আকাশ অংশত বাকিটা না হয় রইল উহ্য ইচ্ছেমত শব্দ রেখো অথবা চুপচাপ সাবধানে চলাফেরা কোরো দৃষ্টির তীক্ষ্মতা মাছের চোখের মত ক্লান্ত কোন বাণে বিঁধবে তাকে? শীতকাল ফিরে এলো ভাস্করের পাতায় পাতায় তারপর কিছু সূত্র অথবা সমীকরণ শুধু মনে রেখো যে পাতা ঝরল অতর্কিতে তার আর পুনর্জন্ম নেই যে আসবে সে নতুন কেউ!
ঠেলা নিয়ে হাঁক দেয় যে নাঙা কাবাড়ি তার সঙ্গে সাঙা হলে সুখে থাকা দায় সূর্য জলে ধোয় পুন্না, রঙের খোঁয়ারি ঝেড়েঝুড়ে ভোরবেলা আকাশে টাঙায় সংসার সহজ বড়, সংসার কঠিন কাবাড়ি যে কিনে ফেরে টুটাফুটা মন বউটি ঝালাই জানে, অগ্নিদাহে সেঁকে বিধিমতে সারানোর করে আয়োজন পদ্মাসনোস্থিত যোগী, দেহপদ্ম নিয়ে রোজ ভেসে থাকে কন্যা বিবাহের জলে আশহর দুঃখ কাঁধে কেউ ঘরে...
আকাশ সংযত হয়ে নেমে এলো ছাদে অপার মহিমা দেখি ছড়িয়ে রয়েছে মহিমা শব্দের যত আলো তাও এসে এখানে ছড়ালো... শুধু ভাবি— জীবন কি ভরা শুধু বিষে সামনের ভেজা কার্নিশে কনুই নামিয়ে রেখে দূরান্তরে তাকিয়ে থাকার পর ভাবি এখানে বাবার পাশে মা-ও যেন আছে আকাশ রয়েছে তার কাছে৷
গায়ে মাটি বনের মধ্যে বুড়ো শরৎকাল চারপাশে তার উড়ে বসল পাখির চতুষ্পাঠী মহালয়ার গল্প শোনো এইখানে কৈলাস রাত্রি-ভোরে উঠেছে সব বয়স্ক গাছেরা তাই দেখে আজ জলের ধারা প্রথমে ডাকেনি অথচ চাঁদ ফাটল যখন মেহগনির শাখে জ্বরে কাঁপছে সবেমাত্র সন্তানসম্ভবা রিকশাচালক রহিমচাচার স্কুল-পড়ুয়া মেয়ে পাড়ায় হাসছে, বাড়ির লোকেও মেনে নেয়নি, তাই আত্মহত্যা করতে এলো নদীর নীচু বাঁকে? দৌড়ে গেল কাঠবিড়ালি...
তোমার চলে যাওয়ার মধ্যে আমি সন্ধেকে সরে যেতে দেখি। যেমন করে সরে যায় কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ ঘোর অমাবস্যার দিকে। সাগরের ঢেউ ফুলে ফুলে বেলাভূমিকে পাগল করে যে অমাবস্যায়, তুমি চলে গেলে সেই অমাবস্যার মতো হয়ে থাকে ঘরবাড়ি। ঘুম থেকে উঠি চায়ের জল চাপাতে গিয়ে চা পাতার কৌটো খুঁজে পাই না থাক গে, পরে খাব ভেবে খবরের কাগজ নিয়ে বসি সেখানে কোনও এক বউয়ের খুনের খবর...
বাস্তুতন্ত্র একটা নেড়ি কুত্তা সারাক্ষণ কুঁই কুঁই করছে বুকের ভিতরে এই বুঝি বেরিয়ে এল প্রকাশ্যে ভয় পেতে পেতে প্রতিদিন বুকের রক্ত হিম হয়ে আসে চতুর্দিকে ঘোরা বিড়ালগুলো ল্যাজ ফোলায়,ঘাড় মোটা করে ঘোরে... একটা বাস্তু দাঁড়াশ ঢুকে আসে ঘরে দূরে লাফিয়ে পড়ে ব্যাঙ আর এভাবেই ব্রম্ভময় হয়ে ওঠে জগত.. তোমার ভিতরে পোষা অ্যালসিসিয়ানের ছায়া চমকে দেয় আমাকে! বিষ ছোট হতে...
