রাধার ছিল শতেক ঘোড়া, জিনপরানো
একলাপথে হাঁটছে তবু, রাজকুমারি
পথ পাথরে বেবাক তাকে ভুলিয়ে দিল
তারও আছে চকমেলানো রাজার বাড়ি।
কৃষ্ণকিশোর মাঠ চিনেছে ঘাট চেনেনি!
যে ঘাট বেয়ে নামছে সিঁড়ি রূপসায়রে
কে দিল তার বাঁশির বাতাস, চুম্বনে স্বাদ
কেউ কি জানে? রঙ-বেরঙে কুৎসা ওড়ে
আজকে যখন কৃষ্ণরাজের কলটি নড়ে,
মিথ্যে তাকে 'ধর্ম' নামে উঠছে ডেকে!
বাঁশির ফুঁয়ে দেশপ্রেমের ওড়ায়...
নিবিড় নিঃসঙ্গ হয়ে যাও
এখনো ভিড়ের মাঝে ?
কেন? কতটুকু ব্যথার ঘ্রাণ পেয়েছো কোলাহলে?
গা থেকে কিশোরীগন্ধ মুছে দিয়ে
অরণ্যে যাও, আলিঙ্গন করে এসো গাছ
শিখে নেবে কত বড় বড় কাজ শান্তভাবে
নীরবে নিভৃতে করা যায়।
সেইক্ষণে
মনও ভরে যাবে ফুল ফল পাখির কূজনে।
ফিরে এসো জনসভা থেকে
ফিরে এসো ভিড় থেকে
বুকে থাক অরণ্যের পাতার মর্মর ধ্বনি
এখনো ভিড়ের মাঝে...
সুবীর বোসবহু পত্রিকায় তাঁর কবিতা ও গল্প প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত বই: আঙুলের সংলাপ, ভাঙা কলমের আন্তরিকে।ছায়া যুদ্ধমধ্যবিত্ত শেষ বিকেলে শুনেছি সংলাপআমি তো বেশ ভালোই আছি আমার গূঢ় পাপঅনুদ্ধারে দিব্যি আছি তোমার কথা বলোআমি এখন ছায়া যুদ্ধে ভীষণ টলোমলোএকাই হাঁটি অমনস্ক পাহাড় নদী ভুলেকারণ জানি আমার পাপে দোষ লেগেছে ফুলেএবার...
অর্কেস্ট্রা শোনার পরে বেঁচে ওঠে, এই গ্রামে নাকি রয়ে গেছে এমন যুদ্ধজাহাজ কারখানা
বৃষ্টি শেষে শুনশান চারদিক, রাস্তা জুড়ে হেঁটে চলেছেন ভ্যান গঘ আর বিটোফেন
চোখ থেকে স্বপ্ন খসে পড়ে, আলোহীন সম্পর্কের কথা ভাবি
মাথা নিচু জানুয়ারি সরে গিয়ে দাঁত বসাচ্ছে চরম ফেব্রুয়ারি
নাবিক ফিরেছে ঘরে সুতোকাটা ডিমের উল্লাসে, প্রতিটি বন্দরে জমানো হতাশা...
নির্জন জন্মভিটেয় কে বাজায় বাঁশি!
পাখি ডাকে, মামি ডাকে
আমার জীবন ডাক উপেক্ষা করেনি।
পুবের তেঁতুল গাছ ডাকে,
বলে, 'শোনো, পোড়ো রান্নাঘরে
চন্দ্র ভেদ করে।'
চাঁদের কিনারা ঘেঁষে
নেমে আসে কবুতর,
হোগলা বনে জোঁক।
ফ্যানা ভাত ডাকে কেন?
বহুদিন খাওয়া হয়নি।
শীত এসে গেল
ব্যর্থ হব কি এবারও!
জন্ম ভিটে ডেকে চলে
কেউ নেই বুঝি।
মাটি কি নরম হল?
সে কৃষ্ণমৃত্তিকা
রক্ত মেখে প্রতীক্ষায়।
তাকে আনো, তুলে...
মানুষকে কতটুকু জানো তুমি ?
কী এমন জানো ?
মানুষ তো সাজানো বাগানও
তছনছ করে দিয়ে
চলে যায় দূরে
কোনও বনে
ভিড়ের ভেতরে থেকে কেউ যা শোনে না
সে তা শোনে
মানুষ তো ভরা বরিষণে মাঝ নদী
পেরোতে পেরোতে একা একা
গল্প হয়ে যায়
তুমি শোনো
গল্প থেকে হয় ইতিহাস
যা কিছু বাস্তবে নেই
সেই মাটি সেই জল...
