সতীন্দ্র অধিকারীজন্ম ১৯৯২ সালে।বাঁকুড়া জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নিত্যানন্দপুরে বেড়ে ওঠা এবং বসবাস।পেশা: টিউশন! শৈশব থেকে লেখালেখির শুরু।বিষাদভাষাহীন নিঃস্তব্ধ রাত্রির মতন কারো চেয়ে চেয়েথাকতে ভালো লাগে সাতাশটা বছর!সারা রাত জেগে কি করে মানুষেরা শাদা পাতায়মহাজাগতিক শূন্যতা আর শূন্যতার ভিতরলিখে রাখা সেই সব হাহাকারগুলি।একদিন রিখটার স্কেলও চৌচির হয়ে ছড়িয়ে পড়বেমেঝের ওপর।...
নির্জন জন্মভিটেয় কে বাজায় বাঁশি! পাখি ডাকে, মামি ডাকে আমার জীবন ডাক উপেক্ষা করেনি। পুবের তেঁতুল গাছ ডাকে, বলে, 'শোনো, পোড়ো রান্নাঘরে চন্দ্র ভেদ করে।' চাঁদের কিনারা ঘেঁষে নেমে আসে কবুতর, হোগলা বনে জোঁক। ফ্যানা ভাত ডাকে কেন? বহুদিন খাওয়া হয়নি। শীত এসে গেল ব্যর্থ হব কি এবারও! জন্ম ভিটে ডেকে চলে কেউ নেই বুঝি। মাটি কি নরম হল? সে কৃষ্ণমৃত্তিকা রক্ত মেখে প্রতীক্ষায়। তাকে আনো, তুলে...
১ যা হচ্ছে তা হোক যা হচ্ছে না তা হওয়ার বৃত্ত থেকে খুলে খুলে পড়ছে শব্দ মিথ্যের সত্যিরা লুকিয়ে থাকে ডানায় সত্যির মিথ্যের জেগে থাকে বুকে.... কিছু জটিল শিরশিরানি মানুষকে বাঁচতে দিচ্ছে গুটিপোকার মতো... একটা দুটো সত্যি আকস্মিক ভাগ্যের মুখে থুবড়ে পড়ে হাসে... কান্নার এক আলোকিত জোর আছে বুকে এখানে লুডোতে সাপ আর সাপ সাপের শরীর ধরে মন্ত্র শিখেছি বলে এখন আমাকে...
আমি আজ বড়ই একা প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি ফুলের ঘ্রাণে মাতাল করেছে আমার মনন বাতাস এসে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বুকের ওড়না তারপর? এক কাপ চা খেয়ে যা শান্তি পাই তোমাদের আপ্যায়নে তা পাই না হাজারো অভিযোগ মেনে নিয়েও যখন ভালোবাসি ভুলে যাই পূর্বের সকল কথোপকথন তারপর? কৃষ্ণচূড়া ফুল দিয়ে পথ ঢেকেছি, হাঁটছি না দাঁড়িয়ে আছি, অপেক্ষায় আছি ঢেউ এসে...
এই দেখ মেয়ে, সামনে দেখ তাকিয়ে -- কি হ'লো, মিললো কথা ? এবার বল তবে বুকে হাত রেখে সত্যি কথা কবিতার সব কথা মিলে গেলো তো ! প্রথমটায় শুধুই করেছিলি অবিশ্বাস আর আমি, বলেছিলাম তো -- জাদু আছে জাদু, দেখিয়ে ছাড়বো দেখ তাকিয়ে, দরজা খুলে গেলো তো -- নে মেয়ে উঁকি দিয়ে দেখ ভিতরে কী সুন্দর ঘরটা দেখ, কতো...
যথেষ্ট ব্যথার দেনমোহর দিয়ে তোমার ঋণ চুকিয়েছি কি? কত অশ্রুর মুক্তো দানা গুনে গুনে বটুয়াতে ভরতে হয় খাজানা চুকিয়ে দিতে, বলো মহাকাল? তবুও পরোয়া নেই। তুমি বল। বলতে থাকো। হাঁকো নীলামের দস্তুর। আমি সব কর্জ, দায়, ঋণ পাই পাই চুকিয়ে দেব। আনা, দুই আনা, অর্থ, অনর্থের মূলে শুধে দেবো ধার। পাতো হাত। অঞ্জলিতে পান্না চুনি...
জিরাফের পায়ে জল দিতে দিতে গলা লক লক করে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ভাবে, এই তার দেশ ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ... আমার পায়ের নীচে পাথরের জমি আমার জমির পাশে হাড় কঙ্কাল জিরাফ দেখেছে তাকে! সে কি আজ ভুলে গেছে মায়াময় নদী ভুলে গেছে ধ্যান রত সাধুর আদেশ! ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ...