সৈকত ঘোষরূপকথা নয়ঘটনাটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে,পৃথিবীর সব সম্পর্ক একটা জায়গায় এসে শেষ হয়নিজেকে গোপন করলেঅনুশোচনা বাড়ে মাত্রঘটনাটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারেজোয়ারের পর যেমন ভাঁটা আসেতেমনি তোমার লাবন্য খুঁজিদীর্ঘ বৃষ্টির পরসিনেমা থেকে উঠে আসা চরিত্রগুলো ঘুরপাক খায়আমি জীবিত,মৃত্যু লিখি ...জরাসন্ধের বিছানাভূ-ত্বকের নীচে ক্রমাগত বিস্তার পাচ্ছে অধিকারবোধআমাদের জামাগুলো...
মাটির যাবতীয় দুঃখঘর আমাদের ব্যর্থতা সাতসকালে গান গেয়ে যে মাঝি চলে গেছে আলোর দুয়ার দিয়ে ঝরনা রোদের পাতায় পাতায় তাকে দেখেনিকো কেউ দুঃখদুয়ারে যাদের রোজ নামতা মুখস্থ তারা তার পায়ের শব্দ শুনেছিল গিঁট খোলা নেই বলে যারা বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে তারা মাঝরাতে স্বপ্ন দেখেছিল কুয়াশায় ঢেকেছিল সবগুলো খোড়ো চাল চাঁদ ফুটো হয়ে জ্যোৎস্নার জল এসে ধুয়ে...
মৌসুমী মুখোপাধ্যায়জন্ম সত্তর দশকের প্রথমার্ধে। শিক্ষা ইংরেজি সাহিত্যে এম এ। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয় শুকতারা পত্রিকায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থ শামুকজন্ম। অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ -বিষণ্ণ দাবার কোর্ট, তোমার ইঙ্গিত বুঝি, পুর্বপুরুষের ছায়া, নক্ষত্রবাড়ি, খাদের কিনারে একা। ২০১৫ সালে বনলতা পুরস্কার, ২০১৬ সালে অমিতেশ মাইতি স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৭ সালে নতুন কৃত্তিবাস পুরস্কার পেয়েছেন।উদাসীন...
কোন অনুতাপ বা অভিযোগ ছাড়াই আমি এঁকে ফেলি চাঁদ, চুম্বন আর মরণাপন্ন বেহালা তুলির টানে সম্পূর্ণ করি নদীর বাঁক, মন্দার বন এই ক্যানভাস আর গৃহস্থালি আমি মেলাতে পারিনা সমস্ত দিনের শেষে নোনাধরা দেয়াল, হয়তো বা অনায়াসে ছেড়ে চলে যাই ভাঙনের শহর... তোমারও কি মনে পড়ে পুরুষালি ভ্রমণকাহিনী সূর্যাস্তের মুহূর্ত, গানের কলি, জৈব রসায়ন রোদের নামতা, ছায়ার নামতা,...
বিসর্জনের পর বিষাদের সাথে মদ খেতে যাই                                                                                     ...
জিরাফের পায়ে জল দিতে দিতে গলা লক লক করে আকাশের মেঘ ছুঁয়ে ভাবে, এই তার দেশ ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ... আমার পায়ের নীচে পাথরের জমি আমার জমির পাশে হাড় কঙ্কাল জিরাফ দেখেছে তাকে! সে কি আজ ভুলে গেছে মায়াময় নদী ভুলে গেছে ধ্যান রত সাধুর আদেশ! ধুলো মেখে পরে আছে আমার স্বদেশ...
এই সেই গলি এইখানে বাঁয়ে বেঁকে কী সরু কী সরু,দুদিকে দোকান গাড়ি ঢোকে না, হাতে হাতে ধরে… তারপর সেই মুখ, সাধ না মেটা দেখা অঙ্গে বস্ত্র নেই জলস্নান জলস্নান কে? কে? কে? কে খায়নি নুন? মাসি পিসি কাকা জ্যাঠা আত্মীয়কুটুম শুধু মেয়ে বলে সে— মুখে দেবে না আগুন?
একটা সাদা-কালো ছবিতে আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি রক্তকরবী! যদিও আমার কল্পনা কোনো অবয়বে ধরতে পারেনি সে ফুল! রঙ দিতে পেরেছে কেবল...লাল, খুব গাঢ় সমস্ত ছবিটায় ওই রঙটুুকু জানান দিয়ে বলবে ঠোঁটে অমন করে লিপস্টিক আঁকার কারণ শরীর থেকে শুকিয়ে যাবার আগে হেমন্তের শিশির ওষ্ঠে ধারণ করো... একটা কোনো ধ্রুব ইশারা তো চাই তারই জন্য এমন রক্তকরবী। তুমি নেবে? কবিরা শুনেছি ফেরায়...