দিনগুলি অতি দীন, হীন তবু ক্ষীণ আশা
মুছে যাবে একদিন দিবসের তেলকালিঝুল,
আততায়ী মেঘ ভেঙে রৌদ্রের ফিরে আসা
ভেঙে দেবে স্বৈরীর দম্ভের যাবতীয় ভুল।
শিখিনি কাতর হতে ভয়-ত্রাসে নব নব শঙ্কায়
হৃদয়নন্দনবন ফুলে-পল্লবে আছে ভরা,
তবু জেগে বসে থাকি, দিন যায় লবডঙ্কায়
হাওয়া এসে কানে কানে করে যায় মশকরা।
তোমার কথা বাবা, ভুলতে পারিনা কিছুতেই
বলতে তো, ঘটনার...
উত্তর কলকাতার এক নিষিদ্ধ পল্লীর প্রায়ান্ধকার ঘরে
চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়
খুঁজে পেয়েছিলেন 'পথের পাঁচালি'র ইন্দির ঠাকরুণকে
এ যেন এক আবিষ্কার
কবি রিলকে ও ভাস্কর রদাঁর কিংবা বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণের
প্রথম সাক্ষাতের মতো।
গাল তুবড়ে গেছে, শরীর ঝুঁকে পড়েছে সামনের দিকে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ
আশি বছরের বৃদ্ধা চুনিবালা নিঃশব্দে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন
জীর্ণ ঘরের এক কোণে—
বলার মতো ঘটনা চলচ্চিত্রে-মঞ্চে...
তোমাকে দুঃখবোধে ডুবিয়ে রাখতে চাইনি। দোষ আমার! একের পর এক যে তীর আমি মেরেছি, তা এমন নির্মম হয়ে ফিরবে ভাবিনি। তুমি বুঝবে না, তোমাকে ছাড়া রাত-দিন কেমন দুর্বিষহ কঠিন ধাঁধার মতো হয়ে উঠছে। পোড়ো বাড়ির গুমোট অন্ধকার যেমন গলা টিপে ধরে পিছন থেকে। আমি হিসেব মেলাতে পারছি না। চাঁদ...
নাবিক জলের গাথা
১
প্রাচীন নাবিক তুমি, তারও চেয়ে প্রাচীন এই যান
সময় সায়াহ্ন কাল।একটি রমণী বর্শা চিরে দিল
মাছের ওই পুংকেশর ঝাঁক।
২
সেই পাপ আদিপাপ
লাগলো এসে জলের সংসারে
জলের বিরুদ্ধভাব চাকার ঐ জটিল ঘূর্ণনে।
৩
মাঝখানে টুকরো ডেক
মেঘমনা নাবিকের ঘর
মাস্তুলের চেয়েও দীর্ঘ
তার ভাঙা ছায়ার বহর।
৪
অ্যালবাট্রস উড়া দিলে
তুমি বলো, হেমিংওয়ে
আমি কি পাব না জলে পূণ্য কড়িকাঠ!
কোর্ট চত্বর
সাদা...
হাঁসের ডানার ছায়ায় কেমন রহস্যময় মনে হয় সবকিছু।এই মাঠ প্রান্তরের ভেতর ধান লুকিয়ে
রাখছে ইঁদুর।নদীতে ভেসে আসা কাঠের বন্দুক।
ঘোড়া হারানো সেই বিষন্ন জোতদারের কথা খুব মনে
...
সূর্য, ঘোড়া
বরং এবার আলাদা রাখি সূর্য, ঘোড়ার কথা।
মাটির যে ঢাল তেষ্টা চেনে, আইঢাই খুব–
মরতে গেল জলের কাছে। সূর্য তখন
তেষ্টা দ্যাখে, আচমনে সাজিয়ে রাখে খুরের দায়ভার।
ছুটছে আড়াল, ভাসান প্রখর, ডুবছে কাঁপন,
মন্থনবোধ উঠছে অধীর– দরদাম তার খোলস শুধুই
আনকোরা দাগ রেসের আওয়াজ– সাতটা শরীর স্রোতের
ফাঁকে রশ্মি চাটে, হিসেব রাখে, কখন অনুশাসন ভুলে...
আলোর মতো রাত্রি নামে, উপচে পড়ে ঘর,
স্বপ্ন জুড়ে জাগল কি মর্মর?
চাঁদের মতো হাঁড়ির ভিতর গান ধরেছেন তাপ,
খিদের ছায়া মারল এসে ঝাঁপ।
ঝাঁপ দিয়েছে হাজারো চোখ, ঝাঁপ দিয়েছে দেশ,
এক হাঁড়িতেই মস্তানি সব শেষ।
যুদ্ধ কেবল অন্ধকারের, যুদ্ধ কেবল নিজের।
যত হারজিত খিদের রক্তবীজে।
আলোর মতো রাত্রি নামে - পরনে রাজবেশ
হাঁড়ির ভেতর, জলের ভেতর ফুটছে...