পিকাসোর ছবি একই পথে সব গল্পেরই শেষ বস্তুত একটাই গল্প মাঠের মাঝে তৈরি হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন। শুধুমাত্র মনে হচ্ছে বদলে যাচ্ছে ; মাঠের চারিদিকে বিভিন্ন উচ্চতার ঘিরে আছে যে বাড়িগুলো সেগুলোর বিভিন্ন ছাদ থেকে কেউ দেখছে কান কেউবা একটা চোখ কেউবা নাকের পাশ অথবা মাথার পেছন তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের ওপর চোখ ঢাকা পড়ে যাওয়া কান ছাদের গুঞ্জন শোনার জন্য উঠে আসছে আর একটি...
একটা সাদা-কালো ছবিতে আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি রক্তকরবী! যদিও আমার কল্পনা কোনো অবয়বে ধরতে পারেনি সে ফুল! রঙ দিতে পেরেছে কেবল...লাল, খুব গাঢ় সমস্ত ছবিটায় ওই রঙটুুকু জানান দিয়ে বলবে ঠোঁটে অমন করে লিপস্টিক আঁকার কারণ শরীর থেকে শুকিয়ে যাবার আগে হেমন্তের শিশির ওষ্ঠে ধারণ করো... একটা কোনো ধ্রুব ইশারা তো চাই তারই জন্য এমন রক্তকরবী। তুমি নেবে? কবিরা শুনেছি ফেরায়...
  অন্য জন্মে ফিরে আসি যদি, মানুষ নয় আর। মানুষের নামে ধিক্কার ধিক্কার। পরজন্মে স্কারলেট ম্যাকাও হবো আমি। নীল পিঠে লাল পালক জ্বলজ্বল করবে, আর, ওপরের হলুদ ডানার কিনারে সবুজ রঙ লেগে থাকবে। দীর্ঘ সময় উড়ে বেড়াবো আমি এপ্রান্ত ওপ্রান্ত। আমার ঠোঁটগুলো সাদা হবে, আর, ডগাটি কালো। বাঁকা ঠোঁটে আমি অগ্রাহ্য করে যাবো পৃথিবীর যাবতীয় আঁচড়। পরজন্মে আমি মানুষ হবো না আর। মানুষ নষ্ট...
দেবীপক্ষ, মায়ের বোধন--- তারপর, সবাই বলল দেবী বিসর্জন--- এ তো বড় পুণ্যের! আসলে, লোকনিন্দা-সামাজিকতা হল মুখ্য- গল্পের আড়ালে রয়েছে সাজানো গল্প--- সর্বংসহা দেবী সাজানোর! পান থেকে চুন খসলো বাজলো উলু ধ্বনি, শাখ আর বিসর্জনের বাদ্যি মুহূর্ত অপেক্ষা, সব শান্ত সব শব্দ পরিণত হল শবে নীরব দর্শক দেখল--- আহা! আহা! বলে দেবীর পুণ্য বিসর্জনে দিল হাত তালি তারপর ফিরে গেল যে যার...
বেদনা, পরমসত্য তীরে এসে ডুবে যাবে তরী বেদনা, পরমসত্য এর উপর আর কথা নেই বেদনা, পরমসত্য পথে চলবে, সে তোমার সাথে চলবে না অথচ আরোগ্য সে-ই, দূরে বসে একমাত্র সে-ই পরিত্রাণ বেদনা তাকেই পালটা দোষ দাও, যত ভুল একমাত্র তার সেও তো তোমায় চেনে, সেও জানে পাতা উলটে পরে চলে যাওয়া বেদনা পরমসত্য, এর কোনও শেষ নেই বলতে...
আলমবাজার গঙ্গার ঘাটে যেদিন কবিতা পড়েছিলাম বারোজন শিব নিথর বসে শুনেছিলেন অশ্বত্থের পাতায় পাতায় বেজেছিল মৃদু মুগ্ধতা দক্ষিণেশ্বর ঘাটে যেদিন পড়ছিলাম নৌকো এসে পছন্দের শব্দগুলো পৌঁছে দিয়েছিল মন্দির থেকে মঠে রতন বাবুর ঘাটে কবিতাপাঠের দিন মৃণ্ময় ঠাকুর হঠাৎ বলে উঠেছিলেন -- তুই শালা কবিতা দিয়ে একটা নাভি বানা দেখি! আহিরীটোলায় কবিতার ফাঁকে ভেসে যেতে দেখেছি দেবীগন্ধ ছেড়ে...
