখি শীর্ণ ভাতের থালায়
মুখ দেখি ভাঙা স্লেটে
জেনে ফেলি বিরহী পাঠশালা,
নিঝুম মায়ের লেখা রান্নাবান্না
সমর্থিত ছোয়ের মুখোশ খুলে পাতায় আবৃত করেছি দেহ
পাতায় দ্বিমুখী টান...
এই যে পাঠশালার খেলনা, আমিও সহযাত্রী
চাঁদের প্রতিবিম্বে
আর ফিরব না জন্মকালে মুঠো শূন্য গৃহে
সেইখানে নিয়ে চলো প্রিয় কাক, যেখানে
ঝিনুকে পা কেটেছিল তোমার আমার
জঙ্গলমহল
কখনও দুই ঠেঙ ফাঁক করে...
উত্তর কলকাতার এক নিষিদ্ধ পল্লীর প্রায়ান্ধকার ঘরে
চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়
খুঁজে পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালি'র ইন্দির ঠাকরুণকে
এ যেন এক আবিষ্কার
কবি রিলকে ও ভাস্কর রদাঁর কিংবা বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের
প্রথম সাক্ষাতের মতো।
গাল তুবড়ে গেছে, শরীর ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ
আশি বছরের বৃদ্ধা চুনিবালা নিঃশব্দে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন
জীর্ণ ঘরের এক কোণে—
বলার মতো ঘটনা চলচ্চিত্রে-মঞ্চে...
পরাজিত হয়েছেন।
এর মানে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন।
দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন।
নিজেকে তীক্ষ্ণ কিরণসম্পন্ন করে তুলে
নেমেছিলেন যুদ্ধে।
লড়েছিলেন।
সর্বস্ব দিয়ে লড়েছিলেন।
এর পর এল পরাজয়।
বিপক্ষ শক্তিশালী বেশি অথবা
ভাগ্যের কোনো দুর্ভেদ্য চলন।
আপনি পরাজিত হলেন মানে
লড়ে হেরেছেন। এ তো বীরত্বের কথা।
আমি এমন অনেককে জানি যাঁরা পরাজিত হবার ভয়ে
কোনোদিন যুদ্ধক্ষেত্রেই নামেন...
হাত-বদলের হাসি আমাকে আশ্বস্ত করে নৌকা খুলে রাখে।
এবার পতন হবে: যেমন দক্ষিণা দেবে এই পরপারে
মন্ত্রোচ্চারণে কাঠের তৃষ্ণা তেমনই উজ্জ্বল হবে
অমাবস্যা ঢালা হবে শ্বেতকরবীতে
তুমি কি মাধবী ছিলে?
জলতলে অনাগত নিমগ্ন সূর্যাস্ত?
পাতাবাহারের রাতে কোমল কড়ির খেলা এমন উদিত হবে শ্রীপুষ্পসঙ্কটে
না জানি আকর্ষ তার কার কাছে ভেসে ভেসে যাবে
খুঁটে বাঁধা অভিকর্ষ--এমন আরতি...