ভালোবাসা যায় কিনা, ভালোবাসা থাকে কি, জানি না
স্মৃতির পুরোনো খামে গ্রহণের রেণু লেগে আছে
জুড়িয়েছে চোখ আর মাটি পুড়ে গেছে খোলা পায়ে
কীভাবে কাউকে, বলো, এতখানি ভালোবাসা যায়?
চোখের সামনে থেকে না-দেখার ভান করে দেখি
চোখের আড়াল হলে সে দৃশ্য সহ্য হয় না
বলি তো অনেক কথা, না-বলাটুকুই বেশি বলি
চলি ভাঙা-ভাঙা পথে, পথে পথে...
পিকাসোর ছবি
একই পথে সব গল্পেরই শেষ
বস্তুত একটাই গল্প
মাঠের মাঝে
তৈরি হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন।
শুধুমাত্র মনে হচ্ছে বদলে যাচ্ছে ;
মাঠের চারিদিকে বিভিন্ন উচ্চতার
ঘিরে আছে যে বাড়িগুলো
সেগুলোর বিভিন্ন ছাদ থেকে
কেউ দেখছে কান কেউবা একটা চোখ
কেউবা নাকের পাশ অথবা মাথার পেছন
তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখের ওপর চোখ
ঢাকা পড়ে যাওয়া কান
ছাদের গুঞ্জন শোনার জন্য
উঠে আসছে আর একটি...
তোমার পিছুটানে লেগে আছে গাঢ় নিশীথ
তবু তুমি গোপনীয় বলে এঁকে ফেলেছো শরীরের মূর্ছনা
অথচ রোমাঞ্চ ভেঙে বহুজন্মের বিষাদ জেগে আছে,আজন্মকাল
কিন্তু সরোদের কম্পন এসব ঘটনায় ভোরের কুয়াশা, নন্দনতত্ত্ব
এবারে আমার মিশে যাওয়ার পালা
যেন অদূরে আলোর আভাস উদীয়মান সারাক্ষণ
এসেছি, প্রেম অতীত বলে তুলে দিই আদিগর্ভ স্পর্শ
সঙ্গে শেষ সমুদ্রস্নানে লেগে থাকা নিয়ন আলো
জীবনের সহজ...
বিকেল-আকাশে ‘দৃষ্টিপ্রদীপ ’ উপন্যাসের
আশ্চর্য মেঘেরা
শেয়ালদাস্টেশনের থেকে বনগাঁলোকাল ছেড়ে দিল …
ভিড় কামরায় কে আমি , কে সীতা, কে যে দাদা , কে বা পাগল -হয়ে -যাওয়া বাবা আর
ছেঁড়া -শাড়ি- পরা মা আমার ?
ট্রেনের হু হু - হু হু- হু হু - জানলা
গুমা- বিড়া- হাবড়ার বিড়িটানা চাঁদ হারমোনিয়াম বাজিয়ে রসের ভিয়েন...
অরিন্দম রায়
জন্ম: ১৯৮০ সালে। হাওড়ার বাসিন্দা।এখন কর্মসূত্রে মুর্শিদাবাদবাসী।ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।প্রকাশিত কবিতার বই: অষ্টধাতুর পৃথিবী,শবসাধনা, রোজনামতা, নির্বাচিত শূন্য।সম্পাদিত পত্রিকা: লালন। গীতিকাসমকাল ভরা চাতুরীইতিহাস ছিল মিথ্যেহ্যান্ডেল ভাঙা হাতুড়িফাংগাস মম চিত্তে!সকলেই ভালো চেয়েছেকেউ তো মন্দ চায় নাপেট ভরে যত খেয়েছেতত বেড়ে গেছে বায়না!মেঘের ওপরে কাকেরাউঠে ত্যাগ করে বিষ্ঠাতুমি তাকে ভাবো চন্দনতুমি তাকে ভাবো...
১
তোমাকে লিখবো ভাবি
তুমি থেকে সম্বৎসর খসে গেলে
নাম না জানা আশীর্বাদ দাউদাউ জ্বলেছিল
আমাদের মাটি ও দিনাঙ্কে
তারপর একটি একাকী মন্ত্র
ঝরে পড়ল বিবাহের গায়ে
তুমি মৃদুতর হলে
আমি যৎসামান্য হলাম
তোমার অপলকের ভেতর
পলক পলক জল তুললাম
তোমার ভেতর চাঁদ স্বচ্ছ হলে
আমি বাহারী নাও নিয়ে
সাতটি জন্মের অনুপম, ঘরবাদলার কথাকন্না,
লুকোচুরির বৃষ্টি দেখে এলাম
তুমি স্বাদ ছুঁয়ে দেখো, গ্রহণের সূত্র...