অনেক অশান্ত নদী পেরিয়ে এসেছে নিস্তব্ধতা অনেক ঘুমহীন রাত পেরিয়ে আসে জানলা পৃথিবীর মতো সুখী হতে চাওয়া চাতক দম্পতি চঞ্চুতে চঞ্চু ঠেকায়, তবু রাত আনচান ঘুমের রক্তাক্ত স্বপ্নেরা একমুঠো বুকেতে হানে আগুন অভয় দেয় পৃথিবী তবু চিলেকোঠা ছেড়ে মাটি খুঁজি, অর্থভেদ করি, তাড়াও খাই ঘুমহীন রাতে কিন্তু বিশ্বাস করার মতো কোনো অমৃতের ডাল ছিলনা কখনো। তাই দুহাত...
ট্রেন যত এগোচ্ছিল গধনি পেরিয়ে ততই কমছিল মানুষের তাড়া, ট্রেনে ওঠা-নামার, দৌড়ে জায়গা ধরার.... জানালার ধারের সিট , তাতেও গা নেই । কানিমহুলি স্টেশন থেকে উঠল ,একই মন্ত্র জানা অনেক সোদর ; নামবে গালুডিতে, হেঁটে যাবে স্বর্ণরেখার তীর ধরে । সুবর্ণরেখাকে ওরা স্বর্ণরেখা বলে । ফেরার সময় ছোটো লাল লাল শোলবাচ্চার পুরো চাকটাকে জল থেকে পিঠে তুলে...
কথা বেড়ে দিচ্ছে স্ত্রী বেকার স্বামীর থালায় এমন রেসিপির বিকল্প কিছু নেই বনের শেয়াল, শহরের নেড়িকুত্তা সকলে বুঝতে পারছে আজ কবি-র বাড়িতে রান্না হচ্ছে প্রেম
প্রথম দিনেই কি প্রেমে পড়া যায়? আমি তো পড়িনি। মনে পড়ে সেই অগোছালো দিন টা ভর বিকেলে বটের তলায় দাঁড়িয়ে তুমি, আমার অপেক্ষায় বিমগ্ন। প্রথম দেখার এক অস্থিরতা দুজনাতেই। সামনে এলে কি বলবো তা নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা, সকাল থেকেই। ভাবনা প্রসূত কিছুই ঘটেনি সেদিন । কোনরকম ইস্ত্রি হীন চুড়িদারটা পড়েছি বিহ্বলতার কবলে পড়ে রাস্তার পাথরে হোঁচট খাওয়া— জুতোটাও গেল...
( আঙ্গিক ঋণ; পিনাকী ঠাকুর ) এখন আছে "আর সে নেই " বাড়ি পাশের রাস্তা দু-দিক খোলা আজও শূন্যতা ছোঁয় টগর, বকুল,ঝাউ-ও ও সান্তনা,তুমি এলে, তুমিও! জানি, মা কাঁদতে পারছেন না পিছুটানে জানলা খোলে বোন --- "কাকাতুয়া, আই, ভুল হচ্ছে কেন ? দাদা-ই ছিল রবীন্দ্র সঙ্গীত যথারীতি মায়া-ও আঁকে ছায়া (আমরা রইলাম সৌজন্য বোধক) কাজ ফুরোলে পালায় সূর্যি মামা   কোথা থেকে...
আকাশ সংযত হয়ে নেমে এলো ছাদে অপার মহিমা দেখি ছড়িয়ে রয়েছে মহিমা শব্দের যত আলো তাও এসে এখানে ছড়ালো... শুধু ভাবি— জীবন কি ভরা শুধু বিষে সামনের ভেজা কার্নিশে কনুই নামিয়ে রেখে দূরান্তরে তাকিয়ে থাকার পর ভাবি এখানে বাবার পাশে মা-ও যেন আছে আকাশ রয়েছে তার কাছে৷
ছেঁকেছুঁকে লিখেছি কত না – মাতৃকুলের অপযশ হবে,সেই ভয়ে। গর্ভের জল ভেঙে গেলে বলেছি, কিছু না কিছু না! ঘর পুড়ে গেলে সেই ধোঁয়া,পোড়া মাংসের ধোঁয়া,পাকিস্তানের দিকে উড়িয়ে দিয়েছি। কেউ আর কানাকানি করেনি আমাকে নিয়ে! সমাজ, সংসারে,যন্ত্রণায় মরে যেতে যেতে, সেয়ানার মতো,উৎস ঘুরিয়ে দিয়েছি ধর্মতলায়,যেখানে ধর্ণায় বসেছে নরনারী। কখনও -বা,প্রেমিকের মিছিল চলেছে – ওরা স্রেফ বন্ধু আমার, এইমতো...