সুবীর সরকার জন্ম ১৯৭০ সালে। বেড়ে ওঠা উত্তর জনপদের কোচবিহার শহরে। নয়ের দশকে কবিতা লিখতে এসেছেন। ভিন্নধর্মী গদ্যও নিয়মিত লিখে থাকেন। বেশ কয়েকটি কবিতা ও গদ্যের বই রয়েছে। লেখা পড়া আর হাটগঞ্জের ভিতর ঘুরে বেড়ানোর যাপনেই মেতে থাকেন। প্রকাশিত হয়েছে একাধিক কবিতার বই।বাহান্নঘর কলোনি থেকেবাহান্নঘর কলোনি থেকে আমি আর্তনাদ তুলেএনেছিজোড়া...
দেশভাগ সম্পত্তিটুকু ভাগ হল একদিকে হাঁড়িপাতিল, রঙিন মাছের আঁশটে গড়িয়ে পড়া জল নুনের ভাড় হেঁসেলের ধোঁয়া, অন্যদিকে স্মৃতিজ্বলা মুখ ও হৃদয়ের বিভূতি শ্যামবর্ণ ধূসর চৌকাঠ আর নরোম জ্যোৎস্না। কিছু আত্মকেন্দ্রিক মানুষ অনতিক্রম্য মাতাল হাওয়া বন্ধক রাখে চণ্ডাল বিচারকের দুই হাতে। এইভাবে চুরমার ভস্মছাই হয় পুতুল সংসার, নির্মাণের হাতিয়ার ভেঙে পড়ে আর্তচিৎকারে; সম্পত্তিটুকু তখনো দূরে দাঁড়িয়ে গোপন মুদ্রায় জাগে এক অনভিপ্রেত সকাল! কান্নার দাগ...
ধ্রুব মুখোপাধ্যায়বিশ্বাসবিশ্বাস – হাঁটে, চলে, গাছে চড়ে চাঁদ খায়।তারপর বিড়ালের মতো ঘাস খোঁজে।ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে নদীর জলেবাতাসের আবদার শোনে চোখ বুজে।বিশ্বাস - মৃত আত্মার মতো দেহ খায়।চুপিসারে বিষ মেশায় চাঁদে,মৌচাক ভাঙার ধোঁয়া নিয়ে তাড়া করে,বিশ্বাস, কাঁচা মাংস, নাৎসি-ইহুদি দিয়ে রাঁধে।কঙ্কালের চোখে জল দেখবে বলেকাঁদানে গ্যাসের মতো, আজন্ম অপেক্ষা...
তোমার চিঠির কোনও উত্তর দিইনি বলে নিকটের রাধাচূড়া বিরাগ সেধেছে গত দীর্ঘ এক ঋতু। কী বলি প্রণয়চালে? অথবা শোকের মতো অশ্বত্থের ঝুরি নামা দেখে বিগত মৃত্যুর কোনও অনুষঙ্গ মনে পড়ে যদি? স্থিতধী উদ্ভিদজন্মে কার শিকড়ের টান কার চেয়ে বেশি, এই নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হলে কার কাছে বিষমাখা এঁটো হাত পেতে কোন নামে কাকে ডাকি ময়দানে শহিদ...
না - ই বা থাকলো শরীর,আমার ভাবনাছবি ইতস্তত                          রইলো পড়ে ঝর্ণা,নদী,গ্রামের স্নিগ্ধ দীঘির মতন ঢেউ তো ছিলোই লোকায়ত,অদৃশ্য,ভূমধ্যসাগর                                    ভ্রু - সন্ধিতে...
বুকের মধ্যে শ্বাপদ অতীত নিঃশব্দে বহন করি, একা হর্ষে-বিষাদে, এমনকি রবিবার, এমনকি সঙ্গমক্ষণে দীর্ঘ, নিষিদ্ধ এই অন্ধকার যাত্রার কোনো অন্তিম নেই, জানি- তবু; যদি কোনোদিন পথ ভুল ক'রে একটি শাদা মার্জার, ঢুকে পরে, এই অতিকায় শুন্যতায় তার পিছু পিছু একটি ভোরের দ্বারে উপনীত হতে পারি, এতটুকু আলোর শুশ্রূষা... লোভে, লোভে, আত্মমুখী পুরুষের...